উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় নরেন্দ্র মোদিকে অধ্যাপক ইউনূসের শোকবার্তা

আহমেদাবাদে বিমান দুর্ঘটনায় শোকস্তব্ধ ভারত, সহানুভূতি জানালেন ড. ইউনূস
ভারতের গুজরাট রাজ্যের আহমেদাবাদে ভয়াবহ একটি বিমান দুর্ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা এবং নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বৃহস্পতিবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উদ্দেশ্যে প্রেরিত এক আন্তরিক বার্তায় তিনি এই শোক ও সহানুভূতি জানান।
ড. ইউনূস তাঁর শোকবার্তায় জানান, “আহমেদাবাদে ২৪২ যাত্রী নিয়ে এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার বিমানটির মর্মান্তিক দুর্ঘটনার খবর শুনে আমি গভীরভাবে শোকাহত। এ দুর্ঘটনায় যারা তাদের প্রিয়জন হারিয়েছেন, তাদের সকলের প্রতি আমি আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি। এই কঠিন সময়ে আমরা ভারত সরকারের ও ভারতের জনগণের পাশে আছি।”
তিনি আরও বলেন, “এই ধরনের দুর্ভাগ্যজনক ঘটনায় আন্তর্জাতিক সংহতি প্রয়োজন, এবং বাংলাদেশ সবসময় প্রতিবেশী রাষ্ট্র হিসেবে ভারতের পাশে থাকবে। প্রয়োজনে যেকোনো ধরনের মানবিক সহায়তা দিতে আমরা প্রস্তুত আছি।”
দুর্ঘটনার বিবরণ: কী ঘটেছিল আহমেদাবাদে?
বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা ৪২ মিনিটে আহমেদাবাদ বিমানবন্দর থেকে ছেড়ে যাওয়া এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার উড্ডয়নের দুই মিনিট পরই প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সোজা গিয়ে আছড়ে পড়ে বিজে মেডিকেল কলেজের ছাত্রাবাস ভবনের ওপর।
দুর্ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া তথ্যমতে, বিমানটিতে থাকা ২৪২ যাত্রীর মধ্যে এখন পর্যন্ত ৩০ জন নিহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করা হয়েছে। আহতের সংখ্যা শতাধিক ছাড়িয়েছে, যাদের অনেকেই আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন। হতাহতদের মধ্যে চিকিৎসাশাস্ত্র বিভাগের একাধিক শিক্ষার্থী রয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ভারতের প্রতিক্রিয়া ও সরকারের পদক্ষেপ
দুর্ঘটনার পরপরই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এক বিবৃতিতে গভীর শোক প্রকাশ করেন। তিনি নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান এবং আহতদের সুচিকিৎসার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে নির্দেশ দেন।
একইসঙ্গে ভারতীয় বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। বোয়িং কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের যুক্ত করার ঘোষণাও এসেছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া: অধ্যাপক ইউনূসের বার্তা প্রসঙ্গে
অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের শোকবার্তাটি আন্তর্জাতিক সংহতির একটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। বাংলাদেশ-ভারতের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে এমন একটি মানবিক সংকটে বাংলাদেশের উচ্চপর্যায়ের একজন ব্যক্তিত্বের বার্তা ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে।
ড. ইউনূস তার বার্তার শেষাংশে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রতি শ্রদ্ধা ও শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন, যা দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে আরও সুদৃঢ় করবে বলে বিশ্লেষকদের ধারণা।
অতীতেও শোকবার্তায় সংহতি দেখিয়েছেন ইউনূস
এর আগেও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক দুর্যোগ, যুদ্ধ এবং মানবিক বিপর্যয়ের সময় অধ্যাপক ইউনূস তাঁর অবস্থান থেকে বিভিন্ন রাষ্ট্রপ্রধানদের উদ্দেশ্যে সহানুভূতির বার্তা প্রেরণ করেছেন। বিশ্বব্যাপী সামাজিক ব্যবসা এবং মানব উন্নয়ন প্রচারে তাঁর অবদানের জন্য পরিচিত এই নোবেলজয়ী নেতা মানবিক অনুভূতির প্রকাশে সবসময় অগ্রণী ভূমিকা রাখেন।
বাংলাদেশ সরকারের অবস্থান
এই দুর্ঘটনার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সরকারও আনুষ্ঠানিকভাবে শোকবার্তা প্রেরণ করার উদ্যোগ নিয়েছে বলে কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে। বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের জন্য শোক জানিয়ে ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনে একটি শোক বই খোলা হতে পারে বলে জানা গেছে।
দুর্ঘটনার প্রভাব এবং নিরাপত্তা ইস্যু
আহমেদাবাদের এই দুর্ঘটনাটি শুধু ভারতেই নয়, গোটা দক্ষিণ এশিয়া এবং আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল সংশ্লিষ্ট মহলে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। বিশেষ করে বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার নিয়ে গত কয়েক বছরে যান্ত্রিক ত্রুটির অভিযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আধুনিক প্রযুক্তির এই উড়োজাহাজে নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ ও কার্যকর ট্রেনিং ব্যবস্থা নিশ্চিত না করলে এই ধরনের দুর্ঘটনা আরও ঘটতে পারে।
মানবিক সহায়তা ও বাংলাদেশের প্রস্তুতি
ড. ইউনূসের বার্তায় যেমন উঠে এসেছে, তেমনি সরকারের বিভিন্ন সংস্থা থেকেও বিপর্যয়ের সময়ে ভারতকে সহায়তার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ সংহতি প্রকাশের পাশাপাশি জরুরি সহায়তা পাঠানোর সম্ভাব্যতা মূল্যায়ন করছে।
আহমেদাবাদে ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের প্রতি গভীর শোক জানিয়ে অধ্যাপক ড. ইউনূসের মানবিক বার্তা শুধু একজন প্রাক্তন নোবেলজয়ীর দৃষ্টান্তই নয়, বরং এটি একটি জাতির পক্ষে একটি শক্তিশালী মানবিক প্রতিক্রিয়া। বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ইতিবাচক দিকগুলো আরও জোরদার করতে এই বার্তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।