ইসরায়েলের শীর্ষ বাণিজ্য অংশীদার ও কেনাবেচার তালিকা: ২০২৪ পরিসংখ্যান

ইসরায়েল মধ্যপ্রাচ্যের একটি অর্থনৈতিক হাব। ছোট ভূমি ও স্বল্প প্রাকৃতিক সম্পদ থাকা সত্ত্বেও দেশটি উচ্চপ্রযুক্তি, কৃষি-প্রযুক্তি, ওষুধ এবং রত্নপাথর খাতের মাধ্যমে বৈশ্বিক বাণিজ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। গত ডিসেম্বরে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় সামরিক অভিযান শুরু হবার পর যুক্তরাজ্য, কানাডা ও ফ্রান্স ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিবিধ পদক্ষেপ ঘোষণা করেছে। এ পরিস্থিতিতে ইসরায়েলের বাণিজ্যিক পার্টনারদের সাথে চলমান চুক্তি ও অভিলগ্নতা পুনর্বিবেচনার প্রেক্ষাপটে এ nation-এর শীর্ষ বাণিজ্য অংশীদার এবং তাঁদের সঙ্গে কোন পণ্য কেনাবেচা হয়, তা বিশ্লেষণ করছি।
যুক্তরাজ্য–ইসরায়েল মুক্তবাণিজ্য আলোচনা
২০২২ সালের জুলাই থেকে যুক্তরাজ্য ও ইসরায়েলের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (FTA) আলোচনা শুরু হয়। এর মূল উদ্দেশ্য হলো:
- বর্তমান ইউরোপীয় ইউনিয়ন-ইসরায়েল চুক্তির আওতা বর্ধিত করা
- নতুন খাত অন্তর্ভুক্ত করে দুই দেশের পণ্য ও সেবার বিনিময় বৃদ্ধি
প্রধান ইমপোর্ট (ইসরায়েল আমদানি)
২০২৪ সালে ইসরায়েল যুক্তরাজ্য থেকে ১৯৬ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য আমদানি করেছে। শীর্ষ আমদানি পণ্যগুলো:
- জেট ইঞ্জিন ও বিমানযন্ত্রাংশ
- বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম
- ওষুধ (জেনেরিক ও ফার্মাসিউটিক্যালস)
- যান্ত্রিক যন্ত্রাংশ ও যানবাহন
প্রধান রপ্তানি (ইসরায়েল রপ্তানি)
একই বছর ইসরায়েল যুক্তরাজ্যে ১৫৭ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য রপ্তানি করেছে। সেগুলোর মধ্যে:
- হীরা ও রত্নপাথর
- রাসায়নিক পণ্য (টেভা ফার্মাসিউটিক্যালসের ওষুধসমূহ)
- ইলেকট্রনিক্স ও প্রযুক্তি যন্ত্রপাতি
- অপটিক্যাল সরঞ্জাম
এই দুই দেশের বাণিজ্য ঘাটতি সামঞ্জস্যের লক্ষ্যে এফটিএ আলোচনায় গতানুগতিক পণ্যের পাশাপাশি সেবা, বিনিয়োগ, ডিজিটাল অর্থনীতি ও কৃষি-প্রযুক্তিও অন্তর্ভুক্তির পরিকল্পনা রয়েছে।
ইসরায়েলের সামগ্রিক বাণিজ্য পরিসংখ্যান (২০২৪)
ইসরায়েলে ২০২৪ সালে মোট ৯ হাজার ১৫০ কোটি ডলার মূল্যের পণ্য আমদানি এবং ৬ হাজার ১৭০ কোটি ডলার মূল্যের পণ্য রপ্তানি হয়েছে।
শীর্ষ ৫ আমদানি পণ্য
- ইলেক্ট্রিক্যাল যন্ত্রপাতি, ইলেকট্রনিক্স ও যন্ত্রাংশ – ≈১,৯০০ কোটি ডলার
- গাড়ি, ট্রাক, বাস ও উড়োজাহাজ – ≈১,০০০ কোটি ডলার
- ওষুধ ও রাসায়নিক পণ্য – ≈৮০০ কোটি ডলার
- পেট্রোলিয়াম, কয়লা, সিমেন্ট ও খনিজ – ≈৭০০ কোটি ডলার
- রত্নপাথর ও গয়না – ≈৪০০ কোটি ডলার
শীর্ষ ৫ রপ্তানি পণ্য
- ইলেক্ট্রিক্যাল যন্ত্রপাতি, ইলেকট্রনিক্স ও যন্ত্রাংশ – ≈১,৮০০ কোটি ডলার
- ওষুধ ও রাসায়নিক পণ্য – ≈১,০০০ কোটি ডলার
- রেট্নপাথর ও গয়না (হীরা) – ≈৯০০ কোটি ডলার
- অপটিক্যাল, প্রযুক্তিগত ও চিকিৎসা-সংক্রান্ত সরঞ্জাম – ≈৭০০ কোটি ডলার
- খনিজ পণ্য – ≈৫০০ কোটি ডলার
