বাংলাদেশ

মাকে হাসপাতালে রেখে ছুটে এলেন পরীক্ষায়, ঢুকতে না পেরে অঝোরে কাঁদলেন মেয়েটি

পরীক্ষা শুরু হওয়ার আগে সকালে মা করলেন স্ট্রোক। বাবাহীন পরিবারে মেয়েটিই একমাত্র ভরসা। মাকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে পরীক্ষাকেন্দ্রে ছুটে এলেও ঢুকতে দেওয়া হয়নি। সেই দৃশ্য দেখে চোখ ভিজেছে অসংখ্য মানুষের।

এইচএসসি পরীক্ষার প্রথম দিন। সকালেই ঘটে হৃদয়বিদারক এক ঘটনা—পরীক্ষা দিতে এসে ঢুকতে না পারার কষ্টে অঝোরে কাঁদলেন এক শিক্ষার্থী। কারণ, তিনি তার অসুস্থ মাকে হাসপাতালে রেখে দেরিতে পৌঁছেছিলেন কেন্দ্রে।

মাকে বাঁচাতে গিয়ে নিজের স্বপ্ন ভেঙে পড়ল

আজ বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) দেশের বিভিন্ন কেন্দ্রে শুরু হয়েছে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। কিন্তু রাজধানীর সরকারি মিরপুর বাংলা কলেজ কেন্দ্রের সামনের দৃশ্যটা যেন পুরো জাতিকে কাঁদিয়ে দিল।
সকাল ১০টায় পরীক্ষার সময় নির্ধারিত থাকলেও একজন ছাত্রী একটু দেরি করেই কেন্দ্রে পৌঁছান। কিন্তু পরীক্ষার হলে প্রবেশ করতে তাকে অনুমতি দেওয়া হয়নি।
তাকে দেখা যায় কেন্দ্রের গেটের সামনে কান্নায় ভেঙে পড়তে। আশেপাশের মানুষ, পথচারী—সবার চোখে জল। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়।

বাবা নেই, মা করলেন স্ট্রোক

জানা গেছে, মেয়েটির বাবা অনেক আগেই মারা গেছেন। পরিবারের দায়িত্ব একাই কাঁধে নিতে হয়েছে তাকে।
পরীক্ষার দিন সকালে হঠাৎ করেই তার মা মেজর স্ট্রোক করেন। জরুরি ভিত্তিতে মাকে হাসপাতালে ভর্তি করানোর দায়িত্ব পড়ে মেয়েটির কাঁধে।
অসুস্থ মাকে বাঁচাতে সময়ক্ষেপণ না করে দৌড়ে গিয়ে ভর্তি করেন হাসপাতাল, তারপর সেখান থেকে ছুটে আসেন পরীক্ষাকেন্দ্রে।
কিন্তু ততক্ষণে নির্ধারিত প্রবেশের সময় শেষ। পরীক্ষাকেন্দ্রের নিয়ম অনুযায়ী, দেরি হলে কাউকে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয় না।

সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষোভ ও সহানুভূতির ঢল

ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই সাধারণ মানুষ, শিক্ষক, অভিভাবকসহ অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
“একজন মানুষ মাকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে পরীক্ষায় আসার সাহস দেখিয়েছে, সেটাই তো অনেক বড় পরীক্ষা। তাকে ঢুকতে না দেওয়ার মানে মানবিকতার পরাজয়,”— এমন মন্তব্য করছেন অনেকেই।

নেটিজেনদের দাবি, “বিশেষ ব্যবস্থায় মেয়েটিকে যেন পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়।”
একজন শিক্ষক লিখেছেন, “একটা ছাত্রী যখন নিজের ভবিষ্যত বিসর্জন দিয়ে মাকে বাঁচাতে ছুটে চলে, তখন তার মানবিকতা রাষ্ট্রের নিয়মের চেয়েও বড় হয়ে দাঁড়ায়।”

লাখো পরীক্ষার্থীর ভিড়ে এক হৃদয়বিদারক গল্প

এবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে প্রায় ১২ লাখ ৫১ হাজার শিক্ষার্থী। ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, মাদরাসা এবং কারিগরি বোর্ডে পরীক্ষা শুরু হয়েছে আজই।
এই বিশাল সংখ্যার ভিড়ে মেয়েটির গল্প হয়তো একটি ‘ব্যতিক্রম’, কিন্তু এই একটি ঘটনাই প্রশ্ন তোলে—মানবিকতার স্থান কোথায়?

নিয়মের বাইরেও কখনো কখনো দরকার মানবিকতা

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বোর্ডের একাধিক কঠোর নিয়ম আছে—বিশেষ করে পরীক্ষা সংক্রান্ত। সময়মতো উপস্থিতি বাধ্যতামূলক।
তবে বিশেষ পরিস্থিতিতে, যেখানে শিক্ষার্থী নিজের পরিবারের একমাত্র ভরসা, সেখানে কি কোনো বিকল্প ব্যবস্থা থাকা উচিত নয়?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “এই ধরনের মানবিক ঘটনা বিবেচনায় নিয়ে ‘alternative sitting’ বা পরবর্তী সময়ে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ রাখা যেতে পারে। অনেক দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় এমন সুযোগ থাকে।”
বাংলাদেশেও কি এমন ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা এখন প্রকট নয়?

এখন কী হবে?

এই শিক্ষার্থী কী ভবিষ্যতে পরীক্ষার সুযোগ পাবেন? বোর্ড কোনো বিশেষ ব্যবস্থা নেবে কি না, তা এখনও নিশ্চিত নয়।
তবে এই ঘটনায় সামাজিকভাবে মানবিকতার যে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে, তা শিক্ষা কর্তৃপক্ষকে নিশ্চয়ই ভাবাবে।
প্রশ্ন থেকেই যায়—মানবিক বোধের কাছে কি কাগুজে নিয়মগুলো হার মানবে?

এম আর এম – ০০৬৪, Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button