বাংলাদেশ

ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দুই, হাসপাতালে ভর্তি ৩২৬ জন

দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী সংখ্যা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু জ্বর আক্রান্ত হয়ে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে এবং একই সময়ে ৩২৬ জন নতুন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে প্রাপ্ত সর্বশেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।

ডেঙ্গু পরিস্থিতির বর্তমান অবস্থা

বাংলাদেশে এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ ক্রমশ বেড়ে চলেছে। ২০২৫ সালের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত মোট ৮৮৭০ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে এবং মারা গেছেন ৩৬ জন। গত একদিনে মৃত্যুবরণকারী দুই ব্যক্তি উভয়ই পুরুষ এবং তাদের বয়স ছিল যথাক্রমে ৬০ ও ৩৭ বছর।

হাসপাতালে রোগীর ঢল

স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১১৮ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে। এর পরেই ঢাকা মহানগরীর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৭১ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৪৩ জন, ঢাকা বিভাগের (সিটি করপোরেশন বাদে) ৪৩ জন, রাজশাহী বিভাগে ২৯ জন, খুলনা ও ময়মনসিংহ বিভাগে প্রতিটি ৬ জন এবং সিলেট বিভাগে ১ জন রোগী ভর্তি হয়েছে।

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কী করা হচ্ছে?

সরকারি ও বেসরকারি স্বাস্থ্য সংস্থা সমূহ ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। মশার বিস্তার রোধে মশার বেড়াগার নির্মাণ, রাস্তার পানি নিষ্কাশন এবং বাড়ির আশপাশে মশার লার্ভা ধ্বংসের কাজ চলছে। এছাড়া, ডেঙ্গু রোগ শনাক্ত ও চিকিৎসার জন্য হাসপাতালগুলোতে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

ডেঙ্গুর উপসর্গ ও সতর্কতা

ডেঙ্গু জ্বর সাধারণত উচ্চ জ্বর, শরীর ব্যথা, মাথাব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা এবং ত্বকের র‍্যাশের মাধ্যমে প্রকাশ পায়। ডেঙ্গুতে আক্রান্তরা দ্রুত চিকিৎসা নিলে সেরে ওঠার সম্ভাবনা বেশি, তবে চিকিৎসা না নিলে মারাত্মক সমস্যার মুখোমুখি হতে পারে। তাই তাপমাত্রা বেড়ে গেলে দ্রুত হাসপাতালে যোগাযোগ করা উচিত।

বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মশার প্রজনন ঠেকাতে বাড়ির আশপাশে পানি জমতে দেবেন না এবং পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে পরামর্শ দিয়েছেন। মশারি ব্যবহার, মশার তেল বা স্প্রে ব্যবহার এবং বাহিরে যাওয়ার সময় সুরক্ষিত পোশাক পরিধান করার গুরুত্ব উল্লেখ করেছেন। এছাড়া, ডেঙ্গু আক্রান্তদের দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।

সার্বিক পরিস্থিতি ও ভবিষ্যৎ করণীয়

ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা কঠোর পরিশ্রম করছে, তবে জনগণের সচেতনতা ও অংশগ্রহণ অপরিহার্য। বর্ষাকালীন সময়ে ডেঙ্গুর প্রকোপ সাধারণত বেড়ে যায়, তাই এই সময়ে বিশেষ সতর্ক থাকা প্রয়োজন। ডেঙ্গু রোধে জনগণের নিয়মিত পানি নিষ্কাশন, আবর্জনা মুছা, ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি।

ডেঙ্গু: দ্রুত বোঝা ও চিকিৎসা জরুরি
ডেঙ্গু মশা সাধারণত দিনের বেলা কামড়ায় এবং এটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে বৃষ্টির পর মশার প্রজনন বেশি হওয়ায়, আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যায়। ডেঙ্গুর প্রাথমিক লক্ষণ বুঝতে পারা জরুরি যাতে সময়মতো চিকিৎসা শুরু করা যায়। প্রাথমিক সতর্কতা না নিলে, ডেঙ্গু হেমোরেজিক জ্বর বা ডেঙ্গু শক সিন্ড্রোমে রূপ নিতে পারে, যা প্রাণঘাতী।

ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয়

  • বাড়ির আশেপাশে পানি জমতে দেবেন না।
  • যেকোনো পানির পাত্র ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রাখুন।
  • মশার বেড়া বা মশারি ব্যবহার করুন।
  • নিয়মিত গর্ত-গর্তে লার্ভা ধ্বংস করুন।
  • বাহিরে গেলে পূর্ণ হাত-পা ঢাকা পোশাক পরিধান করুন।
  • গরম পানীয় বেশি পান করুন এবং দ্রুত শীতল অবস্থায় চিকিৎসকের কাছে যান।

সার্বিক পর্যালোচনা

২০২৫ সালের এই ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাব দেশের জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। চিকিৎসা সেবা দ্রুততর ও উন্নত করাটা এখন সময়ের দাবি। পাশাপাশি সরকার, স্বাস্থ্য বিভাগ ও জনগণকে একযোগে কাজ করতে হবে। স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়ানো, ডেঙ্গু রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ ও চিকিৎসার ওপর গুরুত্ব দিয়ে রোগীর সংখ্যা কমানো সম্ভব।

ডেঙ্গু নিয়ে সঠিক তথ্য, দ্রুত চিকিৎসা ও সচেতনতা ছড়িয়ে দিয়ে আমরা সবাই মিলে এই রোগকে পরাস্ত করতে পারব। সিগনালবিডি ডটকম আপনাদের জন্য এ নিয়ে সর্বশেষ ও নির্ভরযোগ্য খবর পরিবেশন করে যাবে। আপডেট পেতে আমাদের সাথেই থাকুন।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button