বিশ্ব

মিয়ানমারে নির্বাচন: ভোটে ব্যাঘাত ঘটালে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড!

Advertisement

মিয়ানমারে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ঘিরে আবারও বিতর্ক তৈরি হয়েছে। দেশটির সামরিক জান্তা প্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইং ঘোষণা দিয়েছেন, যেকোনো মূল্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তবে ভোট প্রক্রিয়ায় কেউ ব্যাঘাত ঘটালে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে, এমনকি মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে শাস্তি।

নির্বাচনে কঠোর অবস্থানে সেনাপ্রধান

রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও শান্তি কমিশনের বৈঠকে মিন অং হ্লাইং বলেন, “মিয়ানমারের জনগণকে ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ দিতেই এ নির্বাচন। যারা সহিংসতা করবে বা ভোটে বাধা দেবে, তাদের জন্য কঠোর শাস্তির বিধান রাখা হবে।” তিনি স্পষ্ট করেন, নির্বাচনী সহিংসতা বা ভোট বিঘ্নিত করার যে কোনো প্রচেষ্টার জন্য দ্রুত বিচার প্রক্রিয়া চালু করা হবে।

সংঘাতপূর্ণ রাজ্যে সামরিক অভিযান

নির্বাচনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জান্তা বাহিনী বিশেষ করে রাখাইন, কায়িন ও চিন রাজ্যে সামরিক অভিযান জোরদার করেছে। সূত্র জানায়, সম্প্রতি কায়িন রাজ্যের মিয়াওয়াডি জেলায় রকেট হামলায় বহু ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়। এতে গ্রাম ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন শত শত মানুষ। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, এসব অভিযান সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে।

ভোট প্রক্রিয়ায় নতুন আইন ও মৃত্যুদণ্ডের হুমকি

মিন অং হ্লাইংয়ের ঘোষণার পরেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে নতুন আইন। এই আইনে বলা হয়েছে, নির্বাচনে জালিয়াতি, সহিংসতা বা ভোটগ্রহণে বাধা দিলে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। সমালোচকরা বলছেন, এই আইনের মাধ্যমে জান্তা সরকার আসলে ভিন্নমত দমন ও বিরোধী শক্তিকে ভয় দেখাতে চাইছে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া: সমর্থন ও বিরোধিতা

মিয়ানমারের আসন্ন নির্বাচন নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। চীন ও রাশিয়া প্রকাশ্যে জান্তা সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছে। সীমান্ত নিরাপত্তার স্বার্থে ভারত ও থাইল্যান্ডও তাদের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখছে।
অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, মালয়েশিয়া ও ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশ নির্বাচনকে “ছদ্ম নির্বাচন” আখ্যা দিয়ে এর সমালোচনা করেছে। জাতিসংঘ জানিয়েছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন সম্ভব নয়।

অং সান সুচি ও জান্তা শাসনের শুরু

২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে অং সান সুচির নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। এরপর থেকে দেশটিতে চলছে টানা জরুরি অবস্থা। গত বছর জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার করে জান্তা সরকার নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা দেয়। তবে বিরোধী দলগুলো বলছে, নির্বাচনের নামে সেনাবাহিনী ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে চাইছে।

মানবাধিকার লঙ্ঘন ও উদ্বেগ

মানবাধিকার সংস্থাগুলো অভিযোগ করেছে, সেনাবাহিনী শিশুদের আটক করে নির্যাতন করছে এবং বন্দিশিবিরে যৌন সহিংসতার মতো ভয়াবহ ঘটনা ঘটাচ্ছে। এছাড়া নির্বিচারে বোমাবর্ষণ ও গ্রাম ধ্বংস করার কারণে লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কর্মীরা আশঙ্কা করছেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এই সহিংসতা আরও বাড়তে পারে।

বিশ্লেষকদের মতামত

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, নির্বাচনকে ঘিরে জান্তা সরকারের এমন কঠোর অবস্থান আসলে নিজেদের টিকে থাকার কৌশল। জনগণের আস্থা না থাকায় তারা ভয় দেখিয়ে নির্বাচন নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে। তবে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে, মৃত্যুদণ্ডের মতো শাস্তি আরোপ করে কি একটি গণতান্ত্রিক নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করা সম্ভব?

শেষ কথা 

মিয়ানমারের আসন্ন নির্বাচন দেশটির ভবিষ্যৎ রাজনীতির জন্য একটি বড় মোড়। তবে কঠোর আইন, সামরিক অভিযান এবং মৃত্যুদণ্ডের হুমকি গণতান্ত্রিক পরিবেশ গড়ে তোলার বদলে উল্টো সংকটকে গভীর করছে। আন্তর্জাতিক মহলও নজর রাখছে—এই নির্বাচন কি সত্যিই জনগণের মত প্রকাশের সুযোগ দেবে, নাকি এটি হবে কেবল আরেকটি রাজনৈতিক নাটক?

এম আর এম – ০৯০০, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button