বিশ্ব

পাকিস্তানে ভয়াবহ ঝড়বৃষ্টি: পাঞ্জাবে ২০ জনের মৃত্যু, আহত ১৫০-এর বেশি

গত শনিবার (২৪ মে, ২০২৫) পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশসহ বিভিন্ন অঞ্চলে ভয়াবহ ঝড়বৃষ্টি ও শিলাবৃষ্টির কারণে অন্তত ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং আহত হয়েছেন ১৫০ জনেরও বেশি মানুষ। ঝড়ের তাণ্ডবে ঘরবাড়ি ধসে পড়া, গাছ উপড়ে যাওয়া, বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়া এবং সড়ক ও বিমান চলাচলে ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়েছে।

ঝড়ের ভয়াবহতা ও ক্ষয়ক্ষতি

পাঞ্জাব প্রদেশের বিভিন্ন জেলায় প্রবল ঝড় ও ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে পুরনো ও দুর্বল ভবন ধসে পড়ে অনেকের মৃত্যু হয়েছে। লাহোর, ঝিলাম, শিয়ালকোট, মুজাফফরগড়, শেখুপুড়া, নানকানা সাহিব, মুলতান, রাজনপুর, হাফিজাবাদ, মিয়াওয়ালি, ঝাং এবং লেয়াহ জেলায় এই মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। বেশিরভাগ মৃত্যুই ঘটেছে ঘরের দেয়াল বা ছাদ ধসে পড়ার কারণে। এছাড়া, ঝড়ে গাছ উপড়ে পড়ে এবং সোলার প্যানেল ও বিলবোর্ড ভেঙে পড়ে অনেকেই আহত হয়েছেন।

ঝড়ের কারণে বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। মোহালি, জিরাকপুর, বানুর ও খারারে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মী সংকটের কারণে মেরামত কাজ বিলম্বিত হচ্ছে।

বিমান চলাচলে বিঘ্ন

করাচি থেকে লাহোরগামী একটি বেসরকারি উড়োজাহাজ আল্লামা ইকবাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামার সময় তীব্র ঝাঁকুনির মুখে পড়ে এবং অল্পের জন্য বড় ধরনের দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পায়। ঝড়ের কারণে বিমানবন্দর এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং রানওয়ে ভিজে স্লিপারি হয়ে ওঠে, যা বিমান চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করে।

কৃষি ও অবকাঠামোর ক্ষতি

খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশে প্রচণ্ড বাতাস ও শিলাবৃষ্টিতে ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বৈদ্যুতিক সংযোগও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে সেখানে কোনো প্রাণহানির খবর পাওয়া যায়নি।

পাঞ্জাবের বিভিন্ন জেলায় ঝড়ে বহু গাছ উপড়ে পড়েছে এবং সোলার প্যানেল ও বিলবোর্ড ভেঙে পড়েছে। এছাড়া, পুরনো ও দুর্বল ভবন ধসে পড়ার কারণে অনেকের মৃত্যু হয়েছে।

প্রশাসনের সতর্কতা ও পদক্ষেপ

পাঞ্জাব প্রদেশের প্রাদেশিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ (পিডিএমএ) এবং ১১২২ হটলাইন সেবা থেকে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টি ও ঝড়ের খবরের পরিপ্রেক্ষিতে পাঞ্জাবে উপকমিশনার ও উদ্ধারকারী সংস্থাগুলোকে সতর্ক থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জরুরি উদ্ধার তৎপরতা সেবাবিষয়ক হটলাইন ১১২২ এর মাধ্যমে আহতদের দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।

পিডিএমএর মহাপরিচালক ইরফান আলী কাথিয়া বলেন, “বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টি ও ঝড়ের খবরের পরিপ্রেক্ষিতে পাঞ্জাবে উপকমিশনার ও উদ্ধারকারী সংস্থাগুলোকে সতর্ক থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব

গত কয়েকদিন ধরে পাকিস্তানে তীব্র তাপপ্রবাহ চলছিল। এই তাপপ্রবাহের পর হঠাৎ করে ঝড়বৃষ্টি শুরু হওয়ায় পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এমন চরম আবহাওয়া পরিস্থিতি বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাপপ্রবাহের পর হঠাৎ ঝড়বৃষ্টি ও শিলাবৃষ্টি কৃষি, অবকাঠামো ও জনজীবনে মারাত্মক প্রভাব ফেলছে।

ভবিষ্যতের প্রস্তুতি

এই ধরনের দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকারের উচিত পুরনো ও দুর্বল ভবনগুলোর সংস্কার বা পুনর্নির্মাণ করা, বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করা এবং দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রশিক্ষিত কর্মী নিয়োগ দেওয়া। এছাড়া, জনসাধারণকে সচেতন করতে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারণা চালানো প্রয়োজন।

পাকিস্তানে সাম্প্রতিক ঝড়বৃষ্টি ও শিলাবৃষ্টিতে প্রাণহানি ও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এই দুর্যোগ আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় আমাদের আরও সচেতন ও প্রস্তুত থাকতে হবে। সরকার, প্রশাসন ও জনগণের সমন্বিত প্রচেষ্টায় আমরা এই ধরনের দুর্যোগের ক্ষতি কমিয়ে আনতে পারি।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button