জামালপুরে ভিজিএফের ২৬১ বস্তা সরকারি চাল উদ্ধার

জামালপুর জেলার ইসলামপুর ও সরিষাবাড়ী উপজেলায় পৃথক অভিযানে ভিজিএফ (ভালনারেবল গ্রুপ ফিডিং) কর্মসূচির আওতায় দেওয়া ২৬১ বস্তা সরকারি চাল অবৈধভাবে মজুত করে রাখার অভিযোগে চারজনকে আটক করেছে যৌথ বাহিনী। রোববার রাতে পরিচালিত এই অভিযানে একটি রাইস মিলও সিলগালা করা হয়েছে।
অভিযানের সময় উদ্ধার হয় বিপুল পরিমাণ চাল
সরিষাবাড়ী উপজেলার ভাটারা রেলক্রসিং সংলগ্ন মোহাম্মদ নাজমুল মিয়ার একটি ভাড়া দোকানে অভিযান চালিয়ে ৫৫ বস্তা চাল জব্দ করা হয়। চালগুলো ইজিবাইকে করে বিক্রির জন্য নিয়ে যাওয়ার সময় ধরা পড়ে। স্থানীয় থানা পুলিশ জানায়, প্রতিটি বস্তায় ৫০ কেজি করে চাল ছিল। অভিযানে দীর্ঘদিন ধরে এই দোকানে সরকারি চাল মজুত করে বিক্রির প্রমাণ পাওয়া গেছে।
অপরদিকে ইসলামপুর পৌর শহরের গাঁওকুড়া এলাকার মা রাইস মিলে পরিচালিত অপর অভিযানে উদ্ধার করা হয় আরও ২০৬ বস্তা চাল। মিলের মালিক আরিফ মিয়াকে আটক করা হয় এবং গোডাউন সিলগালা করা হয়।
অভিযানে নেতৃত্ব
সরিষাবাড়ীর অভিযানে নেতৃত্ব দেন তারাকান্দি সেনাবাহিনীর ২৬ বীর ইউনিটের সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার ছাবিদ আলী। সঙ্গে ছিলেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) লিজা রিছিল ও সরিষাবাড়ী থানার এসআই ফখরুল ইসলাম।
ইসলামপুরের অভিযানে নেতৃত্ব দেন সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন আহসান। উপস্থিত ছিলেন ইসলামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তৌহিদুর রহমান ও থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাইফুল্লাহ সাইফ।
আটক ব্যক্তির পরিচয়
সরিষাবাড়ী উপজেলার রঘুনাথপুর এলাকার আব্দুল গফুরের ছেলে আশিক মিয়া, শাওয়ান আলীর ছেলে মো. শান্ত, মহাদান ইউনিয়নের সানাকৈর গ্রামের জয়েন উদ্দিনের ছেলে রায়হান মিয়াকে ওই ৫৫ বস্তা চালসহ আটক করা হয়।
ইসলামপুরের গাঁওকুড়া এলাকার মা রাইস মিলের মালিক আরিফ মিয়াকে ২০৬ বস্তা চালসহ আটক করা হয়।
চাল কোথা থেকে এল? মিলমালিকের দাবি
আটক মিলমালিক আরিফ মিয়া দাবি করেন, তিনি এসব চাল বৈধভাবে কিনেছেন। তবে চালের সঠিক উৎস ও কাগজপত্র দেখাতে ব্যর্থ হন তিনি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই চাল ভিজিএফ কর্মসূচির অধীনে হতদরিদ্র মানুষের মাঝে বিতরণের জন্য বরাদ্দ ছিল, যা অবৈধভাবে মজুত করা হচ্ছিল।
প্রশাসনের বক্তব্য ও মামলা প্রস্তুতি
সরিষাবাড়ী থানার ওসি মোহাম্মদ রাশেদুল হাসান বলেন, ‘‘আমরা সরকারি চাল উদ্ধার করে থানায় নিয়ে এসেছি এবং আটক তিনজনকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলছে।’’
ইসলামপুর থানার ওসি সাইফুল্লাহ সাইফ বলেন, ‘‘গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে সরকারি চাল জব্দ করা হয়েছে এবং রাইস মিল সিলগালা করা হয়েছে। আইনি প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।’’
কী এই ভিজিএফ কর্মসূচি?
ভিজিএফ বা ভালনারেবল গ্রুপ ফিডিং একটি সামাজিক নিরাপত্তামূলক খাদ্য সহায়তা কর্মসূচি, যার মাধ্যমে দেশের দুঃস্থ ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মাঝে খাদ্যশস্য বিতরণ করা হয়। এই কর্মসূচির চাল চুরি বা কালোবাজারি করাকে সরকার জিরো টলারেন্স নীতিতে দেখছে।
প্রশাসনের কঠোর অবস্থান
ভিজিএফ চাল আত্মসাতের এই ঘটনায় প্রশাসন, সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সমন্বয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করায় স্থানীয়রা স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। এ ধরনের অপকর্মের বিরুদ্ধে সরকার আরও কঠোর অবস্থান নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলেও জানা গেছে।
জামালপুরে উদ্ধারকৃত সরকারি চাল আত্মসাতের ঘটনায় প্রশাসনের তৎপরতা প্রশংসনীয় হলেও এই ধরনের ঘটনা দেশের অন্যান্য এলাকাতেও ছড়িয়ে আছে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা মনে করছেন, ভিজিএফ চালের সঠিক তদারকি এবং ট্র্যাকিং ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী না হলে এমন দুর্নীতি বন্ধ হবে না