বাংলাদেশ

আশুরা ২০২৫, তাজিয়া মিছিলে ডিএমপি’র নিরাপত্তা নির্দেশনা

মুসলিম সমাজের অন্যতম শ্রদ্ধেয় শোকের দিন পবিত্র আশুরা উদযাপনের প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে। আসন্ন ১০ মহররম উপলক্ষে রাজধানী ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) ঘোষণা করেছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা, যাতে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে তাজিয়া মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। এইবারের মিছিলে কোনো ছুরি, তরবারি, দাহ্য পদার্থ বা আতশবাজির ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

ডিএমপির কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও নিষেধাজ্ঞা

গত বৃহস্পতিবার সকালেই রাজধানীর লালবাগ হোসাইনি দালান প্রাঙ্গণে এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির ভারপ্রাপ্ত কমিশনার মো. সরওয়ার জানালেন, তাজিয়া মিছিলে ছুরি, তরবারি, লাঠিসোতা, পটকা বা আতশবাজি বহন বা ব্যবহার করা যাবে না। তিনি আরো বলেন, ‘তাজিয়া মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা যেন কোনো ধরনের ধাতব বা দাহ্য পদার্থ না নিয়ে আসে।’

ডিএমপির পক্ষ থেকে মিছিলের রুটে তিন স্তরের নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হবে। পাশাপাশি নানা জায়গায় চেকপোস্ট স্থাপন, পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন এবং বিশেষ ক্যামেরা ও সাইবার পেট্রোলিংয়ের মাধ্যমে নজরদারি করা হবে।

নিরাপত্তার জন্য বিশেষ ইউনিট ও আধুনিক প্রযুক্তি

ভারপ্রাপ্ত কমিশনার মো. সরওয়ার জানান, কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের ডগ স্কোয়াডসহ বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী দায়িত্ব পালন করবে। এছাড়া, মিছিলের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হবে, যা রিয়েল টাইমে নজরদারি চালাবে। ইমামবাড়াগুলোর আশেপাশে এবং পার্শ্ববর্তী উঁচু ভবনেও সাদা পোশাক ও ইউনিফর্মধারী পুলিশ সদস্যরা সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন।

যানজট কমাতে নগরবাসীর প্রতি বিশেষ অনুরোধ

ডিএমপি আরও জানায়, তাজিয়া মিছিলের সময় যানজট এড়াতে মিছিলের পথের আশেপাশের এলাকায় যান চলাচল সীমিত থাকবে। তাই নগরবাসীর কাছে অনুরোধ করা হয়েছে, তারা সম্ভব হলে ওইসব এলাকা এড়িয়ে চলুন। এই প্রস্তুতি যেন গাড়ি ও মানুষের সুষ্ঠু চলাচল নিশ্চিত করতে সহায়তা করে।

হোসাইনি দালান কমিটির প্রস্তুতি ও সমর্থন

হোসাইনি দালান ইমামবাড়া ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য মীর জুলফিকার আলী বলেন, ‘ডিএমপির নির্দেশনা মেনে আমরা শিডিউল অনুযায়ী সব আচার অনুষ্ঠান পালন করব। সরকার আমাদের নিরাপত্তা আশ্বাস দিয়েছে, যা আমরা পূর্ণভাবে গ্রহণ করছি।’

আশুরার তাৎপর্য ও ঐতিহ্য

১০ মহররম, পবিত্র আশুরা মুসলিম উম্মাহর জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ একটি দিন। এই দিনটি হজরত হুসাইন (রা.) ও তাঁর সহযোদ্ধাদের কারবালার যুদ্ধে শাহাদাতের স্মৃতিতে পালন করা হয়। বিশ্বজুড়ে শিয়া ও সুন্নি সম্প্রদায়ের মুসলমানরা এই দিনে শোক, প্রার্থনা এবং বিভিন্ন ধর্মীয় আয়োজন করে থাকেন। বাংলাদেশের প্রতিটি বড় শহর ও গ্রামে আশুরার মিছিল ও তাজিয়া সম্প্রীতির প্রতীক হয়ে উঠে।

তাজিয়া মিছিলের ঐতিহ্য ও গুরুত্ব

বাংলাদেশে তাজিয়া মিছিল পবিত্র আশুরার অন্যতম প্রধান আচার অনুষ্ঠান। এটি কারবালার শহিদদের স্মরণে একটি ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা, যেখানে রঙিন কাগজ, কাঠ ও অন্যান্য উপকরণ দিয়ে তাজিয়া তৈরি করে মিছিলের মাধ্যমে বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় বহন করা হয়। এই মিছিলে সাধারণ মানুষ শোক প্রকাশ করেন, বেদনার সুরে করুণাময় কোরআনী পাঠ ও মজলিস আয়োজন করা হয়।

নিরাপত্তা বিধিমালা কঠোর পালন কেন জরুরি?

গত বছরগুলোতে তাজিয়া মিছিলের সময় নিরাপত্তার অভাবে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটার খবর পাওয়া গেছে। ছুরি, তরবারি, আতশবাজি ব্যবহার জনসমাগমে বিপদের কারণ হতে পারে। তাই ডিএমপি এবার কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করে মিছিলে ঝুঁকি এড়াতে চায়।

ডিএমপির প্রস্তুতি ও জনসচেতনতা

ডিএমপি জানায়, আশুরার দিন রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পুলিশ মোতায়েনের পাশাপাশি অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও কাজ করবে। এছাড়া জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বার্তা প্রচার করা হচ্ছে।

সুষ্ঠু ও নিরাপদ আশুরা উদযাপনের লক্ষ্যে নাগরিক দায়িত্ব

ডিএমপি ও স্থানীয় কমিটি আশা করছে, সকল অংশগ্রহণকারী জনসাধারণ তাদের নির্দেশনা মেনে চলবেন। নিরাপত্তা বিধিমালা মানা, অবৈধ বস্তু বহন না করা এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখা আশুরার সার্থক উদযাপনের জন্য অত্যন্ত জরুরি।

আগামী ১০ মহররম পবিত্র আশুরা উপলক্ষে ঢাকা মহানগর পুলিশের কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থায় এবার তাজিয়া মিছিলে ছুরি, তরবারি, লাঠিসোতা, আতশবাজি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ডিএমপি চেকপোস্ট, ক্যামেরা ও বিশেষ ইউনিট মোতায়েন করবে। হোসাইনি দালান কমিটি শৃঙ্খলা মেনে অনুষ্ঠান পরিচালনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। নগরবাসীর জন্য যানজট এড়ানোর আহ্বান জানানো হয়েছে। নিরাপত্তার এই ব্যবস্থার মাধ্যমে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ আশুরা উদযাপনের লক্ষ্যে কাজ চলছে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button