বাংলাদেশ

রাতে বাড়িতে ফেরেননি, সকালে বাড়ির পাশে মিলল ব্যবসায়ীর গলাকাটা লাশ

পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার দণ্ডপাল ইউনিয়নের ধনমণ্ডল-মল্লানীপাড়া এলাকায় এক কসমেটিকস ব্যবসায়ীর গলাকাটা লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গলাকাটা অবস্থায় উদ্ধার হওয়া ওই ব্যবসায়ীর নাম মকলেছার রহমান (৩৫)। গত বুধবার রাত থেকে নিখোঁজ ছিলেন তিনি। বৃহস্পতিবার সকালে তার লাশ বাড়ির কাছেই বাঁশঝাড় ও সুপারিবাগানে পড়ে থাকতে দেখা যায়। নিহত ব্যবসায়ী স্থানীয় খোঁচাবাড়ি বাজারে একটি প্রসাধনী দোকান চালাতেন।

হত্যাকাণ্ডের ঘটনাবলি ও লাশ উদ্ধারের বিস্তারিত

মকলেছার রহমান বুধবার রাত থেকে বাড়িতে ফেরেননি। রাতভর স্বজন ও স্থানীয়রা তাকে খুঁজতে ব্যর্থ হন। বৃহস্পতিবার সকালে একটি স্থানীয় নারী ছাগল বাঁধতে গিয়ে প্রায় ২০০ গজ দূরে বাঁশঝাড়ের ভিতরে তার গলাকাটা লাশ দেখতে পায়। তার চিৎকারে এলাকাবাসী ও নিহতের পরিবার এসে লাশটি দেখে নিহতের বলে নিশ্চিত হয়। পরে তারা দ্রুত দেবীগঞ্জ থানা পুলিশের কাছে খবর দেয়।

দেবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোয়েল রানা জানান, প্রাথমিকভাবে লাশ গলাকাটা অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহের কাজ চলছে। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে পাঠানো হবে। পুলিশ ও সিআইডি, পিবিআইয়ের সদস্যরা তদন্তে কাজ করছেন।

নিহতের জীবন ও পারিবারিক পরিচিতি

মকলেছার রহমান দণ্ডপাল ইউনিয়নের ধনমণ্ডল-মল্লানীপাড়া এলাকার বাসিন্দা এবং শাহাব উদ্দিনের ছেলে। তার বয়স ছিল ৩৫ বছর। তিনি আগে ঢাকায় গাড়ি চালাতেন। সম্প্রতি পঞ্চগড় ফিরে এসে নিজের এলাকার খোঁচাবাড়ি বাজারে একটি কসমেটিকসের দোকান পরিচালনা করছিলেন।

ঘটনার রাতে রাত ১০টার পরও স্থানীয়রা তাকে বাজারে দেখেছেন। পরে তিনি নিজের ১৬ বছর বয়সী ভাগনেকে দোকানে রেখে মোটরসাইকেলের চাবি দিয়ে বাইরে বের হন। তবে কিছুক্ষণ পরেও তিনি ফিরে আসেননি। ভাগনে তাকে ফোন দিলেও বন্ধ পাওয়া যায়। পরে পরিবারের লোকজনও ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেন কিন্তু মকলেছারের মোবাইল বন্ধ ছিল।

এলাকায় শোক ও নিরাপত্তা প্রশ্ন

নিহতের পরিবারের সদস্যরা গভীর শোকে আছে। এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। অনেকেই বলছেন, এমন নির্মম হত্যাকাণ্ড এই এলাকায় আগে কখনো হয়নি। মকলেছারের দোকান ও তার সুনাম ভালো ছিল বলে স্থানীয়রা উল্লেখ করেছেন।

দণ্ডপাল ইউনিয়ন পরিষদের ৪ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য গৌরাঙ্গ রায় জানান, মকলেছার রহমান খুব দায়িত্বশীল ও পরিশ্রমী ছিলেন। তার হঠাৎ মৃত্যু এলাকায় বড় ধাক্কা দিয়েছে। দ্রুত হত্যাকারীদের গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনা প্রয়োজন।

সম্ভাব্য কারণ ও পুলিশ তদন্তের ধারা

পুলিশ এখন হত্যাকাণ্ডের কারণ খুঁজতে তদন্তে ব্যস্ত। নিহতের পারিবারিক ও ব্যবসায়িক বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে খুনিকে স্থানীয় কোনও শত্রু অথবা ব্যক্তিগত বিবাদ থেকে হয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পুলিশ সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ ও সম্ভাব্য সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে।

পঞ্চগড়ের অপরাধের পটভূমি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা

পঞ্চগড় জেলা দীর্ঘদিন ধরে শান্ত এলাকা হিসেবে পরিচিত হলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোয় এখানে কিছু জঘন্য অপরাধের খবর পাওয়া যাচ্ছে। বিশেষ করে ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে নানা ধরনের হামলা ও চাঁদাবাজির ঘটনা বেড়েছে। এর ফলে স্থানীয় জনগণ নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন।

সরকারি পর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী শক্তিশালী করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হলেও, অপরাধ দমনে কার্যকর পদক্ষেপের প্রয়োজন রয়েছে। এই হত্যাকাণ্ড একটি সতর্কবার্তা হিসেবে দেখা হচ্ছে।

সোশ্যাল মিডিয়া ও জনমত

নিহতের মৃত্যুর খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকেই শোক প্রকাশ করেছেন এবং পুলিশ প্রশাসনের দ্রুত বিচার দাবি করছেন। একাধিক ফেসবুক পোস্টে হত্যাকারীদের গ্রেফতারের জন্য আবেদন জানানো হয়েছে।

স্থানীয় নেতা ও সাংবাদিকরাও মকলেছার হত্যাকাণ্ডের দ্রুত তদন্তের দাবিতে সুর চড়িয়েছেন।

মকলেছার রহমান হত্যা: একটি সমসাময়িক বিশ্লেষণ

এই হত্যাকাণ্ড আমাদের মনে করিয়ে দেয়, সাধারণ মানুষ এখনো নিরাপদ নয়। ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা দেশের ন্যায় সমাজের জন্য অত্যন্ত জরুরি। অপরাধ দমনে আধুনিক প্রযুক্তি ও মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে হবে।

প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যদি দ্রুত ও সুষ্ঠুভাবে এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করতে পারে, তবে তা ভবিষ্যতে অপরাধ কমাতে ভূমিকা রাখতে পারবে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button