ক্রিকেট

আইপিএলে এক মৌসুমেই ৪২ বার দুইশ রানের কোটা ছুঁয়েছে দলগুলো

ভারতের আইপিএল মানেই যেন ব্যাটে-বলের রঙিন উৎসব। প্রতি বছরই ক্রিকেটপ্রেমীরা উপভোগ করেন হাই স্কোরিং ম্যাচের উত্তেজনা। আর সেই উত্তেজনার কেন্দ্রবিন্দুতে এবার যোগ হলো নতুন এক রেকর্ড—এক মৌসুমে সর্বোচ্চ ২০০ রান পার করা ইনিংসের রেকর্ড।

২০২৫ সালের আইপিএলে এখন পর্যন্ত দলীয় ইনিংসে ২০০ রান বা তার বেশি তুলেছে বিভিন্ন দল মোট ৪২ বার, যা আইপিএলের ইতিহাসে এক মৌসুমে সর্বোচ্চ। আর এই রেকর্ড গড়ার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে ব্যাটসম্যানদের বিধ্বংসী পারফরম্যান্স ও ফ্ল্যাট পিচের সুবিধা।

সর্বশেষ ম্যাচেই ইতিহাস সৃষ্টি

২৩ মে অনুষ্ঠিত ম্যাচে সানরাইজার্স হায়দরাবাদ দুর্দান্ত ব্যাটিং করে ২৩১ রান তুলে। প্রতিপক্ষ ছিল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু। এই ম্যাচে রানবন্যা বইয়ে দিয়ে হায়দরাবাদ দলই হয়ে যায় আইপিএল ২০২৫–এর ৪২তম দুইশো রান তোলা দল।

এই সংখ্যা আগের রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গেছে। ২০২৪ সালে দলগুলো ২০০ রান পার করেছিল ৪১ বার, ২০২৩ সালে ৩৭ বার এবং ২০২২ সালে মাত্র ১৮ বার।

আইপিএলের চলমান আসরে এখনো বাকি রয়েছে ৯টি ম্যাচ। বিশ্লেষকদের ধারণা, এই সংখ্যা ৫০ ছাড়িয়ে যেতে পারে, যা হবে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট ইতিহাসের অনন্য মাইলফলক।

কোন দল কতবার ছুঁয়েছে ২০০ রানের গণ্ডি?

চলতি আইপিএলে ব্যাটিং পারফরম্যান্সে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে গুজরাট টাইটানস। তারা ৭টি ইনিংসে ২০০ রান বা তার বেশি সংগ্রহ করেছে। এরপর রয়েছে পাঞ্জাব কিংস, যারা করেছে ৬ বার। লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টসরাজস্থান রয়্যালস ৫ বার করে দুইশ ছুঁয়েছে।

কলকাতা নাইট রাইডার্স, সানরাইজার্স হায়দরাবাদমুম্বাই ইন্ডিয়ানস করেছে ৪ বার করে।
রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু ৩ বার,
চেন্নাই সুপার কিংসদিল্লি ক্যাপিটালস (মোস্তাফিজুর রহমানের দল) করেছে ২ বার করে।

এ থেকে স্পষ্ট যে, এবার আইপিএলে প্রতিটি দলই চেষ্টা করেছে আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ের মাধ্যমে বড় স্কোর গড়তে।

রান-বন্যার কারণ কী?

