বাংলাদেশ

ভুয়া তথ্য মোকাবেলায় জাতিসংঘের সহায়তা চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, অর্থনীতিবিদ এবং প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আজ জাতিসংঘের বিভিন্ন প্রতিনিধি ও ইউনেস্কো বাংলাদেশের অফিস প্রধানের সঙ্গে আলোচনা করেছেন ভুয়া খবরের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং গণমাধ্যমে নৈতিক মানদণ্ড বজায় রাখার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে। দেশের গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভুয়া তথ্য এবং মিথ্যা সংবাদ রোধে জাতিসংঘের সহায়তা কামনা করেন তিনি।

ভুয়া তথ্যের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ জরুরি

ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “সরকারের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো ভুয়া ও মিথ্যা খবর। শুধুমাত্র দেশের ভেতরেই নয়, দেশের বাইরের কিছু মহলও জনমনে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। শুধু ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম নয়, অনেক সময় প্রথাগত সংবাদ মাধ্যমগুলোও ভুয়া তথ্য প্রচারে জড়িত হচ্ছে।” তিনি উল্লেখ করেন, এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তা আবশ্যক।

প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, “গণমাধ্যমের সাথে জাতিসংঘের একধরনের আলাপ-আলোচনা হওয়া প্রয়োজন, যাতে সংবাদ পরিবেশে স্বচ্ছতা ও দায়িত্বশীলতা বজায় থাকে।”

জাতিসংঘ ও ইউনেস্কো’র ভূমিকা

এই আলোচনায় ইউনেস্কোর বাংলাদেশ অফিস প্রধান সুসান ভাইজ উপস্থিত ছিলেন। তিনি জানান, “আগামীকাল একটি প্রতিবেদনে আত্মনিয়ন্ত্রণ বিষয়টি গুরুত্বের সাথে আলোচিত হবে। এতে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ থাকবে যা বাংলাদেশের সাংবাদিক সমাজের জন্য প্রাসঙ্গিক।”

ইউনেস্কোর সাংবাদিকদের নিরাপত্তাবিষয়ক শাখার সিনিয়র প্রকল্প কর্মকর্তা মেহদি বেনচেলাহ জানান, “এই প্রতিবেদনে সাংবাদিকদের কর্মপরিবেশ, বিশেষত নারী সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এটি বৈশ্বিক পর্যায়ে সাংবাদিকতার মান উন্নয়নে বিশেষ অবদান রাখবে।”

ভুয়া তথ্যের প্রকৃতি ও প্রভাব

বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির যুগে ডিজিটাল মাধ্যমের প্রসার ও সোশ্যাল মিডিয়ার অগ্নিপরীক্ষায় সত্য ও মিথ্যার সীমানা প্রায় অস্পষ্ট হয়ে উঠেছে। সংবাদ গ্রহণকারীর সচেতনতা না থাকায় ভুয়া তথ্য দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে, যা সামাজিক বিভাজন, দাঙ্গা-হাঙ্গামা ও রাজনৈতিক অস্থিরতার জন্ম দেয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশেও এ ধরনের ভুয়া খবর ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে যা দেশের স্থিতিশীলতা এবং গণমাধ্যমের বিশ্বাসযোগ্যতার জন্য বড় হুমকি।

গণমাধ্যমে নৈতিকতার গুরুত্ব

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের এই আহ্বান থেকে স্পষ্ট যে, সংবাদ পরিবেশে শুধুমাত্র তথ্যের দ্রুততা নয়, তথ্যের সত্যতা ও নৈতিকতা নিশ্চিত করাও জরুরি। তিনি বলেন, “সংবাদ প্রকাশের সময় সততা, দায়িত্ববোধ ও পেশাদারিত্ব বজায় রাখা আবশ্যক।”

সরকারের ভূমিকা ও আগাম পদক্ষেপ

সরকারও ইতিমধ্যেই ভুয়া তথ্য প্রতিরোধে বিভিন্ন আইন এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা ব্যবস্থা চালু করেছে। তবে সেটি যথেষ্ট নয় বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। তারা আরও বলছেন, সরকারের পাশাপাশি জাতিসংঘের মত আন্তর্জাতিক সংস্থার সহযোগিতায় ও গণমাধ্যমের স্ব-নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার উন্নয়নে কাজ করতে হবে।

নারী সাংবাদিকদের নিরাপত্তা ও কর্মপরিবেশ

ইউনেস্কোর প্রতিবেদনে নারী সাংবাদিকদের নিরাপত্তা ও সম্মানজনক কর্মপরিবেশ গড়ার বিষয়টিও গুরুত্ব পাবে। বাংলাদেশে সাংবাদিকতায় নারীদের সংখ্যা বাড়ছে, কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে হয়রানি, হুমকি ও বিভিন্ন ধরণের নির্যাতনও বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে কর্মপরিবেশ নিরাপদ ও সমর্থনমূলক না হলে নারীদের জন্য এই পেশায় টিকে থাকা কঠিন হয়ে ওঠে।

সাংবাদিকতার মানোন্নয়ন: ভবিষ্যতের পথে

সাংবাদিকতা শুধু তথ্য পরিবেশন নয়, এটি একটি নৈতিক দায়িত্ব যা সমাজে সঠিক ও বাস্তব তথ্য পৌঁছে দেয়ার মাধ্যমে সমাজের উন্নয়ন সাধন করে। সাংবাদিকদের মানসিক ও শারীরিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হলে তারা আরও দক্ষতার সঙ্গে কাজ করতে পারবেন। এজন্য জাতিসংঘের মতো সংস্থার সহায়তা ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা অপরিহার্য।

বিশ্বব্যাপী সংবাদ পরিবেশের চ্যালেঞ্জ

বিশ্বের অনেক দেশেই আজ ভুয়া খবর, হেটস্পিচ ও ডিজিটাল অপপ্রচার একটি বড় চ্যালেঞ্জ। জাতিসংঘ, ইউনেস্কোসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা এসব সমস্যা মোকাবেলায় গাইডলাইন ও নির্দেশিকা তৈরি করছে। বাংলাদেশও এই উদ্যোগের অংশীদার হিসেবে দেশের সংবাদ পরিবেশকে উন্নত করতে পারেন।

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আহ্বান ও জাতিসংঘের সহযোগিতার মাধ্যমে বাংলাদেশে গণমাধ্যমে সত্য ও নৈতিক সংবাদ পরিবেশ প্রতিষ্ঠায় নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। ভুয়া তথ্য নির্মূল এবং সংবাদ পরিবেশের স্বচ্ছতা রক্ষা করে দেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করাই বর্তমান সময়ের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button