বাংলাদেশ আদানিকে ৪৩৭ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ভারতের অন্যতম বৃহৎ বিদ্যুৎ উৎপাদন কোম্পানি আদানি পাওয়ার লিমিটেডকে তার ৪৩৭ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার) বকেয়া পরিশোধ করেছে। এ বকেয়া পরিশোধের মাধ্যমে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আদানির সকল পাওনা নিষ্পত্তি করা হয়েছে, যা ভারতীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়েছে।
বিদ্যুৎ বকেয়া পরিশোধের পেছনের কারণ ও বর্তমান পরিস্থিতি
ভারতের সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২৫ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত বিদ্যুৎ বকেয়া পরিশোধের মধ্য দিয়ে পিডিবি আদানি পাওয়ারকে পূর্ণ বিল পরিশোধ করেছে। এর ফলে আদানি পাওয়ার এখন নিয়ম অনুযায়ী বাংলাদেশের বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে আবারও বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করবে। বকেয়া পরিশোধের মধ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ সংক্রান্ত বহন খরচ এবং বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি (পিপিএ) সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
তবে, এই বিষয়ে বাংলাদেশের সরকার বা পিডিবির পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
আদানি পাওয়ারের বিদ্যুৎ সরবরাহ ও বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতের গুরুত্ব
আদানি পাওয়ার ঝাড়খণ্ডের গোড্ডা জেলায় অবস্থিত ১৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে আসছে, যা দেশের মোট বিদ্যুৎ চাহিদার প্রায় ১০ শতাংশ পূরণ করে। ২০১৭ সালের চুক্তি অনুযায়ী, গোড্ডা বিদ্যুৎ কেন্দ্র ২৫ বছর ধরে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ বাজারে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করবে। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে উৎপাদিত কয়লার ভিত্তিক বিদ্যুৎ ১০০ শতাংশ বাংলাদেশে সরবরাহের জন্য নির্ধারিত।
সরবরাহে ব্যাঘাত ও বকেয়া বিল মেটানোর সংকট
গত কয়েক বছরে ক্রমবর্ধমান আমদানি খরচ এবং বিভিন্ন আর্থিক চ্যালেঞ্জের কারণে আদানি পাওয়ারের বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতে বাংলাদেশ কিছুটা সমস্যার সম্মুখীন হয়। ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে বিদ্যুৎ সরবরাহ অর্ধেক কমিয়ে দেওয়া হয়, যার ফলে দেশের বিদ্যুৎ চাহিদায় কিছুটা প্রভাব পড়ে। তবে চলতি বছরের মার্চ থেকে মাসিক অর্থ প্রদান পুনরায় শুরু হওয়ার পর বিদ্যুৎ সরবরাহ আবার পূর্ণমাত্রায় বৃদ্ধি পায়।
অর্থ পরিশোধের বিস্তারিত ও ভবিষ্যত পরিকল্পনা
পিটিআইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত তিন থেকে চার মাসের মধ্যে বাংলাদেশ প্রতি মাসে প্রায় ৯০ থেকে ১০০ মিলিয়ন ডলার করে আদানি পাওয়ারকে পরিশোধ করেছে। এর ফলে বিদ্যুৎ বকেয়া নিয়ে সব ধরণের জটিলতা সম্পূর্ণরূপে মীমাংসিত হয়েছে। এই অর্থ পরিশোধের মাধ্যমে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ আমদানি নিরাপদ এবং নিয়মমাফিক কার্যক্রমে ফেরার আশা করা যাচ্ছে।
বাংলাদেশ-ভারত বিদ্যুৎ সহযোগিতা: একটি যুগান্তকারী অংশীদারিত্ব
বাংলাদেশের বিদ্যুৎ চাহিদা বৃদ্ধির মধ্যে ভারতের আদানি পাওয়ারের মতো শক্তিশালী জোটের সঙ্গে বিদ্যুৎ আমদানির সম্পর্ক দেশের শক্তি নিরাপত্তার জন্য বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। গোড্ডা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিদ্যুৎ সরবরাহ শুধু বিদ্যুৎ ঘাটতি পূরণ করে না, বরং বাংলাদেশের শিল্প, গৃহস্থালী এবং বাণিজ্যিক খাতকে শক্তি জোগানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।
বিশ্লেষকদের মতে, বিদ্যুৎ বকেয়া মিটিয়ে দেয়ার মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে বিদ্যুৎ বাণিজ্যের সহযোগিতা আরও সুদৃঢ় হবে এবং ভবিষ্যতে আরও বড় প্রকল্পে কাজ করার পথ প্রশস্ত হবে।
সামগ্রিক মূল্যায়ন ও ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা
বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাত দ্রুত বর্ধমান এবং বৈশ্বিক শক্তি সংকটের মধ্যে দেশের বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করাই আজকের প্রধান চ্যালেঞ্জ। ভারতের আদানি পাওয়ারের গোড্ডা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখে বকেয়া পরিশোধের মাধ্যমে পিডিবি একটি বড় সংকট মোকাবিলা করতে পেরেছে। বিদ্যুৎ সরবরাহ পুনরায় স্বাভাবিক হওয়া দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, শিল্পায়ন এবং গৃহস্থালীর উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত ইতিবাচক।
ভবিষ্যতে আরও বেশি বৈদেশিক বিনিয়োগ ও বিদ্যুৎ আমদানির মাধ্যমে দেশের শক্তি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের নীতি নির্ধারকরা কাজ করবেন বলে আশা করা যাচ্ছে।
সারসংক্ষেপ
- বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) আদানি পাওয়ারের ৪৩৭ মিলিয়ন ডলার বকেয়া পরিশোধ করেছে।
- আদানি পাওয়ার ঝাড়খণ্ডের গোড্ডা থেকে ১৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করে বাংলাদেশকে।
- গত বছর বকেয়া সংক্রান্ত সংকটের কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহ অর্ধেক কমানো হয়েছিল।
- মার্চ থেকে পূর্ণবিস্তৃত বিদ্যুৎ সরবরাহ আবার শুরু হয়েছে।
- পরিশোধের ফলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ সরবরাহ ও ভারতীয় সঙ্গে সহযোগিতা আরও মজবুত হবে।