কর্মসংস্থান

চিকিৎসকদের জন্য আসছে আরও ২ হাজার নতুন পদ

সরকার চিকিৎসা খাতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে। বর্তমানে পদোন্নতির জন্য পর্যাপ্ত স্থায়ী পদ না থাকায় অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ও সহকারী অধ্যাপক পর্যায়ে চিকিৎসকদের জন্য ২ হাজার ৫৯টি সংখ্যাতিরিক্ত (সুপারনিউমারারি) পদ সৃষ্টির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিয়োগব্যবস্থায় নারী, পোষ্য ও পুরুষ কোটা বাতিল করে নতুন নিয়োগ বিধিমালা অনুমোদনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

আজ রোববার মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রশাসনিক উন্নয়ন-সংক্রান্ত সচিব কমিটির সভায় এ সংক্রান্ত প্রস্তাবগুলো উপস্থাপন করা হয়েছে।

স্বাস্থ্য খাতে পদোন্নতির পথ প্রশস্ত

স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে স্বাস্থ্য ক্যাডারে বিপুল সংখ্যক চিকিৎসক মেডিকেল অফিসারের পদেই দীর্ঘসময় ধরে থেকে যান, যার ফলে একদিকে যেমন পদোন্নতির সুযোগ সীমিত থাকে, অন্যদিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালগুলোর চিকিৎসা ও শিক্ষাসেবা কার্যক্রম ব্যাহত হয়।

সেই ঘাটতি পূরণে নতুন যে ২ হাজার ৫৯টি পদ সৃষ্টির প্রস্তাব করা হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে:

  • অধ্যাপক পদে: ২০১টি
  • সহযোগী অধ্যাপক: ৫৪৮টি
  • সহকারী অধ্যাপক: ১,৩১০টি

সব মিলিয়ে দ্বিতীয় ধাপে এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৫৯টি। এর আগে ২৭ এপ্রিল প্রথম দফায় ৩ হাজার ৩০টি সংখ্যাতিরিক্ত পদ সৃষ্টির অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। ফলে দু’দফায় চিকিৎসকদের জন্য মোট ৫ হাজার ৮৯টি নতুন পদ সৃষ্টি হতে যাচ্ছে।

স্বাস্থ্য ক্যাডারের বাস্তবচিত্র

বর্তমানে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আওতায় ৩৬ হাজার ৯২১টি ক্যাডার পদ রয়েছে, যার মধ্যে সহকারী অধ্যাপক পদ রয়েছে ৩ হাজার ৫৯টি। সহযোগী অধ্যাপক ও অধ্যাপক মিলিয়ে এই সংখ্যা যথাক্রমে ১,৯৬০টি ও ১,০৫৯টি।

অর্থাৎ বিসিএস পাস করা সাড়ে ৬ হাজার চিকিৎসকের জন্য উপরের ধাপগুলোতে পদোন্নতির সুযোগ সীমিত ছিল। এবার নতুন পদ সৃষ্টির মাধ্যমে স্বাস্থ্য খাতে উন্নত চিকিৎসা শিক্ষা, গবেষণা ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন চিকিৎসকদের মূল্যায়নের পথ আরও উন্মুক্ত হবে, বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বড় পরিবর্তন: বাতিল হচ্ছে কোটা ব্যবস্থা

অন্যদিকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগে বিদ্যমান কোটা ব্যবস্থা বাতিল করে নতুন বিধিমালা অনুমোদনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে এই নিয়োগে:

  • ৬০% মহিলা কোটা
  • ২০% পোষ্য কোটা
  • ২০% পুরুষ কোটা বিদ্যমান রয়েছে।

তবে প্রস্তাবিত নতুন বিধিমালা অনুযায়ী, ৭% কোটা সংরক্ষিত থাকবে, আর বাকি ৯৩% পদ মেধার ভিত্তিতে পূরণ করা হবে

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ২০২৪ সালের ২৩ জুলাই কোটা সংস্কার করে নতুন নির্দেশনা জারি করায় পুরোনো বিধিমালায় এসব অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই নতুন নিয়মে শিক্ষক নিয়োগের বিধিমালা তৈরি করা হচ্ছে।

নতুন শিক্ষক পদ সৃষ্টির পরিকল্পনা

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বর্তমানে প্রায় ৪ লাখ ২৭ হাজার ৯৭১ জন শিক্ষক রয়েছেন, যার মধ্যে সহকারী শিক্ষক ৩ লাখ ৬২ হাজার ৪১৮ জন। এই ব্যবস্থায় আরও কয়েকটি নতুন পদ সৃষ্টির কাজও শেষ হয়েছে, যেমন:

  • প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণির জন্য: ২৬,৩৬৬টি পদ
  • সংগীত শিক্ষক: ২,৫৮৩টি
  • শারীরিক শিক্ষা শিক্ষক: ২,৫৮৩টি
  • চারু ও কারুকলা শিক্ষক পদের সংযোজনেরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে

নতুন বিধিমালায় এসব পদের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা।

অন্যান্য পদ সৃষ্টির উদ্যোগ

এছাড়াও আজকের সচিব কমিটির বৈঠকে আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদের প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে:

  • জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে শুল্ক, আবগারি ও ভ্যাট অনুবিভাগে মোট ৩ হাজার ৫৯৭টি নতুন পদ
  • মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জন্য ৪৫টি পদ
  • কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ২৪টি পদ
  • মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের জন্য ১৪১টি পদ

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে এই নিয়োগ প্রক্রিয়া ও পদ সৃষ্টির উদ্যোগ সরকারি খাতের মানবসম্পদ উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদি ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

সরকারি চাকরির ব্যবস্থাপনায় দীর্ঘদিনের জটিলতা ও পদোন্নতি সংকট সমাধানে এই ধরনের পদ সৃষ্টি ও নিয়োগবিধির সংস্কার সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত হিসেবে দেখা হচ্ছে। চিকিৎসকদের জন্য সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টির মাধ্যমে চিকিৎসা শিক্ষা ও সেবা কার্যক্রমের মানোন্নয়ন সম্ভব হবে। অন্যদিকে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে কোটা সংস্কারের ফলে মেধাভিত্তিক ও প্রতিযোগিতামূলক একটি নিয়োগ প্রক্রিয়ার জন্ম হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্ট মহল।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button