বাংলাদেশ

পারমাণবিক জাহাজে উত্তর মেরু অভিযানে যাচ্ছে বাংলাদেশি কিশোর

বাংলাদেশের ইতিহাসে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায় যুক্ত হতে যাচ্ছে। দেশের এক তরুণ স্কুলছাত্রী, আবদুল্লাহ আল মাহমুদ, রাশিয়ার পারমাণবিক শক্তিচালিত আইসব্রেকার জাহাজে করে উত্তর মেরুতে একটি বৈশ্বিক অভিযানে অংশগ্রহণের জন্য নির্বাচিত হয়েছেন। এটি শুধুমাত্র তার ব্যক্তিগত সাফল্য নয়, বরং বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা এবং বিজ্ঞানমনস্ক তরুণ প্রজন্মের জন্য এক বিশাল গর্বের বিষয়।

রাশিয়ার আইসব্রেকার অব নলেজ প্রতিযোগিতা: এক আন্তর্জাতিক মঞ্চ

রাশিয়ার পারমাণু সংস্থা রোসাটম কর্তৃক আয়োজিত ‘আইসব্রেকার অব নলেজ’ প্রতিযোগিতা ২০২৫ সালে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই প্রতিযোগিতায় রাশিয়া, বাংলাদেশ, ভারত, বেলারুশ, বলিভিয়া, ব্রাজিল, হাঙ্গেরি, ভিয়েতনামসহ মোট ২০টি দেশের ১৪ থেকে ১৬ বছর বয়সী প্রায় সাড়ে তিন হাজার শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। বাংলাদেশ থেকে এই প্রতিযোগিতায় ১৫৩ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছিল, যা দেশের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রতি আগ্রহের উজ্জ্বল প্রতিফলন।

প্রতিযোগিতাটি তিনটি ধাপে সম্পন্ন হয়। প্রথম ধাপে বিজ্ঞানভিত্তিক একটি কুইজের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা নিজেদের জ্ঞান যাচাই করে। দ্বিতীয় ধাপে রোসাটমের প্রযুক্তি এবং উত্তর মেরু অভিযানে ব্যবহৃত পরমাণু চালিত জাহাজের প্রযুক্তি সম্পর্কিত বিশেষ ওয়েবিনারে অংশগ্রহণ করতে হয়। শেষ ধাপে অংশগ্রহণকারীদের একটি ভিডিও প্রেজেন্টেশন তৈরি করতে হয় যেখানে তাদের নিজেদের দেশের মানুষের জীবনযাত্রা উন্নয়নে কিভাবে পরমাণু প্রযুক্তি প্রয়োগ করা যায় তা তুলে ধরতে হয়।

বাংলাদেশের কৃতিত্ব: আবদুল্লাহ আল মাহমুদ নির্বাচিত

চূড়ান্ত পর্বে বিচারক প্যানেল বাংলাদেশের আবদুল্লাহ আল মাহমুদকে বিজয়ী হিসেবে ঘোষণা করে। তিনি একমাত্র বাংলাদেশি শিক্ষার্থী যিনি এই সম্মানজনক অভিযানে যাওয়ার সুযোগ লাভ করেছেন। রাশিয়ার মস্কোতে অনুষ্ঠিত চূড়ান্ত পর্বে ২০ জন বিদেশি শিক্ষার্থীসহ মোট ৪৫ জন আন্তর্জাতিক বিজয়ী অংশ নেবে।

পাবনার ঈশ্বরদীর রূপপুর অঞ্চলে বাংলাদেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের বাস্তবায়নে রোসাটমের কার্যক্রম চলছে। এই প্রকল্পের সঙ্গে সম্পর্কিত শিক্ষার্থী হিসেবে আবদুল্লাহর এই সাফল্য বাংলাদেশের বিজ্ঞান শিক্ষায় এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে।

উত্তর মেরু অভিযান: রোমাঞ্চকর এক যাত্রা

আগামী আগস্ট মাসে রাশিয়ার পরমাণু চালিত আইসব্রেকার ‘আইসব্রেকার অব নলেজ’ জাহাজে করে এই অভিযানের যাত্রা শুরু হবে। উত্তর মেরু, যা পৃথিবীর সবচেয়ে উত্তরদিকে অবস্থিত এবং বরফে ঢাকা এক অদ্ভুত পৃথিবী, সেখানে এই অভিযান শিক্ষার্থীদের জন্য এক অনন্য শিক্ষা ও অনুপ্রেরণার উৎস হবে।

বিশ্বের একমাত্র পরমাণুশক্তি চালিত আইসব্রেকারের বহর রাশিয়ার কাছে রয়েছে, যেখানে মোট আটটি আইসব্রেকার রয়েছে। গত ছয় বছরে এই অভিযানে ৩৫০ জনেরও বেশি প্রতিভাবান শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেছে, যারা ভবিষ্যতে বৈজ্ঞানিক, প্রযুক্তিবিদ এবং নানান ক্ষেত্রে বিশ্বে নিজেদের অবস্থান তৈরি করেছে।

বিজ্ঞান শিক্ষার প্রসার এবং তরুণদের বিকাশের মঞ্চ

রোসাটমের এই উদ্যোগের লক্ষ্য শুধু বিজ্ঞানের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি করা নয়, বরং প্রতিভাবান শিশু ও তরুণদের আবিষ্কার ও বিকাশে সহায়তা করা। এমন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার মাধ্যমে তারা নিজেদের যোগ্যতা ও সামর্থ্য প্রমাণ করতে পারে এবং ভবিষ্যতে দেশের এবং বিশ্বের উন্নতিতে ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়।

বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় নতুন দৃষ্টান্ত

বাংলাদেশের তরুণ শিক্ষার্থীদের জন্য এটি একটি অনুপ্রেরণার বার্তা যে আন্তর্জাতিক মঞ্চে তারা নিজেদের প্রতিভা ও দক্ষতা দিয়ে দেশের নাম উজ্জ্বল করতে পারছে। পারমাণবিক শক্তি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে এ ধরনের আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করে তুলবে।

আবদুল্লাহ আল মাহমুদ সহ বাংলাদেশের তরুণ বিজ্ঞানী-প্রতিভাবানরা পারমাণবিক প্রযুক্তি ও বিজ্ঞান ক্ষেত্রে বিশ্বের সঙ্গে সমমানের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করছে যা আমাদের জাতীয় গর্ব। রোসাটমের এই আন্তর্জাতিক উদ্যোগ শিক্ষাবিদ, গবেষক ও তরুণদের জন্য এক অনন্য সুযোগ, যা আগামী দিনে বাংলাদেশের বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির পথ প্রশস্ত করবে।

বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের জন্য এই খবর একটি উজ্জ্বল বার্তা যে, স্বপ্ন দেখো, সেগুলো অর্জনের জন্য পরিশ্রম করো এবং বিশ্বের শীর্ষ পর্যায়ে পৌঁছানোর সাহস করো।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button