বাংলাদেশ

 ছাদে খেলতে গিয়ে গুলি লেগে রিয়ার মৃত্যু, ১১ মাস পর পুলিশের মামলা

নিহত শিশু রিয়ার পরিবারের নীরবতা, অবশেষে পুলিশের পক্ষ থেকে দায়ের করা হলো মামলা

নারায়ণগঞ্জের নয়ামাটি এলাকায় ছাদে খেলতে গিয়ে গুলিতে নিহত হয় ৬ বছর বয়সী শিশু রিয়া গোপ। ঘটনার প্রায় ১১ মাস পর, অবশেষে পুলিশের পক্ষ থেকেই দায়ের করা হলো মামলা। অভিযোগে বলা হয়েছে, কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় সংঘর্ষের মধ্যেই ছাদে থাকা অবস্থায় গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারায় অবুঝ শিশুটি।

কী ঘটেছিল সেদিন?

২০২৪ সালের ১৯ জুলাই বিকেল। নারায়ণগঞ্জের বঙ্গবন্ধু সড়কের পাশে নয়ামাটি এলাকার একটি চারতলা ভবনের ছাদে খেলছিল রিয়া। হঠাৎ নিচে রাস্তায় গোলাগুলি শুরু হয়। মেয়ের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে ছাদে ছুটে যান তার বাবা দীপক কুমার গোপ। কোলে নেয়ার মুহূর্তেই আচমকা একটি গুলি এসে লাগে রিয়ার মাথায়।

রিয়াকে প্রথমে নেয়া হয় ভিক্টোরিয়া জেনারেল হাসপাতালে, পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। তবে ২৪ জুলাই সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় অবুঝ শিশুটির।

১১ মাস পর কেন মামলা করল পুলিশ?

ঘটনার পর এতদিনেও কোনো মামলা হয়নি। পুলিশের দাবি, পরিবারকেই মামলা করার কথা বলা হয়েছিল, তবে দীর্ঘ সময়েও তারা কোনো উদ্যোগ নেয়নি। ফলে অবশেষে গত ২ জুলাই রাতে সদর মডেল থানার এসআই আবু রায়হান বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন।

থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাসির আহমদ বলেন, “মামলায় ১৫০ থেকে ২০০ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় পুলিশকেই দায় নিতে হয়েছে।”

সংঘর্ষের উৎস কী ছিল?

জানা যায়, সেদিন মণ্ডলপাড়া থেকে ২ নম্বর গেট এলাকায় কোটা সংস্কার আন্দোলনের অংশ হিসেবে একটি ছাত্রমিছিল বের হয়। বিকেল ৪টার দিকে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে। উভয় পক্ষ থেকেই চলে গুলি ও বোমা নিক্ষেপ। এই সংঘর্ষের মাঝেই নিরীহ রিয়া পড়ে প্রাণঘাতী গুলির শিকার।

নিহত শিশুটি কে ছিল?

রিয়া গোপ ছিল বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। বাবা দীপক কুমার গোপ স্থানীয় একটি রড-সিমেন্টের দোকানে ব্যবস্থাপক হিসেবে কর্মরত। পরিবারের জন্য এই শিশু ছিল আলোর দিশা। রিয়ার অকাল মৃত্যু শুধু পরিবার নয়, পুরো পাড়া-মহল্লায় বয়ে এনেছে শোকের ছায়া।

এক প্রতিবেশী বলেন, “বাচ্চাটা খুব হাসিখুশি ছিল। সারাদিন ছাদে খেলতো। হঠাৎ গুলিতে মারা যাবে, কল্পনাও করতে পারিনি।”

পরিবার নীরব কেন ছিল এতদিন?

এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। পুলিশের মতে, শুরুতে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেও মামলা করা সম্ভব হয়নি। কেউ কেউ বলছেন, হয়তো ভয় বা হতাশার কারণেই পরিবার চুপ থেকেছে। আবার কেউ বলছে, হয়তো কোনো চাপে তারা চুপ ছিল।

বিশ্লেষকদের মতে, অনেক সময় বিচারহীনতা ও সামাজিক চাপের কারণে ভুক্তভোগী পরিবার মামলা করতে ভয় পায়। আর তাই রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এমন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনায় হস্তক্ষেপ সময়োপযোগী।

দায় কার? প্রশ্ন জনমনে

এই ঘটনা শুধু একটি শিশুর মৃত্যুই নয়, বরং একটি জ্বলন্ত প্রশ্ন—জনবহুল এলাকায় কীভাবে চলে এমন গুলি? রাজনৈতিক বা আন্দোলনের নামে যেভাবে জনজীবন বিপন্ন হয়, তাতে সাধারণ মানুষই হয়ে পড়ে বলির পাঁঠা।

শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার ও প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে এখন প্রশ্ন তুলছেন সচেতন নাগরিকরা।

“মেয়েকে কোলে নিতেই গুলি এসে মাথায় লাগে, কিছুই করতে পারিনি”—শিশু রিয়ার বাবা দীপক কুমার গোপ

সারসংক্ষেপঃ  

রিয়ার মৃত্যু এক হৃদয়বিদারক ঘটনা। কিন্তু সেই ঘটনার বিচারহীনতা, পরিবার বা রাষ্ট্রের নীরবতা আরও বড় এক বিপর্যয়ের নাম। মামলা দায়ের হয়েছে বটে, কিন্তু এখন প্রশ্ন—এই মামলা কি শুধু ‘ফর্মালিটি’ হয়ে থাকবে, নাকি রিয়ার জন্য সত্যিকারের বিচারও হবে?

এম আর এম – ০১৪৬, Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button