১৩ হাজার টেস্ট রান: ইতিহাস গড়েও অনন্য দ্বৈততায় জো রুট

ইংলিশ ব্যাটসম্যান জো রুট ক্রিকেট ইতিহাসে আরেকটি দুর্লভ কীর্তির অধিকারী হলেন। ১৩ হাজার টেস্ট রানের মাইলফলকে পৌঁছে নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা করলেন ইংল্যান্ডের সাবেক এই অধিনায়ক। তবে রুটের এই অর্জন একসঙ্গে দুই বিপরীত রেকর্ডকে স্পর্শ করেছে—একদিকে এটি সবচেয়ে কম টেস্ট ম্যাচ খেলে ১৩ হাজার রান ছোঁয়ার রেকর্ড, অন্যদিকে সবচেয়ে বেশি ইনিংস খেলে এই সংখ্যায় পৌঁছানোর নজিরও তাঁর দখলে।
টেস্ট ইতিহাসে পঞ্চম, ইংল্যান্ডের প্রথম
রুট হয়েছেন টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে পঞ্চম ব্যাটসম্যান, যিনি স্পর্শ করলেন ১৩ হাজার রানের জাদুকরী সীমা। তাঁর আগে এই তালিকায় নাম লিখিয়েছেন শচীন টেন্ডুলকার, রিকি পন্টিং, জ্যাক ক্যালিস এবং রাহুল দ্রাবিড়। তবে এই তালিকার একমাত্র ইংলিশ নাম এখন জো রুট।
১৩ হাজার রান ছুঁতে রুট খেলেছেন ১৫৩টি টেস্ট ম্যাচ। এই সংখ্যাটি তাঁকে নিয়ে এসেছে ম্যাচের হিসেবে দ্রুততমদের তালিকার শীর্ষে, যেখানে শচীন খেলেছিলেন ১৬৩টি ম্যাচ, ক্যালিস ১৫৯টি, পন্টিং ১৬০টি এবং দ্রাবিড় ১৬৫টি ম্যাচ।
তবুও ইনিংসের হিসাবে সবার পেছনে রুট!
বিস্ময়কর হলেও সত্য, ইনিংসের হিসেবে রুটই ১৩ হাজারে পৌঁছেছেন সবচেয়ে দেরিতে। এ কীর্তিতে তাঁর লেগেছে ২৭৯ ইনিংস। তুলনায় দ্রাবিড় ২৭৭ ইনিংসে, পন্টিং ২৭৫ ইনিংসে, ক্যালিস ২৬৯ ইনিংসে এবং টেন্ডুলকার মাত্র ২৬৬ ইনিংসে ছুঁয়েছিলেন একই লক্ষ্য। অর্থাৎ, ইনিংসের দিক থেকে জো রুট হয়েছেন সবচেয়ে ধীর গতির অর্জনকারী।
ট্রেন্ট ব্রিজে ইতিহাস রচনা
গতকাল (২২ মে ২০২৫), নটিংহামের ট্রেন্ট ব্রিজে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টে রুটের প্রয়োজন ছিল মাত্র ২৮ রান। প্রথম দিনের শেষ সেশনে ৩৪ রানে পৌঁছে কীর্তিটি গড়েন তিনি। যদিও ইনিংসটি বড় করতে পারেননি—জেমস মুয়ালার বলে কট বিহাইন্ড হয়ে সাজঘরে ফিরতে হয় তাঁকে।
রুট যখন ব্যাট তুললেন, স্টেডিয়ামজুড়ে তখন প্রশংসার গর্জন। সতীর্থরাও করতালিতে অভিনন্দন জানালেন এই ব্যতিক্রমী ব্যাটসম্যানকে।
২০১২ সালে শুরু, আজ কিংবদন্তি