বিশেষজ্ঞদের মতে, চলতি মৌসুমে রানবন্যার পেছনে রয়েছে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ:

  1. পিচের অবস্থা:
    অধিকাংশ মাঠে ব্যাটিং সহায়ক পিচ থাকায় ব্যাটসম্যানরা বড় শট খেলতে সহজেই পারছেন।
  2. ছক্কা মারার প্রবণতা বেড়েছে:
    টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের সঙ্গে সঙ্গে ব্যাটসম্যানরা এখন বড় শট খেলার দিকেই বেশি মনোযোগী। এই কারণে ইনিংসে একের পর এক ছক্কার ফুলঝুরি দেখা যাচ্ছে।
  3. দলের কৌশলে পরিবর্তন:
    এখন দলগুলো প্রথম থেকেই আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে নামছে। আগে যেখানে দলগুলো শুরুতে সাবধানতা অবলম্বন করত, এখন তা বদলে গেছে। পাওয়ার প্লে’তেই সর্বোচ্চ রানের চেষ্টায় ব্যাটসম্যানরা।
  4. বোলিং দুর্বলতা:
    কিছু দলে অভিজ্ঞ ও কার্যকরী বোলারের অভাব রয়েছে, যা প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের জন্য বাড়তি সুবিধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কোন চার দল প্লে-অফ নিশ্চিত করেছে?

চলতি আইপিএলের প্লে-অফের চারটি দল ইতিমধ্যেই নিশ্চিত হয়েছে। পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে রয়েছে গুজরাট টাইটানস, দ্বিতীয় স্থানে পাঞ্জাব কিংস, তৃতীয় স্থানে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু এবং চতুর্থ স্থানে রয়েছে মুম্বাই ইন্ডিয়ানস

এই দলগুলোর বেশিরভাগই চলতি মৌসুমে দুইশ রান পার করা ম্যাচে জয় পেয়েছে, যা আবার প্রমাণ করে দেয়, হাই স্কোরিং ইনিংস প্লে-অফ নিশ্চিত করতে বড় ভূমিকা রেখেছে।

ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স ও ব্যাটিং হিরোরা

ব্যক্তিগতভাবে অনেক ব্যাটসম্যানই চলতি আসরে দারুণ ফর্মে রয়েছেন। যেমন:

  • শুভমান গিল (গুজরাট) – ধারাবাহিক ওপেনিং পারফরম্যান্স
  • হেনরিক ক্লাসেন (হায়দরাবাদ) – একাধিক ইনিংসে বিধ্বংসী ব্যাটিং
  • জস বাটলার (রাজস্থান) – ম্যাচ ঘুরিয়ে দেওয়ার মত ইনিংস

এছাড়া আরও অনেক তরুণ ভারতীয় ক্রিকেটার ও বিদেশি খেলোয়াড় নিজেদের নাম রাঙিয়েছেন বড় স্কোরে।

ক্রিকেট বিশ্লেষকদের প্রতিক্রিয়া

ক্রিকেট বিশ্লেষক আকাশ চোপড়া জানিয়েছেন, “আইপিএলের এবারের আসর প্রমাণ করেছে, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ব্যাটসম্যানদের আধিপত্য কতটা বেশি। বোলারদের জন্য সময়টা কঠিন হলেও, দর্শকদের জন্য এটা নিঃসন্দেহে আনন্দদায়ক।”

অন্যদিকে ভারতের সাবেক ক্রিকেটার ইরফান পাঠান মনে করেন, “এত বেশি রান হওয়ার পেছনে পিচ ও ছোট বাউন্ডারি বড় ভূমিকা রেখেছে। তবে বোলারদের নতুন কৌশল নিয়ে ভাবতে হবে।”

২০২৫ সালের আইপিএল ইতোমধ্যে রানের দিক দিয়ে ইতিহাস গড়েছে। দলীয় ২০০ রান এখন যেন সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু এই ‘সাধারণ ঘটনাই’ ক্রিকেটবিশ্বে তৈরি করছে নতুন ট্রেন্ড—‘অলআউট অ্যাটাক’।

আইপিএল-এর এই নতুন রেকর্ড কেবল ক্রিকেটপ্রেমীদেরই আনন্দ দেয়নি, বরং এটি ভবিষ্যতের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে কৌশলগত পরিবর্তনেরও ইঙ্গিত দেয়। পরবর্তী ম্যাচগুলোতে এই সংখ্যা কোথায় গিয়ে থামে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button