ডেঙ্গুতে আরও একজনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৩৫৮ জন

দেশে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ৩৫৮ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। এই উদ্বেগজনক তথ্য দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম।
ডেঙ্গু পরিস্থিতির সাম্প্রতিক অবস্থা
বুধবার সকাল ৮টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্তদের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরিসংখ্যান অনুযায়ী বরিশাল বিভাগে সর্বোচ্চ ১৫০ জন রোগী ভর্তি হয়েছে। ঢাকা মহানগরের হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছে ৭৮ জন, ঢাকা বিভাগের (সিটি করপোরেশন বাদে) অন্য স্থানে ৪৫ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৩২ জন, রাজশাহী বিভাগে ২৯ জন, খুলনা বিভাগে ১৪ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ৫ জন, রংপুর বিভাগে ৩ জন এবং সিলেট বিভাগে ২ জন।
ডেঙ্গু: একটি প্রাণঘাতী মশাবাহিত রোগ
ডেঙ্গু হলো এডিস মশা দ্বারা ছড়ানো একটি ভাইরাল জ্বর, যা সাধারণত গ্রীষ্ম ও বর্ষার সময়ে বেশি দেখা যায়। ডেঙ্গু জ্বরের উপসর্গের মধ্যে থাকে হঠাৎ করে তীব্র জ্বর, মাথাব্যথা, শরীরের বিভিন্ন অংশে ব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা এবং র্যাশ। যদি সময়মতো চিকিৎসা না নেওয়া হয়, তবে এটি ডেঙ্গু হেমোরাজিক ফিভার বা ডেঙ্গু শক সিনড্রোমে রূপ নিতে পারে, যা প্রাণঘাতী।
চলতি বছরে ডেঙ্গু পরিস্থিতি
২০২৫ সালের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মোট ৪৫ জন মারা গেছেন। মারা যাওয়া রোগীর মধ্যে ২৪ জন পুরুষ এবং ২১ জন নারী রয়েছেন। পাশাপাশি, হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন মোট ১১,৪৫৬ জন ডেঙ্গু রোগী। এই সংখ্যা প্রতি বছরই বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ও সাধারণ জনগণের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের করণীয় ও উদ্যোগ
স্বাস্থ্য অধিদফতর নিয়মিত ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধি, মশা নিধন কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে। এডিস মশার লার্ভা ধ্বংসের জন্য বদ্ধ জলাশয় পরিষ্কার রাখা, পুকুর-খাল নালা পরিষ্কার রাখা এবং পরিবেশ পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা জরুরি। এছাড়া, স্বাস্থ্য অধিদফতর হাসপাতালগুলোতে জরুরি চিকিৎসা ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করার নির্দেশ দিয়েছে।
ডেঙ্গু থেকে বাঁচার জন্য করণীয়
১. পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা: বাড়ির আশেপাশে জল জমতে না দেওয়া, যাতে মশার ডিম পাড়ার স্থান না থাকে।
২. মশারি ও মশার বিরোধী স্প্রে ব্যবহার: রাতে ঘুমানোর সময় মশারি ব্যবহার করা এবং শরীরে মশার প্রতিরোধক স্প্রে লাগানো।
৩. জলাশয় পরিষ্কার রাখা: পাত্র, টায়ার, কলচাপা ইত্যাদি যেখানে পানি জমতে পারে সেগুলো নিয়মিত পরিষ্কার রাখা।
৪. ডেঙ্গুর উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসা: ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ দেখা দিলে অবিলম্বে হাসপাতালের সাহায্য নেওয়া।
ডেঙ্গু মোকাবিলায় সরকারের প্রস্তুতি
সরকার বিশেষ তহবিল গঠন করে দ্রুত চিকিৎসা সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এছাড়া, বিশেষভাবে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য বিভিন্ন হাসপাতালে আলাদা বেড ও ওয়ার্ড বরাদ্দ করা হয়েছে। পাশাপাশি, স্থানীয় প্রশাসন ও জনস্বাস্থ্য দপ্তর মশার লার্ভা ধ্বংস ও জনসচেতনতা বৃদ্ধি কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
সমাজের সকল স্তরের অংশগ্রহণ অপরিহার্য
ডেঙ্গু প্রতিরোধের ক্ষেত্রে শুধু সরকারের উদ্যোগই যথেষ্ট নয়, সামাজিক সচেতনতা ও অংশগ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রত্যেককে নিজের নিজস্ব এলাকায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে, যাতে মশার প্রজনন স্থান বন্ধ করা যায়। পরিবারের সদস্যদের ডেঙ্গুর উপসর্গ সম্পর্কে অবহিত করা এবং সতর্ক থাকা দরকার।
ভবিষ্যৎ করণীয়
ডেঙ্গু প্রতিরোধে বিজ্ঞানীরা নতুন নতুন ভ্যাকসিন ও ওষুধ তৈরি করছেন। তবে এ পর্যন্ত ডেঙ্গুর নির্দিষ্ট কোনো ভ্যাকসিন বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে চালু হয়নি। তাই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে কার্যকর পন্থা হলো মশার বংশবৃদ্ধি রোধ এবং দ্রুত চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ।
২০২৫ সালে দেশে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ও জনগণের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় একজনের মৃত্যুর পাশাপাশি ৩৫৮ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। বরিশাল বিভাগে সবচেয়ে বেশি রোগী ভর্তি হয়েছে। সরকারের পাশাপাশি জনগণকেও সচেতন থেকে নিজ নিজ এলাকায় মশার বংশবৃদ্ধি রোধে সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে। দ্রুত চিকিৎসা ও পরিচ্ছন্ন পরিবেশ ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের মূল চাবিকাঠি।