ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ৩১৭ জন, সবচেয়ে বেশি বরিশালে

গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে নতুন করে ৩১৭ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। চলতি বছর ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৫ জনে।
দেশজুড়ে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ক্রমেই উদ্বেগজনক হয়ে উঠছে। বরিশাল বিভাগে আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। যদিও আজ নতুন করে কোনো মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি, তবে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সতর্কতা জরুরি।
কোথায় কতজন আক্রান্ত
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৬ জুলাই সকাল ৮টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩১৭ জন। এর মধ্যে বরিশাল বিভাগে একাই ভর্তি হয়েছেন ১২৭ জন, যা সর্বাধিক।
অন্যান্য বিভাগগুলোর চিত্র:
- চট্টগ্রাম বিভাগে: ৭০ জন
- ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশন ব্যতীত): ৫২ জন
- ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন: ২৬ জন
- ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন: ২২ জন
- খুলনা বিভাগে: ১৩ জন
- ময়মনসিংহ বিভাগে: ৭ জন
বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগে ভর্তি আছেন মোট ১,২২৮ জন রোগী। এর মধ্যে ৩৪৯ জন ঢাকায় এবং ৮৭৯ জন ঢাকার বাইরের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
চলতি বছরের পরিসংখ্যান
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত সারা দেশে ডেঙ্গুতে মোট ভর্তি রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২,২৭১ জনে। তার মধ্যে শুধু জুলাই মাসেই ভর্তি হয়েছেন ১,৯৭৫ জন।
বাকি মাসগুলোর চিত্র:
- জানুয়ারি: ১,১৬১ জন
- ফেব্রুয়ারি: ৩৭৪ জন
- মার্চ: ৩৩৬ জন
- এপ্রিল: ৭০১ জন
- মে: ১,৭৭৩ জন
- জুন: ৫,৯৫১ জন
এই সংখ্যাগুলো থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়, বর্ষা মৌসুমে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গেই ডেঙ্গুর প্রকোপ মারাত্মক হারে বেড়েছে।
ডেঙ্গুতে মৃত্যুর পরিসংখ্যান
চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মোট ৪৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে:
- ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন: ২০ জন
- বরিশাল বিভাগ: ১২ জন
- চট্টগ্রাম বিভাগ: ৪ জন
- ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন: ৩ জন
- খুলনা ও রাজশাহী বিভাগ: ২ জন করে মোট ৪ জন
- ময়মনসিংহ ও ঢাকা বিভাগ (সিটি করপোরেশন ছাড়া): ১ জন করে মোট ২ জন
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মৃত্যুর হার তুলনামূলকভাবে কম থাকলেও আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ভবিষ্যতে মৃত্যুঝুঁকি আরও বাড়তে পারে।
কেন বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা
স্বাস্থ্যখাত বিশ্লেষকদের মতে, ডেঙ্গু ছড়ানোর প্রধান কারণ এখনও অপরিবর্তিত:
- অপর্যাপ্ত মশক নিধন কার্যক্রম
- বৃষ্টির পানিতে জমে থাকা স্থায়ী জলাবদ্ধতা
- জনগণের মাঝে সচেতনতার অভাব
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন কয়েক দফা মশা নিধনের কার্যক্রম শুরু করলেও তা পর্যাপ্ত নয় বলে অভিযোগ উঠেছে নাগরিকদের কাছ থেকে।
ভবিষ্যৎ আশঙ্কা ও প্রস্তুতি
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং সিটি করপোরেশনগুলো মশা নিধনে একাধিক পরিকল্পনা হাতে নিলেও ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আরও ব্যাপক ও সমন্বিত উদ্যোগ জরুরি। বিশেষজ্ঞদের মতে, জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাড়া ডেঙ্গুর মতো মশাবাহিত রোগ মোকাবিলা কঠিন।
“ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হলে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে”—স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র
কী হতে পারে সামনের দিনগুলোতে?
বর্ষাকাল জুড়ে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ার সম্ভাবনা থাকে। সরকারি প্রচেষ্টা, নাগরিক সচেতনতা, এবং নিয়মিত পরিবেশ পরিচ্ছন্নতা ছাড়া এ রোগ নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। আগামী দিনগুলোতে হাসপাতালগুলোর প্রস্তুতি এবং মাঠপর্যায়ে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে না পারলে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে।
তবে প্রশ্ন হলো, এবার কি সময় থাকতে থাকতেই রোধ করা যাবে আরও বড় বিপর্যয়?
এম আর এম – ০১৮৬, Signalbd.com