ভোটকেন্দ্র স্থাপনে নতুন নীতিমালা, ক্ষমতা হারালেন ডিসি এসপি ও ইউএনও

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচন কমিশন জারি করেছে ‘ভোটকেন্দ্র স্থাপন নীতিমালা-২০২৫’। এবার বাদ পড়েছেন জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও ইউএনওরা। সিদ্ধান্ত নেবেন কেবল নির্বাচন কর্মকর্তারাই।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ভোটকেন্দ্র স্থাপনের ক্ষেত্রে বড় পরিবর্তন আনলো নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ‘ভোটকেন্দ্র স্থাপন নীতিমালা-২০২৫’ গেজেট আকারে প্রকাশ করেছে ইসি। এবার থেকে ডিসি, এসপি, ইউএনও কিংবা থানার ওসিদের আর কোনো ভূমিকা থাকছে না। পুরো সিদ্ধান্ত নেবেন নির্বাচন কর্মকর্তারা।
নীতিমালার বিস্তারিত :
সোমবার (৩০ জুন) ‘ভোটকেন্দ্র স্থাপন নীতিমালা-২০২৫’ আনুষ্ঠানিকভাবে গেজেট আকারে প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। নতুন এই নীতিমালায় বলা হয়েছে, ভোটকেন্দ্রের অবস্থান নির্ধারণ ও পুনর্বিন্যাসের সম্পূর্ণ দায়িত্ব থাকবে জেলা নির্বাচন অফিসার ও রিটার্নিং কর্মকর্তার ওপর।
মহানগর, জেলা, উপজেলা বা থানা পর্যায়ের প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগের কোনো কর্মকর্তার অংশগ্রহণ বা অনুমোদন এবার আর লাগবে না। এমনকি ইভিএমে ভোটগ্রহণের জন্য কক্ষ নির্ধারণের ব্যবস্থাও রাখা হয়নি।
পূর্বের নীতিমালা বনাম নতুন পরিবর্তন :
২০২৩ সালের নীতিমালায় ডিসি ও এসপিদের সমন্বয়ে একটি জেলা কমিটি গঠন করে ইসি। এই কমিটিই ভোটকেন্দ্র স্থাপন, স্থান নির্ধারণ ও পুনর্বিন্যাসের কাজ করত। সেই সময় সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের মতামতকেই মুখ্য হিসেবে ধরা হতো।
কিন্তু নানা সময় এসব কমিটির নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। অভিযোগ ছিল, স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের প্রভাবে ভোটকেন্দ্রের অবস্থান নির্ধারণে পক্ষপাত দেখা দিত। ইসির দাবি, এসব বিতর্ক এড়াতেই এবার সম্পূর্ণ সিদ্ধান্ত নিজস্ব কর্মকর্তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।
কার প্রভাব পড়বে এই পরিবর্তনে?
নতুন নীতিমালার ফলে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়বে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকার ওপর। নির্বাচন প্রক্রিয়ায় তাদের পূর্বের সক্রিয় ভূমিকা এবার থাকছে না। একই সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতারাও সরাসরি ভোটকেন্দ্র নির্ধারণে প্রভাব খাটাতে পারবেন না বলে আশা করছে ইসি।
তবে এ পরিবর্তন নিয়ে বিরোধী দলগুলোর প্রতিক্রিয়া মিশ্র। কেউ কেউ বলছে, শুধুমাত্র নির্বাচন কর্মকর্তাদের হাতে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হলে স্বচ্ছতা আরও বাড়বে। আবার অনেকের আশঙ্কা, একক কর্তৃত্ব ভবিষ্যতে দুর্বল স্বচ্ছতার জন্ম দিতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মত:
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. হাফিজুল ইসলাম বলেন, “নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রের অবস্থান অত্যন্ত সংবেদনশীল একটি বিষয়। প্রশাসনের বাইরে রেখে নির্বাচন কর্মকর্তাদের হাতে ক্ষমতা দেওয়া সাহসী সিদ্ধান্ত। তবে বাস্তবে এর কার্যকারিতা নির্ভর করবে ইসির স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির ওপর।”
নির্বাচনী গবেষক আফসার উদ্দিন মনে করেন, “এই উদ্যোগ নির্বাচনী পরিবেশকে কিছুটা depoliticize করতে পারে, তবে নির্বাচন কর্মকর্তারা কতটা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবেন, সেটাই এখন দেখার বিষয়।”
“ভোটকেন্দ্র নির্ধারণে রাজনৈতিক প্রভাব কমাতে এমন পদক্ষেপ সময়ের দাবি ছিল”—একজন নির্বাচন বিশ্লেষক।
উপসংহার :
নতুন এই নীতিমালার ফলে বাংলাদেশে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় একটি বড় পরিবর্তনের সূচনা হলো। ডিসি-এসপি-ইউএনওদের বাদ দিয়ে কেবলমাত্র নির্বাচন কর্মকর্তাদের হাতে ভোটকেন্দ্র নির্ধারণের দায়িত্ব তুলে দেওয়া ভবিষ্যতে কী ধরনের প্রভাব ফেলবে, তা সময়ই বলে দেবে। তবে ইসির এ সিদ্ধান্ত যে আগামী সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতির অংশ, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। প্রশ্ন হচ্ছে—এই কেন্দ্রীকরণ আরও স্বচ্ছতা আনবে, নাকি নতুন বিতর্কের জন্ম দেবে?
এম আর এম – ০১১২, Signalbd.com