চার স্কুলছাত্রীকে বাসায় ১৮ দিন আটকে রেখে ধর্ষণ, শিক্ষক গ্রেফতার

ঢাকার মোহাম্মদপুরে নিজ বাসায় চার কিশোরী ছাত্রীকে আটকে রেখে ১৮ দিন ধরে ধর্ষণ করেন এক শিক্ষক। নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা এলাকার স্কুলের ছাত্রীরা সেই ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার শিকার হন। গ্রেফতার হয়েছেন অভিযুক্ত মিজানুর রহমান।
ধর্ষণের ভয়ঙ্কর ঘটনা ও গ্রেফতার
নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা এলাকার চারজন দশম শ্রেণির ছাত্রীকে ঢাকার মোহাম্মদপুরে নিজ ভাড়া বাসায় আটকে রেখে ১৮ দিন ধরে ধর্ষণ করেছেন মিজানুর রহমান নামের এক শিক্ষক।
তিনি পাগলা উচ্চ বিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন আর্ট ও কম্পিউটার বিভাগের শিক্ষক।
ঘটনার শুরু ৬ জুন থেকে। শিক্ষক মিজান ‘ভালোভাবে শেখানোর’ প্রলোভনে ছাত্রীদের ঢাকায় নিয়ে যান। এরপর একে একে আরও তিনজনকে নিয়ে আসেন। প্রতিদিনই চলে ভয়াবহ নির্যাতন।
২৩ জুন এক ছাত্রী কৌশলে পালিয়ে এসে বাকি তিনজনের পরিবারের কাছে সবকিছু প্রকাশ করেন। এরপরই পুলিশ মোহাম্মদপুরে অভিযান চালিয়ে মিজানকে গ্রেফতার করে এবং ভুক্তভোগী ছাত্রীদের উদ্ধার করে।
অভিযুক্ত সম্পর্কে যা জানা গেছে
গ্রেফতার হওয়া শিক্ষক মিজানুর রহমান (৪৫) বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার সেরাল পূর্বপাড়া গ্রামের বাসিন্দা।
বর্তমানে তিনি রাজধানীর মোহাম্মদপুরের প্রেমতলা এলাকার ফারুক মিয়ার বাসায় ভাড়া থাকতেন।
পুলিশ জানিয়েছে, মিজান প্রতি শুক্রবার স্কুল বন্ধের সুযোগে ছাত্রীদের অতিরিক্ত ক্লাসের প্রলোভন দেখিয়ে ঢাকায় আনতেন।
একজন বিকৃত মানসিকতার ব্যক্তি হিসেবে তাকে চিহ্নিত করেছে ফতুল্লা মডেল থানার পুলিশ। তার বিরুদ্ধে পূর্বেও ঢাকায় পর্নোগ্রাফি এবং ধর্ষণের মামলা ছিল।
ছাত্রীরা কীভাবে ফাঁদে পড়ল?
পুলিশ ও ছাত্রীর পরিবার সূত্রে জানা যায়, অভিযুক্ত শিক্ষক প্রথমে আর্ট ও কম্পিউটার শেখানোর কথা বলে এক ছাত্রীকে ঢাকায় নিয়ে যান। সেখানে তার বাসায় আটকে রেখে ধর্ষণ করেন।
এরপর ওই ছাত্রীর মাধ্যমে আরও তিনজনকে একইভাবে ফাঁদে ফেলেন। এক পর্যায়ে চারজনই মিজানের বাসায় বন্দী অবস্থায় থাকেন।
ধর্ষণের শিকার এক কিশোরী ২৩ জুন সুযোগ পেয়ে পালিয়ে যান এবং পরিবারের কাছে গিয়ে ঘটনা জানান। এরপরই ঘটে নাটকীয় অভিযান।
অভিভাবকদের প্রতিক্রিয়া ও আইনি পদক্ষেপ
ঘটনা জানার পর চার ছাত্রীর অভিভাবকরা মিলে ফতুল্লা থানায় লিখিত অভিযোগ করেন।
থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শরিফুল ইসলাম বলেন,
“ঘটনাটি অত্যন্ত নৃশংস। অভিযুক্ত শিক্ষককে গ্রেফতার করে তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।”
এছাড়া, ভুক্তভোগী চার ছাত্রীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে এবং আদালতে জবানবন্দি রেকর্ড করার প্রক্রিয়া চলছে।
পূর্ব ইতিহাসে ধর্ষক শিক্ষক
পুলিশ জানিয়েছে, মিজানুর রহমান এর আগেও ঢাকায় এক কিশোরীর সঙ্গে অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে পর্নোগ্রাফি আইনে মামলা খেয়েছিলেন।
তাকে দীর্ঘদিন ধরেই সন্দেহের তালিকায় রেখেছিল স্থানীয় কিছু ব্যক্তি, তবে আগে অভিযোগ না আসায় ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
পরবর্তী পদক্ষেপ কী হতে পারে?
এই ঘটনায় পুরো এলাকা জুড়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে। পাগলা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভীতিকর পরিবেশ বিরাজ করছে।
পুলিশ জানায়, মিজানের মোবাইল ও ল্যাপটপ জব্দ করে ডিজিটাল ফরেনসিক বিশ্লেষণ করা হবে। যদি প্রমাণ মেলে যে সে আরও শিক্ষার্থীকে প্রলোভনে ফেলেছে, তবে নতুন মামলা দায়ের করা হবে।
“গ্রেফতারকৃত মিজান একজন বিকৃত রুচির ব্যক্তি। তার বিরুদ্ধে আগে থেকেই পর্নোগ্রাফির মামলা ছিল।” — ওসি শরিফুল ইসলাম
সারসংক্ষেপঃ
চার ছাত্রীর জীবনে নেমে এসেছে এক দুঃস্বপ্ন। মিজানুর রহমানের এই বর্বর কর্মকাণ্ড কেবল তাদের মনেই নয়, পুরো সমাজকেই নাড়া দিয়েছে।
প্রশ্ন উঠছে, একজন শিক্ষক কীভাবে এমন বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারেন?
এই ঘটনার সঠিক বিচার হলে হয়তো অন্যরা এমন ঘৃণ্য কাজ করার সাহস পাবে না।
এম আর এম – ০০৫৩, Signalbd.com