বানিজ্য

শিল্পখাতে গ্যাস সরবরাহ বেড়েছে সরকারের দাবি

বাংলাদেশে কয়েক বছর ধরেই চলমান গ্যাস সংকটের মধ্যেও ২০২৫ সালে শিল্পখাতে গ্যাস সরবরাহ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে বলে দাবি করেছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ। সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গত বছরের প্রথম চার মাসের তুলনায় এবছরের একই সময়ে শিল্পে গ্যাস সরবরাহ বেড়েছে প্রায় ২১ শতাংশ।

এই ঘোষণা এসেছে এমন এক সময়ে, যখন গ্রীষ্ম মৌসুমে বিদ্যুৎ চাহিদা বাড়ায় গ্যাসের ব্যবহারও বাড়ছে এবং শিল্প খাতের অনেক ব্যবসায়ী সংগঠন গ্যাস সংকটের অভিযোগ জানিয়ে আসছিল। তবে সরকার বলছে, বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো হচ্ছে এবং প্রকৃত তথ্য অনুযায়ী শিল্পে গ্যাস সরবরাহ এখন আগের তুলনায় বেশি।

কতটা গ্যাস সরবরাহ বেড়েছে?

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়,

  • ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত দিনে গড়ে গ্যাস সরবরাহ হয়েছে ৮২ কোটি ৩০ লাখ ঘনফুট
  • ২০২৫ সালের প্রথম চার মাসে এই সরবরাহ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৯ কোটি ৭০ লাখ ঘনফুটে
  • শুধুমাত্র এপ্রিল ২০২৫ মাসেই সরবরাহ হয়েছে গড়ে ১০৮ কোটি ৮০ লাখ ঘনফুট, যা ২০২৪ সালের এপ্রিলের চেয়ে প্রায় ৫০ শতাংশ বেশি
  • ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে এই হার ছিল ৭২ কোটি ৬০ লাখ ঘনফুট

এলএনজি আমদানিতে ছয়টি বাড়তি কার্গো

গ্যাস সরবরাহ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হিসেবে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছে পেট্রোবাংলা। জ্বালানি বিভাগ জানায়,

  • ২০২৪ সালের তুলনায় এ বছর ছয়টি এলএনজি কার্গো বেশি আমদানি করা হয়েছে
  • প্রতিটি ঘনমিটারের জন্য সরকারকে ৬৫ টাকা মূল্যে এলএনজি আমদানি করতে হচ্ছে
  • অথচ শিল্প খাতে গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে ৩০ টাকায় এবং শিল্পে ব্যবহৃত নিজস্ব বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ৩১ টাকা ৫০ পয়সায়

এই হিসাবে, প্রতি ঘনমিটারে সরকারকে ৩৫ টাকা পর্যন্ত ভর্তুকি দিতে হচ্ছে, যা দেশের অর্থনীতির ওপর বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি করতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

আরও গ্যাস সরবরাহ আসছে ২৮ মে থেকে

সরকার গ্যাস সরবরাহ বাড়াতে নতুন করে পদক্ষেপ নিচ্ছে।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়,

২৮ মে থেকে প্রতিদিন আরও ১৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ বৃদ্ধি পাবে, যা শিল্পখাতে সরাসরি ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে আশা করা হচ্ছে।

বিভ্রান্তিকর মন্তব্য নিয়ে সরকারের বক্তব্য

পেট্রোবাংলা জানিয়েছে, শিল্প-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ সংবাদমাধ্যমে বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়েছেন বলে তাদের নজরে এসেছে। এ কারণে প্রকৃত তথ্য তুলে ধরতেই এই বিস্তারিত পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হয়েছে।

সরকারের দাবি,

“শিল্পে গ্যাস সরবরাহের ক্ষেত্রে সরকার অত্যন্ত তৎপর, এবং এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা দ্রুত নেওয়া হচ্ছে। বিভ্রান্তি দূর হবে বলে আশা করা হচ্ছে।”

প্রেক্ষাপট: রেশনিং ও গ্যাস সংকট

গত কয়েক বছরে গ্যাস সংকটের কারণে শিল্প, বিদ্যুৎ ও আবাসিক খাতে রেশনিং করে গ্যাস সরবরাহ করা হয়েছে। বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাসের চাহিদা বাড়ে বলে শিল্প খাতে সরবরাহ কমে যায়, যার ফলে অনেক সময় কারখানা বন্ধ রাখতে হয় বা উৎপাদন ব্যাহত হয়

তবে এবারের গ্রীষ্মে, এই ধারার ব্যতিক্রম ঘটিয়ে সরকার শিল্পের দিকেও নজর দিয়েছে বলে দাবি করছে জ্বালানি বিভাগ।

ব্যবসায়ীদের অভিমত

তবে শিল্প মালিকদের অনেকে এখনো গ্যাস সরবরাহ নিয়ে সন্তুষ্ট নন।
তারা বলছেন,

  • গ্যাস সরবরাহে অবিচ্ছিন্নতা নেই,
  • চাপ কমে গেলে অনেক সময় বয়লার বন্ধ হয়ে যায়,
  • এবং কাস্টমার চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদনে বাধা সৃষ্টি হয়

তবে সরকারি হিসাবে যেহেতু সরবরাহ বেড়েছে, তাই ব্যবসায়ীদের দাবির বাস্তবতা যাচাই করার জন্য মাঠ পর্যায়ে পর্যালোচনা জরুরি, মনে করেন জ্বালানি খাত সংশ্লিষ্ট বিশ্লেষকেরা।

গ্যাস সংকট বাংলাদেশের জ্বালানি খাতের দীর্ঘদিনের সমস্যা হলেও ২০২৫ সালে শিল্প খাতে সরবরাহ বৃদ্ধি একটি ইতিবাচক দিক। তবে এই বাড়তি সরবরাহ টেকসই হবে কি না, এবং ভর্তুকির চাপ দীর্ঘ মেয়াদে সরকার বহন করতে পারবে কি না—এই প্রশ্নগুলো সামনে এসেছে। পাশাপাশি, ব্যবহারকারীদের অভিযোগ ও বাস্তব অভিজ্ঞতাও সরকারের পরিসংখ্যানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কি না, তা যাচাই করা প্রয়োজন।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button