ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ‘কিং চার্লস হারমনি অ্যাওয়ার্ড ২০২৫’

শান্তি, স্থায়িত্ব ও সামাজিক সম্প্রীতির অনন্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস পাচ্ছেন ‘কিং চার্লস হারমনি অ্যাওয়ার্ড ২০২৫’।
১২ জুন ২০২৫, বৃহস্পতিবার, লন্ডনের ঐতিহাসিক সেন্ট জেমস প্যালেসে এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানে এই সম্মাননা প্রদান করা হবে। ব্রিটেনের রাজপরিবারের পক্ষ থেকে সরাসরি এই অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হবে। এটি ব্রিটেনের অন্যতম মর্যাদাসম্পন্ন আন্তর্জাতিক পুরস্কার, যা শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান এবং বৈশ্বিক সম্প্রীতির পৃষ্ঠপোষকদের সম্মান জানাতে প্রদান করা হয়।
ড. ইউনূসের শান্তির অভিযাত্রা
ড. মুহাম্মদ ইউনূস শুধু একজন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ নন, তিনি সামাজিক ব্যবসা ও মাইক্রোক্রেডিটের জনক। তাঁর গ্রামীণ ব্যাংক উদ্যোগ পৃথিবীজুড়ে দারিদ্র্য বিমোচনের রোল মডেল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। উন্নয়নশীল দেশের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও তাঁর ভূমিকা অনন্য।
কিং চার্লস হারমনি অ্যাওয়ার্ড-২০২৫ তার এই আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গি ও কার্যক্রমেরই একটি গুরুত্বপূর্ণ স্বীকৃতি।
নৈশভোজ ও রাজকীয় সংযোগ
পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানের আগের দিন ১১ জুন, বুধবার, ড. ইউনূস অংশ নেন ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লসের পক্ষ থেকে আয়োজিত একটি বিশেষ নৈশভোজে। এই আয়োজনটি ছিল কিংস ফাউন্ডেশনের ৩৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে, যেখানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতৃত্বস্থানীয় ব্যক্তি, রাজনীতিক ও মানবিক সংগঠকদের আমন্ত্রণ জানানো হয়।
এই অনুষ্ঠানে ড. ইউনূসের অংশগ্রহণ তার বৈশ্বিক গ্রহণযোগ্যতা এবং ব্রিটিশ রাজপরিবারের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্কের পরিচায়ক।
তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠক: রাজনৈতিক গুরুত্ব
ড. ইউনূসের লন্ডন সফরের অন্যতম আলোচিত অংশ হচ্ছে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে শুক্রবার (১৩ জুন) নির্ধারিত একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, “এই বৈঠকের কোনো নির্দিষ্ট ফরম্যাট নেই।” তবে আলোচনার বিষয় হতে পারে:
- বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি
- সংসদীয় নির্বাচন প্রসঙ্গ
- নির্বাচনের সময়সূচি ও রূপরেখা
- জুলাই সংস্কার চুক্তি ও জাতীয় চার্টার
এই বৈঠক রাজনীতিকদের পাশাপাশি সাধারণ জনগণ এবং আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের মধ্যেও গভীর কৌতূহল সৃষ্টি করেছে।
চ্যাথাম হাউসে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য
ড. ইউনূস চ্যাথাম হাউস আয়োজিত একটি সংলাপে অংশ নিয়ে বলেন,
“বাংলাদেশে ১৭ বছর পর এমন একটি নির্বাচন হবে যা ইতিহাসে শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক হিসেবে চিহ্নিত হবে। নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সরকার গঠিত হবে এবং আমরা সুষ্ঠুভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করবো।”
এই মন্তব্য দেশীয় রাজনীতি ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বড় ইতিবাচক বার্তা হিসেবে গ্রহণ করা হচ্ছে।
‘কিং চার্লস হারমনি অ্যাওয়ার্ড’-এর পটভূমি
‘কিং চার্লস হারমনি অ্যাওয়ার্ড’ মূলত সেইসব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রবর্তিত, যারা পারস্পরিক সহনশীলতা, আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি ও মানবিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠায় বিশেষ অবদান রাখেন।
পুরস্কারটি মূলত ব্রিটেনের রাজপরিবারের পক্ষ থেকে বিশেষ নির্বাচন কমিটির মাধ্যমে প্রদান করা হয়। পূর্বে এই সম্মান পেয়েছেন নেলসন ম্যান্ডেলার ঘনিষ্ঠরা, আন্তর্জাতিক রেডক্রস নেতৃবৃন্দ এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলে কাজ করা সমাজকর্মীরা।
পুরস্কার গ্রহণ ও ভবিষ্যৎ দৃষ্টিভঙ্গি
ড. ইউনূসের এই পুরস্কারপ্রাপ্তি বাংলাদেশের জন্য এক বড় সম্মান। এই অর্জন যেমন তাঁর ব্যক্তিগত কৃতিত্বের সাক্ষ্য দেয়, তেমনই দেশের একটি ইতিবাচক চিত্র বিশ্বমঞ্চে উপস্থাপন করে।
বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে ড. ইউনূসের ভূমিকা আগামী নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক রূপান্তরে এক গুরুত্বপূর্ণ অনুঘটক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
ড. ইউনূস শুধু একজন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ নন, তিনি বাংলাদেশের সামাজিক বিবর্তনের ইতিহাসের একটি জ্যোতির্ময় নাম। আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক উদ্যোগ মিলিয়ে ২০২৫ সালের এই সময়টা তাঁর জীবনের আরেকটি মাইলফলক হয়ে থাকবে।
এই অ্যাওয়ার্ড তাঁর শান্তি প্রচেষ্টার যেমন স্বীকৃতি, তেমনই বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার এক নতুন প্রেরণাও বয়ে আনবে।