
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের পুকুরে পাওয়া গেল আল কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী সাজিদ আব্দুল্লাহ’র মরদেহ। তিনি ২০২৩ সালের জুলাই আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছিলেন বলে জানা গেছে। মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে।
পুকুরে ভেসে থাকা লাশ, চিহ্নিত করলেন সহপাঠীরা
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শাহ আজিজুর রহমান হল সংলগ্ন পুকুরে বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) বিকেলে একটি মৃতদেহ ভেসে থাকতে দেখা যায়। প্রথমে একজন দোকানি অস্বাভাবিক কিছু লক্ষ্য করে সন্দেহ প্রকাশ করেন। বিকেলের দিকে মাথার অংশ ভেসে উঠলে শিক্ষার্থীরা ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন এবং বিষয়টি জানাজানি হয়। পরে উপস্থিত শিক্ষার্থীরা মরদেহটি সনাক্ত করেন।
নিহত শিক্ষার্থীর নাম সাজিদ আব্দুল্লাহ। তিনি আল কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০২১–২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল উপজেলায়। বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি জিয়াউর রহমান হলের ১০৯ নম্বর কক্ষে অবস্থান করতেন।
উদ্ধার ও চিকিৎসা: জীবিত না মৃত নিশ্চিত করতে সময়ক্ষেপণ
লাশ ভেসে থাকার খবর পেয়ে ইবি থানা পুলিশের একটি দল সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। ওসি শেখ মেহেদী হাসান বলেন, “পুকুরের মাঝামাঝি অংশে মরদেহ ভাসতে দেখে আমরা তা উদ্ধার করি এবং দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে পাঠাই।”
সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. সাহেদ জানান, “উপস্থাপন করার সময় ছাত্রটির কোনো পালস পাওয়া যায়নি। তবে মেডিকেলে মৃত্যুর ঘোষণা দেওয়ার নিয়ম না থাকায় তাকে দ্রুত কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।”
পরে কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে জরুরি বিভাগের চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। হাসপাতালের চিকিৎসক সুতাপা রায় বলেন, “তাকে আনার পর আমরা পরীক্ষা করে নিশ্চিত হই, তিনি আর জীবিত নেই।”
জুলাই আন্দোলনের অন্যতম মুখ
বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে যে বিষয়টি আলোচনায় এসেছে তা হলো, সাজিদ ছিলেন ২০২৩ সালের আলোচিত জুলাই আন্দোলনের একজন সক্রিয় অংশগ্রহণকারী। সে সময় শিক্ষার্থীদের নানা দাবি-দাওয়া নিয়ে যে আন্দোলন হয়েছিল, তাতে তিনি প্রথম সারিতে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন বলে জানান তার সহপাঠীরা।
তাঁর এক বন্ধু বলেন, “সাজিদ সবসময়ই অধিকার আদায়ের পক্ষে ছিল। গত বছরের জুলাই আন্দোলনে তার অবদান কেউ অস্বীকার করতে পারবে না।”
দুর্ঘটনা নাকি অন্য কিছু?
মৃত্যুর সুনির্দিষ্ট কারণ এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। কেউ বলছেন, তিনি হয়তো সাঁতার কাটতে গিয়ে ডুবে গেছেন। আবার কেউ সন্দেহ প্রকাশ করছেন অন্য কোনো কারণে মৃত্যুর বিষয়টি নিয়ে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, তদন্ত ছাড়া কিছু বলা যাচ্ছে না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমান বলেন, “আমরা পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করে বিস্তারিত তথ্য জানার চেষ্টা করছি। যদি কোনো অসঙ্গতি পাওয়া যায়, তাহলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
ছাত্র সমাজ ও শিক্ষকদের প্রতিক্রিয়া: শোক ও ক্ষোভ
ঘটনার পরপরই ক্যাম্পাসে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সহপাঠীরা দলে দলে পুকুরপাড়ে জড়ো হয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। অনেকে disbelief বা অস্বীকারের ভঙ্গিতে বলছিলেন, “সাজিদ কীভাবে মারা গেল, এটা মানা যাচ্ছে না।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান বলেন, “একজন মেধাবী ছাত্রের এমন মৃত্যু আমাদের ব্যথিত করেছে। প্রয়োজনে প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনায় বসে বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবো।”
অতীত ঘটনার নজির: এমন মৃত্যু নতুন নয়
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে এর আগেও একাধিক ছাত্র-ছাত্রীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। ২০২২ সালে এক শিক্ষার্থী হোস্টেল বাথরুমে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যান এবং পরে হাসপাতালে মারা যান। এই ঘটনাগুলো প্রশাসনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও তদারকির প্রশ্ন তুলছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সাবেক শিক্ষার্থী জানান, “পুকুর বা অন্য স্থানগুলোতে নিরাপত্তার দিকটা আরও জোরদার করা উচিত। যেন এধরনের দুঃখজনক ঘটনা আর না ঘটে।”
উত্তর খুঁজছে সবাই
সাজিদের মৃত্যু নিছক দুর্ঘটনা, নাকি এর পেছনে আছে কোনো রহস্য — তা জানতে প্রশাসন ও পরিবার উভয়ই অপেক্ষায় আছে। ক্যাম্পাসের অনেকেই বলছেন, প্রয়োজন হলে ময়নাতদন্ত করা হোক এবং ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা জোরদার করা হোক।
তবে বিশ্লেষকদের মতে, শুধু তদন্ত নয়, দীর্ঘমেয়াদী নিরাপত্তা নীতিমালা ছাড়া এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। প্রশাসনের উচিত হবে দ্রুত ও স্বচ্ছ তদন্ত করে বিষয়টি পরিষ্কার করা।
এম আর এম – ০৩৯৭, Signalbd.com