৮৬তম জন্মদিন আজ ,প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস আজ ৮৬ বছরে পা দিলেন। ১৯৪০ সালের ২৮ জুন চট্টগ্রামের হাটহাজারীর বথুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করা এই বাঙালি বাঙালির সমাজ ও অর্থনীতিতে যুগান্তকারী অবদান রেখে গেছেন।
ড. ইউনূসের জীবন ও কর্ম শুধু বাংলাদেশেই সীমাবদ্ধ নয়; তিনি সামাজিক ব্যবসার ধারণা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁর জন্মদিনকে আন্তর্জাতিকভাবে ‘সোশ্যাল বিজনেস ডে’ হিসেবে পালন করা হয়।
অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস: সামাজিক ব্যবসার পথপ্রদর্শক
বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক থেকে শুরু করে মাইক্রোফাইন্যান্সের পথিকৃৎ, ড. ইউনূসের জীবনের ইতিহাস ও সংগ্রামের গল্প বিশ্ববাসীর কাছে অনুপ্রেরণার উৎস। ১৯৭৬ সালে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তিনি গরীব মানুষের জন্য আর্থিক স্বাধীনতার পথ খুলে দেন।
গ্রামীণ ব্যাংক ও সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে লাখ লাখ দরিদ্র মানুষের জীবন বদলে দিয়েছেন ড. ইউনূস। বিশ্বব্যাংক, জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো তাকে সামাজিক উন্নয়নে অগ্রণী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। ২০০৬ সালে তিনি শান্তিতে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন, যা বাংলাদেশের জন্য এক গৌরবের অধ্যায়।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে ড. ইউনূস
গত বছর ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট জাতীয় রাজনীতিতে এক নতুন অধ্যায় শুরু হয়, যখন ছাত্র-জনতার আন্দোলনের প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করেন। এরপর অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের জন্য অধ্যাপক ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব দেয়া হয়।
ছাত্রনেতাদের অনুরোধে ৮ আগস্ট তিনি এই দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তাঁর নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ রক্ষা করতে সক্ষম হয়।
সরকারি জন্মদিন উদযাপনের কোন আয়োজন নেই
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানিয়েছেন, সরকারিভাবে ড. ইউনূসের জন্মদিন উপলক্ষে কোনো কর্মসূচি বা অনুষ্ঠান গ্রহণ করা হয়নি। তবে সামাজিক, রাজনৈতিক ও বেসরকারি বিভিন্ন সংগঠন ও সাধারণ মানুষ জন্মদিনটি সামাজিক ব্যবসা দিবস হিসেবে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করে থাকে।
গতকাল শুক্রবার ঢাকার সাভারের জিরাবো সামাজিক কনভেনশন সেন্টারে দুই দিনের ‘সোশ্যাল বিজনেস ডে’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ড. ইউনূস নিজেই। তবে এ অনুষ্ঠানে তাঁর জন্মদিন উদযাপনের কোনো বিশেষ আয়োজন ছিল না।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জন্মদিনের শুভেচ্ছা
ড. ইউনূসের জন্মদিনে তাঁর প্রেস সচিব শফিকুল আলম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তিনি ড. ইউনূসের একটি ছবি শেয়ার করে লিখেছেন,
“শুভ জন্মদিন, স্যার। আপনার সঙ্গে কাজ করার সৌভাগ্য আমার জীবনের এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা।”
অনেক অনুরাগী, ছাত্র-জনতা এবং সাধারণ মানুষ সোশ্যাল মিডিয়ায় অধ্যাপক ইউনূসের দীর্ঘায়ু ও সুস্বাস্থ্যের জন্য শুভকামনা জানিয়েছেন।
সামাজিক ব্যবসা দিবস: বৈশ্বিক উদযাপন
ড. ইউনূসের জন্মদিনকে কেন্দ্র করে প্রতি বছর ‘সোশ্যাল বিজনেস ডে’ পালিত হয়। এই দিনটি সামাজিক ব্যবসার গুরুত্ব ও সম্ভাবনা তুলে ধরে। সামাজিক ব্যবসা বলতে এমন একটি ব্যবসায়িক মডেল বোঝায় যেখানে লাভের চেয়ে মানুষের কল্যাণ এবং সামাজিক উন্নয়নই প্রধান লক্ষ্য।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে সামাজিক উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠানরা এদিন নানা কর্মসূচির মাধ্যমে এই ধারণাকে জনপ্রিয় করে তোলেন। বাংলাদেশে এই দিবসের আয়োজনে বিভিন্ন সেমিনার, আলোচনা সভা ও কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।
অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের জীবন ও কর্ম: এক সংক্ষিপ্ত ঝলক
- জন্ম: ২৮ জুন ১৯৪০, বথুয়া, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম।
- শিক্ষা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতি বিষয়ে স্নাতক; পরবর্তীতে আমেরিকার ভান্ডারবিল্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি।
- অর্জন:
- গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান।
- সামাজিক ব্যবসার ধারণার বিশ্ববিখ্যাত প্রচারক।
- শান্তিতে নোবেল পুরস্কার (২০০৬)।
- রাজনৈতিক ভূমিকা: অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা (২০২৪-২৫)।
বিশেষ প্রতিবেদন: সামাজিক ব্যবসা ও বাংলাদেশের উন্নয়ন
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সামাজিক ব্যবসার গুরুত্ব দিন দিন বাড়ছে। সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে দরিদ্র মানুষের জন্য নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হচ্ছে। অধ্যাপক ইউনূসের তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশে অনেক সামাজিক উদ্যোগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যা মানুষের জীবনের মান উন্নয়নে অবদান রাখছে।
সরকার ও বেসরকারি পর্যায়ে সামাজিক ব্যবসাকে সমর্থন দেয়া হচ্ছে। সরকারের বিভিন্ন নীতি ও প্রকল্পে সামাজিক ব্যবসার ধারণাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ফলে দেশের দারিদ্র্য দূরীকরণে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে।
অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের জীবন ও কর্ম বাংলাদেশের জন্য এক অনন্য গৌরব। আজকের দিনে আমরা শুধু তাঁর জন্মদিনই পালন করি না, বরং সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে সমাজ ও অর্থনীতিতে তাঁর অবদানকেও শ্রদ্ধা জানাই।
প্রধান উপদেষ্টার জন্মদিনের এই বিশেষ দিনে আমরা তাঁর দীর্ঘায়ু, সুস্বাস্থ্য ও শান্তিপূর্ণ জীবনের কামনা করি। বাংলাদেশের পাশাপাশি বিশ্ববাসী তার উদ্ভাবনী চিন্তা ও মানবসেবা ধারাকে চিরস্মরণীয় রাখবে।
সিঙ্গনালবিডি.কম থেকে শুভ জন্মদিন, অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস!
