বাংলাদেশ

বাগেরহাটে কোটি টাকার গুদাম লুট, প্রহরী-শ্রমিক জিম্মি ৮ ঘণ্টা

বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলায় ঢাকাখুলনা মহাসড়কের পাশে অবস্থিত হ্যামকো গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ‘এনজিন মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজ’ নামের একটি গুদাম থেকে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সজ্জিত দুর্ধর্ষ ডাকাতদলের হাতে কোটি টাকার মালামাল লুটের ঘটনা ঘটেছে। গত শুক্রবার (৪ জুলাই) রাত ৮টা থেকে শনিবার ভোর ৪টা পর্যন্ত প্রায় আট ঘণ্টা পর্যন্ত গুদাম চত্বরে জিম্মি হয়ে থাকা নিরাপত্তা প্রহরী ও শ্রমিকদের বেধে রেখে এই ডাকাতির ঘটনা ঘটে, যা এলাকার ব্যবসায়িক ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে এক ব্যাপক উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।

ডাকাতদলের নির্মম পরিকল্পনা ও ঘটনাবলী

প্রত্যক্ষদর্শী শ্রমিকদের বয়ানে জানা যায়, শুক্রবার সন্ধ্যায় প্রায় ১৫ থেকে ২০ জন মুখোশধারী দুর্ধর্ষ ডাকাত নিরাপত্তা প্রহরীদের অস্ত্রের মুখে ভয় দেখিয়ে কোম্পানির গুদামের ভিতরে প্রবেশ করে। তারা সাতজন নিরাপত্তাকর্মী এবং চারজন শ্রমিককে বেধে ফেলে। এরপর দীর্ঘ আট ঘণ্টা তারা গুদামের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান রেখে চুরির সুযোগ হাতছাড়া করেনি। সেখান থেকে তারা ১৫ টন অ্যালুমিনিয়াম বার, আড়াই টন তামার স্কার্প তার এবং এক টন বৈদ্যুতিক তামার তার মালামাল দুটি ট্রাকের মাধ্যমে চুরি করে নিয়ে যায়।

ডাকাতরা দেশের তৈরি দেশীয় অস্ত্র ব্যবহার করায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা ধ্বংসের পাশাপাশি স্থানীয় জনসাধারণের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। মালামাল গুলো গুদামে ছিল কোম্পানির কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহারের জন্য, যা এই লুটপাটের ফলে প্রতিষ্ঠান এবং এলাকার শিল্পখাতের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে বলে মনে করা হচ্ছে।

প্রতিষ্ঠানের প্রতিক্রিয়া ও স্থানীয় পুলিশ তদন্ত

হ্যামকো গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের জেনারেল ম্যানেজার (অপারেশন) মো. সিদ্দিকুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, দুই দিনের ছুটির কারণে শ্রমিকরা সন্ধ্যায় কারখানা ত্যাগ করেছিল। কিন্তু রাত ৮টার সময় ডাকাতরা নিরাপত্তাকর্মীদের ভয় দেখিয়ে গুদামে প্রবেশ করে এবং আট ঘণ্টা ধরে অবস্থান করে। ভোর ৪টার দিকে তারা মালামাল নিয়ে পালিয়ে যায়।

ফকিরহাট মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুর রাজ্জাক মীর বলেন, তারা ভোর ৫টার দিকে পুলিশ ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তিনি জানান, ‘আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি এবং তদন্ত শুরু করেছি। আমরা এখনো ডাকাত দলের সদস্যদের ধরতে ব্যস্ত রয়েছি। যারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। তবে, আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে কর্তৃপক্ষের মামলা করার পর।’

বাগেরহাট ও ফকিরহাটে নিরাপত্তা সংকট

বাগেরহাট ও ফকিরহাট অঞ্চলে সাম্প্রতিককালে বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসী ও চুরি, ডাকাতি বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে এই ঘটনার গুরুত্ব আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। ব্যবসায়ী ও শ্রমিকেরা নিরাপত্তার জন্য উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। তারা আশা করছেন, পুলিশ ও প্রশাসন দ্রুত এই ঘটনাটির সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

এই ঘটনা দেশের শিল্প খাতের জন্য হুমকি

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে শিল্প ক্ষেত্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বিশেষ করে হ্যামকো গ্রুপের মতো প্রতিষ্ঠান দেশীয় কাঁচামাল দিয়ে বৈদ্যুতিক তার, অ্যালুমিনিয়াম বার ও তামা প্রভৃতি উৎপাদন করে দেশের শিল্প উন্নয়নে অবদান রাখে। এই ধরনের চুরি ও ডাকাতি দেশের শিল্প খাতকে ভয়ানকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। গুদামে দীর্ঘ সময় ধরে থাকা মালামাল লুট হওয়ায় প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের উৎপাদন কার্যক্রমে বড় ধরনের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে, যা কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের আহ্বান

স্থানীয় ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা আশা করছেন, এ ধরণের ঘটনা আর ঘটবে না। এজন্য প্রশাসনকে গুদাম, কারখানা ও শিল্প অঞ্চলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। পাশাপাশি, প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হলে এ ধরনের ঘটনা কমে আসবে। নিরাপত্তাকর্মীদের প্রশিক্ষণ ও উন্নত অস্ত্র সরবরাহের মাধ্যমে তাদের কার্যকর রক্ষা নিশ্চিত করা যেতে পারে।

সমাধান ও ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ

সরকারি ও স্থানীয় প্রশাসনকে জরুরি ভিত্তিতে শিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিরাপত্তা মান উন্নত করতে হবে। আধুনিক সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন, নিয়মিত পুলিশ пат্রোল ও নিরাপত্তাকর্মীদের আধুনিকায়ন এই ক্ষেত্রে প্রয়োজন। তাছাড়া, স্থানীয় জনগণকেও সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে, যাতে তারা সন্দেহজনক কার্যকলাপের দ্রুত খবর পুলিশ বা প্রশাসনকে দিতে পারে।

সম্প্রসারিত পর্যালোচনা ও তথ্য

বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে গুদাম ও কারখানা লুটপাটের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। বিশেষত, দেশের দক্ষিণাঞ্চলের শিল্প এলাকায় এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখা যাচ্ছে। বাগেরহাট, খুলনা, যশোর, খুলনা অঞ্চলের শিল্পাঞ্চলগুলোতে নিরাপত্তা সংকট গম্ভীর আকার ধারণ করছে। শিল্প মালিক ও শ্রমিকরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।

এ বিষয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তারা টিম গঠন করে অভিযান অব্যাহত রেখেছে। ইতোমধ্যে কিছু সন্দেহভাজনকে আটক করা হলেও ডাকাত দলের মূল সদস্যদের ধরতে অভিযান তীব্র করা হয়েছে। এছাড়া, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অপরাধীদের মূল স্হানগুলোতে অভিযান পরিচালনা করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button