আইসিসিবিতে চলছে তিন দিনব্যাপী টেলিভিশন ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মেলা

রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) চলছে তিন দিনব্যাপী ‘ইন্টারন্যাশনাল কেবল টিভি, ব্রডকাস্টিং অ্যান্ড কমিউনিকেশন (আইসিবিসি) এক্সপো-২০২৫’। কেবল অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (কোয়াব) আয়োজিত এই মেলা গত বৃহস্পতিবার (২২ মে) শুরু হয়ে আজ শনিবার (২৪ মে) সমাপ্ত হবে। এটি বাংলাদেশে তৃতীয়বারের মতো এই ধরনের মেলার আয়োজন, এর আগে ২০০৭ ও ২০০৮ সালে এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
মেলার উদ্দেশ্য ও গুরুত্ব
আইসিসিবির ২ নম্বর হলের পাশে আয়োজিত এই মেলা টেলিভিশন সম্প্রচার ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতের অগ্রগতি প্রদর্শনের একটি বড় প্ল্যাটফর্ম। কোয়াব সভাপতি এ বি এম সাইফুল হোসাইন সোহেল জানান, এই মেলার মূল উদ্দেশ্য হলো টেলিভিশন ও কেবল অপারেটরদের ব্যবসায়িক সম্ভাবনা বৃদ্ধি করা এবং এই খাতে সম্পূর্ণ ডিজিটাইজেশনের মাধ্যমে ব্যবসা নিরাপদ ও টেকসই করা। তিনি বলেন, “টেলিভিশন মালিক, কর্মকর্তা-কর্মচারী, কলাকুশলী, কেবল অপারেটর, টেকনোলজিভিত্তিক অংশীদার, আমদানিকারক এবং উৎপাদকদের সমন্বয়ে এই মেলা আয়োজিত হয়েছে। ডিজিটাইজেশনের মাধ্যমে এই খাতে সরকার বছরে প্রায় হাজার কোটি টাকার কর আদায় করতে পারবে।”
মেলায় প্রায় ৯৬টি স্টল অংশ নিচ্ছে, যেখানে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল, দেশি-বিদেশি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান এবং পণ্য আমদানিকারক ও উৎপাদনকারীরা তাদের পণ্য ও সেবা প্রদর্শন করছে। কোয়াব সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদুল মামুন জানান, এবারের মেলায় প্রত্যাশার চেয়ে বেশি সাড়া পাওয়া গেছে। প্রাথমিকভাবে ১০০টি ইউনিটের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও পরে তা ৮০টিতে নামিয়ে আনা হয়েছিল। তবে চূড়ান্তভাবে ৯৬টি ইউনিট অংশ নিয়েছে, যা আয়োজকদের জন্য ইতিবাচক সাফল্য।
দর্শনার্থীদের উৎসাহ ও স্টলের বৈচিত্র্য
মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা গেছে, প্রথম দিনের মতো দ্বিতীয় দিনেও দর্শনার্থীদের উপস্থিতি ছিল উল্লেখযোগ্য। বিভিন্ন স্টলে ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। স্টলগুলোতে টেলিভিশন সম্প্রচার সরঞ্জাম, কেবল টিভি প্রযুক্তি, ইন্টারনেট সেবা, স্যাটেলাইট যোগাযোগ সরঞ্জাম এবং ডিজিটাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের বিভিন্ন পণ্য ও সেবা প্রদর্শিত হচ্ছে।
একজন দর্শনার্থী, রাকিব হাসান, বলেন, “একই ছাদের নিচে এত ধরনের প্রযুক্তি ও সেবা দেখতে পাওয়া সত্যিই আনন্দের। নতুন প্রযুক্তি সম্পর্কে জানার পাশাপাশি সরাসরি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে আমরা অনেক কিছু শিখতে পারছি।” স্টলের ব্যবসায়ীরাও দর্শনার্থীদের আগ্রহ নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। একজন স্টল প্রতিনিধি জানান, “আমরা আশা করিনি এত মানুষ আসবে। প্রথম দুই দিনে আমাদের পণ্য ও সেবার প্রতি দর্শনার্থীদের আগ্রহ দেখে আমরা উৎসাহিত।”
ডিজিটাইজেশনের ভূমিকা ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
এই মেলার অন্যতম লক্ষ্য হলো টেলিভিশন ও কেবল টিভি শিল্পে ডিজিটাইজেশনের প্রসার। বর্তমানে বাংলাদেশের কেবল টিভি শিল্পে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার ক্রমশ বাড়ছে, যা গ্রাহকদের জন্য উন্নতমানের সেবা নিশ্চিত করছে। কোয়াব সভাপতি সোহেল জানান, ডিজিটাইজেশনের মাধ্যমে কেবল অপারেটরদের ব্যবসা আরও স্বচ্ছ ও লাভজনক হবে। তিনি বলেন, “ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে রূপান্তরের ফলে গ্রাহকরা উন্নত সেবা পাবেন, আর সরকারও এই খাত থেকে উল্লেখযোগ্য রাজস্ব আদায় করতে পারবে।”
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই ধরনের মেলা প্রযুক্তি খাতে নতুন উদ্ভাবন ও বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি করছে। দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো এই মেলার মাধ্যমে তাদের সর্বশেষ প্রযুক্তি প্রদর্শন করছে, যা বাংলাদেশের টেলিভিশন ও যোগাযোগ খাতের জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে। এছাড়া, মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা ও নেটওয়ার্কিংয়ের সুযোগও তৈরি হচ্ছে, যা এই শিল্পের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
মেলার প্রভাব ও প্রত্যাশা
মেলার আয়োজকরা জানান, এই ধরনের আয়োজন কেবল ব্যবসায়িক সম্পর্ক উন্নয়নই নয়, বরং সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রযুক্তি সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধিতেও ভূমিকা রাখছে। বিশেষ করে, তরুণ প্রজন্মের মধ্যে টেলিভিশন ও যোগাযোগ প্রযুক্তির প্রতি আগ্রহ বাড়ছে। একজন তরুণ দর্শনার্থী, সাবিনা আক্তার, বলেন, “এই মেলায় এসে আমি জানতে পেরেছি কীভাবে ডিজিটাল প্রযুক্তি আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে আরও সহজ করছে। এই ধরনের মেলা আমাদের জন্য নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিচ্ছে।”
মেলার শেষ দিনে (২৪ মে) আরও বেশি দর্শনার্থীর সমাগম প্রত্যাশা করছেন আয়োজকরা। তারা জানান, এই মেলার সাফল্য ভবিষ্যতে এই ধরনের আরও আয়োজনের পথ সুগম করবে। এছাড়া, এই খাতে ডিজিটাইজেশনের প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে সরকার ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর উপরও জোর দেওয়া হচ্ছে।
উপসংহার
‘ইন্টারন্যাশনাল কেবল টিভি, ব্রডকাস্টিং অ্যান্ড কমিউনিকেশন এক্সপো-২০২৫’ বাংলাদেশের টেলিভিশন ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতের জন্য একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এই মেলা কেবল ব্যবসায়িক সুযোগ তৈরি করছে না, বরং প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ও ডিজিটাইজেশনের মাধ্যমে এই খাতকে আরও শক্তিশালী করছে। আগামী দিনে এই ধরনের আয়োজন এই শিল্পের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।