রুটের টেস্ট যাত্রা শুরু হয় ২০১২ সালের ডিসেম্বরে, ভারতের বিপক্ষে নাগপুরে। তখন থেকে এখন পর্যন্ত দীর্ঘ এক যুগের ক্যারিয়ারে তিনি শুধু রানই করেননি, করেছেন অধিনায়কত্ব, টানাপোড়েন পেরিয়ে গড়েছেন এক ধ্রুব মাপকাঠি। ইংল্যান্ডের হয়ে সর্বোচ্চ টেস্ট সেঞ্চুরির মালিকও এখন রুট, তাঁর সেঞ্চুরি সংখ্যা ৩৬।
এই ৩৬টি সেঞ্চুরি টেস্ট ইতিহাসে রাহুল দ্রাবিড়ের সমান, যাঁর সেঞ্চুরিও ছিল ৩৬টি। কেবল চারজন ব্যাটসম্যান রুটের চেয়ে বেশি সেঞ্চুরি করেছেন—জ্যাক ক্যালিস (৪৫), রিকি পন্টিং (৪১) এবং শচীন টেন্ডুলকার (৫১)।
শুধু পরিসংখ্যান নয়, ধারাবাহিকতাই বড় পরিচয়
রুটের ক্যারিয়ার শুধু পরিসংখ্যানে নয়, ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের কারণেও প্রশংসিত। কঠিন কন্ডিশনে টানা পারফর্ম করে গড়েছেন ভরসার নাম। গত দশকে ইংল্যান্ড টেস্ট দলের মূল স্তম্ভ হিসেবে রুটের ব্যাটই ছিল সবচেয়ে কার্যকর অস্ত্র।
বিশেষজ্ঞদের মতে, আধুনিক টেস্ট ব্যাটসম্যানদের মধ্যে ক্লাসিক টেম্পারামেন্ট এবং টেকনিক্যাল পরিপূর্ণতার সংমিশ্রণ রুটের ব্যাটিংয়ে দুর্লভ বৈশিষ্ট্য হয়ে উঠেছে।
দুই বিপরীত রেকর্ডে এক ব্যাটসম্যান
জো রুটের এই দ্বৈত রেকর্ড—সবচেয়ে কম ম্যাচে এবং সবচেয়ে বেশি ইনিংসে ১৩ হাজার রান—আসলে ক্রিকেট পরিসংখ্যানের জগতে এক ব্যতিক্রমী অধ্যায়। এর মাধ্যমে বোঝা যায়, রুট কতটা নির্ভরযোগ্য ছিলেন দীর্ঘসময় ধরে, কিন্তু কখনও ইনিংসপ্রতি ধ্বংসাত্মক নাও হতে পারেন।
রুট নিজেও ম্যাচ শেষে সাংবাদিকদের বলেন:
“আমি ব্যক্তিগত অর্জনের কথা খুব একটা ভাবি না। দলের জন্য কাজ করাটাই মুখ্য। তবে হ্যাঁ, এই কীর্তি আনন্দের এবং গর্বের।”
আর কতদূর যাবেন রুট?
এই প্রশ্ন এখন টেস্টপ্রেমীদের মনে। ৩৪ বছর বয়সী রুট হয়তো আরও কিছু বছর খেলবেন, যদি ফিটনেস এবং ফর্ম ঠিক থাকে। এখন পর্যন্ত তাঁর রান সংখ্যা ১৩০০৬ (২২ মে ২০২৫ পর্যন্ত), সেঞ্চুরি ৩৬, হাফ-সেঞ্চুরি ৭৫-এর বেশি। শচীনের ১৫৯২১ রান ছুঁতে হলে তাঁকে করতে হবে প্রায় আরও ৩ হাজার রান। সময় এবং মানসিক দৃঢ়তা থাকলে রুট সেই পথে হাঁটতে পারেন।
পরিণত ব্যাটসম্যান, পরিণত অধ্যায়
জো রুট শুধুমাত্র একজন রেকর্ডধারী ব্যাটসম্যান নন, বরং তিনি ইংলিশ ক্রিকেটের এক নতুন প্রতীক। ১৩ হাজার রান কেবল একটি সংখ্যা নয়, বরং এটি নিরলস পরিশ্রম, ধারাবাহিকতা এবং অনন্য কৌশলের ফসল। তিনি যেখানে সবার আগে—ম্যাচে সবচেয়ে কম সময়ে; সেখানেই সবার পরে—ইনিংসে সবচেয়ে বেশি সময় নিয়ে। এই বৈপরীত্যই রুটকে করে তোলে অনন্য।