
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চাপে পদত্যাগ, ব্যাংক ও পরিবারের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চলছে
ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ আজ বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) তার পদ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগ করেছেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশে গত ৩ জুলাই তাকে পদত্যাগের জন্য বলা হয়েছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে আজ তিনি পরিচালনা পর্ষদে পদত্যাগপত্র জমা দেন।
এর আগে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করে। নতুন পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয় ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদকে, যিনি আগে সোনালী ও রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
তবে সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় ব্যাংক ও তার পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক হিসাব কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অর্থপুলিশ বা বিএফআইইউ তদন্তে তলব করা হয়। গত ১৬ জুলাই ইসলামী ব্যাংকে বিশেষ অভিযান চালানো হয়।
পদত্যাগের পেছনের কারণ
- কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চাহিদা: ডেপুটি গভর্নর ড. মো. কবির আহম্মদ গত ৩ জুলাই ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদকে পদত্যাগ করতে বলেন।
- অভিযোগ ও তদন্ত: বিএফআইইউর বিশেষ অনুসন্ধানে তার ও পরিবারের ব্যাংক হিসাবের যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।
- যুক্তরাষ্ট্র সফর: সম্প্রতি এক মাসের জন্য যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাওয়া সম্পর্কে পরিচালনা পর্ষদ বা কেন্দ্রীয় ব্যাংককে কোন তথ্য প্রদান করেননি। ব্যাংক থেকে সফরের জন্য কোনও খরচ নেওয়া হয়েছে কি না, সেই বিষয়েও অনুসন্ধান চলছে।
পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন ও দায়িত্ব গ্রহণ
- গত ৫ আগস্ট ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশে।
- পাঁচ সদস্যের নতুন পরিচালনা পর্ষদে চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয় ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদকে।
- তার আগে তিনি সোনালী ও রূপালী ব্যাংকে ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন।
বিএফআইইউর তদন্ত ও বিশেষ অভিযান
- গত ১৫ জুলাই ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ ও তার পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়।
- ১৬ জুলাই ইসলামী ব্যাংকে বিএফআইইউর বিশেষ অভিযান চলে।
- ব্যাংক থেকে নেওয়া সুবিধা, ব্যক্তিগত ও পারিবারিক ব্যাংক হিসাব নিয়ে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।
- যুক্তরাষ্ট্র সফরের ব্যয় ও উৎস নিয়ে বিশেষ নজরদারি চলছে।
ব্যাংকিং খাতের দায়িত্ব ও স্বচ্ছতার গুরুত্ব
বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণ অত্যন্ত জরুরি। বিশেষ করে ইসলামী ব্যাংক জাতীয় বৃহৎ ব্যাংক হওয়ায় এর পরিচালনা পর্ষদের দায়িত্ব ও নৈতিক মান উন্নত হওয়া উচিত।
এই ঘটনায় স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও অর্থ তদন্ত সংস্থা কিভাবে উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কর্মকাণ্ডের ওপর নজর রাখছে এবং প্রয়োজনে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও ব্যাংকের প্রতিক্রিয়া
ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ জানিয়েছে, তারা স্বচ্ছ ও দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। নতুন চেয়ারম্যান নিযুক্তির মাধ্যমে ব্যাংকের সুনাম ও আস্থার পুনর্গঠন করা হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকও জানিয়েছে, আর্থিক দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান বজায় থাকবে। ব্যাংক খাতে নিয়ন্ত্রণ ও নিবন্ধন ব্যবস্থা আরও কঠোর করা হবে।
সামগ্রিক প্রভাব ও বিশ্লেষণ
- ইসলামী ব্যাংকের উচ্চ পর্যায়ের শীর্ষ কর্মকর্তার পদত্যাগে ব্যাংকিং খাতে একটি সতর্ক বার্তা গেছে।
- সরকারের অর্থনৈতিক সংস্কারের অংশ হিসেবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
- এর ফলে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরতে পারে এবং দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
- তবে এর মধ্য দিয়ে ব্যাংক ও এর পরিচালনা ব্যবস্থায় সততা, স্বচ্ছতা ও দায়িত্ববোধ বজায় রাখার গুরুত্ব অনিবার্যভাবে বেড়ে গেছে।