বাংলাদেশ

চার দিনের সফরে যুক্তরাজ্য যাচ্ছেন, পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার বিষয়ে

বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আসন্ন ৯ জুন চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে যুক্তরাজ্য যাচ্ছেন। সফরের অংশ হিসেবে তিনি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ও রাজা তৃতীয় চার্লসের সঙ্গে বৈঠক করবেন। পাশাপাশি বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় স্বার্থে গুরুত্বপূর্ণ নানা ইস্যু নিয়ে আলোচনা করবেন বলে জানানো হয়েছে।

বুধবার (৪ জুন) বিকেলে রাজধানীর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব রুহুল আলম সিদ্দিকী।

উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক: দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের নতুন দিগন্ত

পররাষ্ট্র সচিব জানান, যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সম্পর্ক “গভীর ও জটিল”, এবং এই সফর সেই সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করার একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ। প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী রিশি সুনাকের সঙ্গে লন্ডনে এক দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে মিলিত হবেন। এই বৈঠকে বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য বাণিজ্য, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা, রোহিঙ্গা সংকট এবং শিক্ষা ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে সহযোগিতার মতো নানা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোচিত হতে পারে।

বার্কিংহাম প্যালেসে রাজা চার্লসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ

সফরের অংশ হিসেবে ড. ইউনূস বৃটিশ রাজা তৃতীয় চার্লসের সঙ্গে বার্কিংহাম প্যালেসে সাক্ষাৎ করবেন। এই সাক্ষাৎ মূলত রাজকীয় সম্মাননা প্রদান উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানের অংশ, যেখানে ড. ইউনূসকে প্রদান করা হবে সম্মানজনক ‘কিং চার্লস হারমনি অ্যাওয়ার্ড ২০২৫’

ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব জানিয়েছেন, আগামী ১২ জুন রাজা চার্লসের হাত থেকে এই পুরস্কার গ্রহণ করবেন ড. ইউনূস। এটি তার আন্তর্জাতিক অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার কূটনৈতিক উদ্যোগ

প্রধান উপদেষ্টার সফরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার বিষয়টি। রুহুল আলম সিদ্দিকী জানান, “লন্ডনে বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে পাচার হওয়া অর্থ ফেরতের বিষয়ে আলাপ করবেন ড. ইউনূস। এই প্রক্রিয়ায় আইনগত সহযোগিতা, তথ্য আদান-প্রদান এবং প্রক্রিয়াগত উন্নয়নের বিষয়ও গুরুত্ব পাবে।”

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরেই যুক্তরাজ্য হয়ে বিভিন্ন দেশের দুর্নীতিবাজদের অর্থ পাচার হয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে সমন্বয় বাড়ানো অত্যন্ত প্রয়োজন।

তারেক রহমান ইস্যু: সরকার ‘অনিশ্চিত’

সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিক জানতে চান—এই সফরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে ড. ইউনূসের কোনো সাক্ষাৎ হবে কি না। উত্তরে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, “এ বিষয়ে সরকারের কাছে কোনো নির্ভরযোগ্য বা নিশ্চিত তথ্য নেই।”

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, যদি কোনো অনানুষ্ঠানিক সাক্ষাৎ হয়ও, তা হবে অত্যন্ত সংবেদনশীল। যদিও সরকার বা প্রধান উপদেষ্টা কার্যালয় থেকে এ বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি।

পুরস্কার প্রাপ্তি: ড. ইউনূসের আন্তর্জাতিক মর্যাদা আরও সুদৃঢ়

‘কিং চার্লস হারমনি অ্যাওয়ার্ড’ যুক্তরাজ্যের একটি অত্যন্ত সম্মানজনক পুরস্কার, যা সামাজিক সম্প্রীতি, দারিদ্র্য বিমোচন এবং মানবাধিকার সংরক্ষণে বিশেষ অবদানের জন্য প্রদান করা হয়। ড. ইউনূস এই পুরস্কার পেতে যাচ্ছেন তার আন্তর্জাতিক খ্যাতি, শান্তি নীতির প্রসার এবং সামাজিক ব্যবসার ধারণাকে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়ার স্বীকৃতিস্বরূপ।

এর আগে তিনি নোবেল শান্তি পুরস্কারসহ বিশ্বের বহু আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। এবার ‘হারমনি অ্যাওয়ার্ড’ তার দীর্ঘ কর্মজীবনের আরও একটি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

যুক্তরাজ্য সফরের পূর্ণাঙ্গ সূচি (সম্ভাব্য):

তারিখকার্যক্রম
৯ জুনঢাকা থেকে লন্ডন গমন
১০ জুনবৃটিশ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক
১১ জুনঅর্থ পাচার বিষয়ক আলোচনায় অংশগ্রহণ
১২ জুনরাজা চার্লসের সঙ্গে সাক্ষাৎ ও পুরস্কার গ্রহণ
১৩ জুনপ্রবাসী বাংলাদেশি ব্যবসায়ী ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময়
১৪ জুনদেশে প্রত্যাবর্তন

বিশ্লেষণ: কেন গুরুত্বপূর্ণ এই সফর?

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই সফর দুই দেশের কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ককে আরও একধাপ এগিয়ে নেবে। বর্তমানে যুক্তরাজ্য বাংলাদেশের অন্যতম রপ্তানি বাজার। একইসঙ্গে, সেখানে বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশি রয়েছেন, যাদের রেমিট্যান্স দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

এছাড়া আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও ভূরাজনীতির নতুন প্রেক্ষাপটে, বাংলাদেশের অবস্থান ও ভূমিকা বাড়ছে। এমন সময় ড. ইউনূসের মতো একজন আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত ব্যক্তিত্বের যুক্তরাজ্য সফর কৌশলগত গুরুত্ব বহন করছে।

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের চার দিনের যুক্তরাজ্য সফর কেবলমাত্র কূটনৈতিক সৌজন্য নয়, বরং এটি বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক স্বার্থ, আর্থিক স্বচ্ছতা এবং রাজনৈতিক কৌশলের গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার প্রচেষ্টা, রাজা চার্লসের সঙ্গে সাক্ষাৎ, এবং আন্তর্জাতিক পুরস্কার গ্রহণ—সবমিলিয়ে এই সফর হতে যাচ্ছে বহুমাত্রিক এবং তাৎপর্যপূর্ণ।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button