ইলেক্ট্রনিক্স এবং রাসায়নিক খাত বিশেষ করে ইন্টেল, টেভা ফার্মা, এলবিত সিস্টেমস ও অরবোটেকের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো নেতৃত্ব দিচ্ছে।
শীর্ষ বাণিজ্য অংশীদার দেশসমূহ
যেখানে ইসরায়েল সবচেয়ে বেশি রপ্তানি করে
স্থান | দেশ | রপ্তানি (কোটি USD) | প্রধান পণ্য |
---|---|---|---|
১ | যুক্তরাষ্ট্র | ১,৭৩০ | হীরা, উচ্চপ্রযুক্তির ইলেকট্রনিক্স, আইসি, রাসায়নিক পণ্য |
২ | আয়ারল্যান্ড | ৩২০ | ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট (IC) |
৩ | চীন | ২৮০ | অপটিক্যাল সরঞ্জাম, ইলেকট্রনিক সরঞ্জাম, রাসায়নিক পণ্য |
৪ | নেদারল্যান্ডস | ২৭৪ | হীরা, রাসায়নিক, প্রযুক্তি উপকরণ |
৫ | জার্মানি | ২৩৭ | ওষুধ, গাড়ি, ইলেকট্রনিক—বিশেষ করে অটোমোটিভ প্রযুক্তি |
যেখানে ইসরায়েল সবচেয়ে বেশি আমদানি করে
স্থান | দেশ | আমদানি (কোটি USD) | প্রধান পণ্য |
---|---|---|---|
১ | চীন | ১,৯০০ | বৈদ্যুতিক গাড়ি, স্মার্টফোন, কম্পিউটার, ধাতু |
২ | যুক্তরাষ্ট্র | ৯৪০ | বিস্ফোরক সামগ্রী, চিকিৎসা যন্ত্র, রাসায়নিক পণ্য |
৩ | জার্মানি | ৫৬০ | গাড়ি, ঔষধ, ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি |
৪ | ইতালি | ৩৬২ | যন্ত্রাংশ, ফার্মাসিউটিক্যাল, নিত্যপণ্য |
৫ | তুরস্ক | ২৮৬ | গার্মেন্টস, নিকটতম প্রযুক্তি পণ্য |
বিশ্ব রাজনীতিতে বাণিজ্যের প্রভাব
- মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্থগিত: গাজার সামরিক অভিযান ও পশ্চিম তীরের বসতি সম্প্রসারণকে কেন্দ্র করে যুক্তরাজ্য গত মঙ্গল থেকে FTA আলোচনার স্থগিতাদেশ দিয়েছে।
- ইউরোপীয় ইউনিয়নের পর্যালোচনা: ইইউও ইসরায়েল–ইউরোপ বাণিজ্য সহযোগিতা চুক্তি পুনর্বিবেচনা করতে যাচ্ছে।
- ডাইভার্সিফিকেশন প্রয়োজন: নিরাপত্তা ও রাজনীতির কারণে ইসরায়েল লম্বা-মেয়াদী বাজার ও সরবরাহ চেইন বৈচিত্র্যের দিকে নজর দিচ্ছে।
এই পরিবর্তনগুলো শুধুমাত্র অর্থনীতির ওপর নয়, ভূরাজনীতিতেও বড় প্রভাব ফেলতে পারে—বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলের অবস্থান ও নিরাপত্তা নীতিতে।
ইসরায়েল তার ইলেক্ট্রনিকচিপ, ফার্মা, হীরাকলা ও উচ্চপ্রযুক্তি খাতের মাধ্যমে বৈশ্বিক বাণিজ্যে নিজের দক্ষতা প্রতিপন্ন করেছে। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, আয়ারল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, জার্মানি ও ভারত ইসরায়েলের শীর্ষ বাণিজ্য অংশীদার, যেখানে দুপক্ষই গুরুত্বপূর্ন পণ্য আমদানি-রপ্তানি করে। বর্তমান রাজনৈতিক উত্তেজনা ও নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও এই বাজারগুলো ভবিষ্যতে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের মূল চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করবে।
বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল রাষ্ট্রেরও ইসরায়েলি প্রযুক্তি, কৃষি-প্রযুক্তি ও স্বাস্থ্যসেবা খাত থেকে শেখার সুযোগ রয়েছে। দোভাষিয়ানা পদ্ধতিতে বিনিয়োগ ও যুক্তরাষ্ট্র-ইউরোপ-ইসরায়েল চুক্তি থেকে উদ্ভূত সুবিধা গ্রহণের পরিকল্পনা গ্রহণ করলে, আমদানিকারক দেশগুলো নতুন সুযোগ তৈরি করতে পারবে।