কুমিল্লায় এসএসসি পরীক্ষার্থী ধর্ষণ ও গর্ভপাতের শিকার, মা-ছেলে গ্রেপ্তার

কুমিল্লা নগরে এক চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষার্থী মেয়েকে বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ধর্ষণ ও গর্ভপাত করানোর ঘটনায় এক তরুণ ও তার মা গ্রেপ্তার হয়েছেন। অভিযুক্তরা ভুক্তভোগী ছাত্রীর পরিবারকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এই ঘটনায় শনিবার কুমিল্লা কোতোয়ালি থানায় ছাত্রীর মা একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্তে পুলিশ অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায়। মামলার অপর আসামিকে গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
ধর্ষণ ও গর্ভপাতের ঘটনার বিবরণ
কুমিল্লা কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মহিনুল ইসলাম জানান, ধর্ষণ ও গর্ভপাতের অভিযোগে গ্রেপ্তারকৃত দুইজন হলেন— সোয়াদুর রহমান ওরফে সিয়াম (২১) এবং তার মা তানিয়া আক্তার (৪০)। তারা কুমিল্লা নগরের চকবাজার এলাকার বাসিন্দা। অভিযোগের পর বৃহস্পতিবার রাতে তাদের নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রায় দুই বছর ধরে ওই ছাত্রীর পরিবার সোয়াদুরদের বাড়িতে ভাড়া বাসা নিয়ে থাকতো। সেই সময়েই সোয়াদুর মেয়েটিকে বিয়ে করার কথা বলে তার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে। কিন্তু আসলে তার উদ্দেশ্য ছিল মেয়েটিকে শারীরিক ও মানসিকভাবে শোষণ করা।
সোয়াদুর বেশ কিছুবার ওই মেয়েকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেন এবং ধর্ষণের ভিডিও ধারণ করে তা সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে তাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতেন। এছাড়া, ভিডিও ফাঁসের ভয়ে মেয়ের পরিবার থেকে প্রায় ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন।
গর্ভপাতের প্রমাণ ও নির্যাতনের তথ্য
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ধর্ষণের কারণে ওই মেয়ে অন্তঃসত্ত্বা হন। বিষয়টি জানানো হলে সোয়াদুরের মা তানিয়া আক্তার পরিবারকে কুমিল্লা নগর থেকে চলে যেতে বাধ্য করেন।
২৪ জুন, মীমাংসার নামে ওই তরুণীকে সোয়াদুরের নানার বাড়িতে নিয়ে গিয়ে মারধর ও হুমকি ধামকি দিয়ে বাচ্চা নষ্ট করার ওষুধ খেতে বাধ্য করা হয়। তার পেটেও লাথি মারা হয়, যা শারীরিক নির্যাতনের স্পষ্ট প্রমাণ। পরে তার মা তাকে উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি করান।
মামলার গুরুত্ব ও সামাজিক প্রতিক্রিয়া
এসএসসি পরীক্ষার্থীকে এমন নির্মম নির্যাতনের ঘটনা সামাজিকভাবে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। নারী নির্যাতন ও শিশুশ্রম বিরোধী বিভিন্ন সংগঠন এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে দোষীদের দ্রুত বিচার দাবী করেছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ধর্ষণ ও গর্ভপাতের মতো ঘটনা প্রতিরোধে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি, দ্রুত বিচার ব্যবস্থা এবং সঠিক মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তার প্রয়োজন।
ধর্ষণ ও গর্ভপাত: বাংলাদেশে বর্তমান পরিস্থিতি
বাংলাদেশে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের ঘটনা দিন দিন বাড়ছে। বিশেষ করে স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছাত্রীরা নানা ধরনের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। গর্ভপাতের ক্ষেত্রে, প্রাকৃতিক ও স্বাস্থ্যসম্মত পদ্ধতি না মেনে বাধ্যতামূলক বা অবৈধ গর্ভপাতের ফলে অনেক সময় মেয়েরা বিপদে পড়েন।
সরকার ও বিভিন্ন এনজিও যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সচেতনতা ও সেবা প্রদানে কাজ করছে। তবে সামাজিক কুসংস্কার ও লজ্জার কারণে অনেক ঘটনা সামনে আসে না।
কীভাবে নির্যাতন থেকে নিজেকে রক্ষা করবেন?
১. সচেতনতা বৃদ্ধি: অপরিচিত বা সন্দেহজনক মানুষের সাথে সম্পর্ক থেকে সাবধান থাকা।
২. পরিবার ও বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে খোলাখুলি আলোচনা করা।
৩. কোনো ধরনের নির্যাতন হলে দ্রুত আইনগত সহায়তা নেওয়া।
৪. স্কুল, কলেজ ও কমিউনিটি লেভেলে সচেতনতা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করা।
পুলিশের পদক্ষেপ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
কুমিল্লা কোতোয়ালি থানা পুলিশ ধর্ষণ ও গর্ভপাতের মামলায় দ্রুত তদন্ত পরিচালনা করছে। অপর আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ভবিষ্যতে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে থানায় বিশেষ সেল গঠন এবং নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার পরিকল্পনা চলছে।
এসএসসি পরীক্ষার্থীর উপর এমন দুঃসহ নির্যাতনের ঘটনা দেশের যেকোনো মানুষের জন্য দুঃখজনক। এটি একটি গুরুতর সামাজিক সমস্যা এবং এর বিরুদ্ধে সবাইকে সোচ্চার হতে হবে।
আশা করা যায়, এই ঘটনার দ্রুত বিচার হবে এবং ভবিষ্যতে এমন দুঃখজনক ঘটনা যেন আর কেউ না দেখে, তার জন্য প্রশাসন ও সমাজকর্মীরা কঠোর ভূমিকা পালন করবেন।