খেলা

আইপিএলের স্বপ্ন দেখিয়ে ২৪ লাখ রুপি আত্মসাৎ: প্রতারক চক্রের ফাঁদে কর্ণাটকের তরুণ ক্রিকেটার

আইপিএলে খেলার স্বপ্ন অনেক তরুণ ক্রিকেটারেরই থাকে। সেই স্বপ্নকেই কাজে লাগিয়ে প্রতারণার জাল বিছিয়েছে এক সাইবার চক্র। কর্ণাটকের ১৯ বছর বয়সী একজন উদীয়মান ক্রিকেটারকে আইপিএলে খেলার লোভ দেখিয়ে প্রায় ২৪ লাখ রুপি হাতিয়ে নিয়েছে এই চক্রটি।

ঘটনাটি ঘটেছে কর্ণাটকের বেলাগাভি জেলার চিনচানি গ্রামে। প্রতারণার শিকার ক্রিকেটারের নাম রাকেশ ইয়াদুরে। গত বছর মে মাসে হায়দরাবাদে অনুষ্ঠিত এক টুর্নামেন্টে রাকেশের পারফরম্যান্স স্থানীয় নির্বাচকদের নজর কাড়ে। এর পর থেকেই পেশাদার ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন বড় হয়ে ওঠে তাঁর মনে।

ইনস্টাগ্রামেই শুরু প্রতারণার সূত্রপাত

২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে রাকেশ ইনস্টাগ্রামে একটি বার্তা পান, যেখানে দাবি করা হয় তিনি রাজস্থান রয়্যালস দলের জন্য নির্বাচিত হয়েছেন। বার্তায় তাঁকে বলা হয়, দলে জায়গা নিশ্চিত করতে হলে ২০০০ রুপি দিয়ে একটি নিবন্ধন ফরম পূরণ করতে হবে। তরুণ রাকেশ পুরো বিষয়টি সত্য ভেবে নির্দেশ মতো কাজ করেন।

কিন্তু এটাই ছিল প্রতারণার শুরু। এরপর ২২ ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়, বিভিন্ন অজুহাতে রাকেশকে মোট ২৩ লাখ ৫৩ হাজার রুপি দিতে বাধ্য করা হয়।

চক্রটি তাঁকে লোভ দেখায় ম্যাচপ্রতি ৪০ হাজার থেকে ৮ লাখ রুপি পারিশ্রমিক দেওয়ার। সেই আশায় রাকেশ একে একে প্রতারকদের সব দাবি মেনে নেন।

প্রতিশ্রুতি রক্ষা হয়নি, উল্টো নতুন দাবি

রাকেশ প্রতারকদের কাছ থেকে রাজস্থান রয়্যালসের অফিসিয়াল জার্সি, কিট ব্যাগ কিংবা প্লেনের টিকিট কিছুই পাননি। বরং যখন তাঁর কাছ থেকে আরও তিন লাখ রুপি চাওয়া হয়, তখন বিষয়টি তাঁর কাছে সন্দেহজনক ঠেকে।

সবশেষে প্রতারক চক্র রাকেশকে সব যোগাযোগ প্ল্যাটফর্মে ব্লক করে দেয়। যদিও একটি নম্বর থেকে এখনো মাঝে মাঝে বার্তা আসছে, তবে সেই নম্বরে রাকেশ যোগাযোগ করতে পারছেন না।

পুলিশি তদন্ত শুরু, রাজস্থানে মোতায়েন সাইবার টিম

রাকেশ এরপর বেলাগাভি কেন্দ্রীয় পুলিশ স্টেশনে প্রতারণার অভিযোগ দায়ের করেন। তদন্তে নামে স্থানীয় পুলিশ। বেলাগাভির পুলিশ সুপার ভীমাশঙ্কর গুলেদ জানিয়েছেন, প্রতারক চক্র খুব দ্রুততার সঙ্গে রাকেশের অর্থ তুলে নিয়েছে এবং ব্যাংক হিসাবগুলো এখন খালি পড়ে আছে।

তিনি বলেন, “প্রাথমিক সূত্র বলছে প্রতারকদের অবস্থান রাজস্থানে। তাই আমরা সেখানে একটি সাইবার টিম মোতায়েন করছি।”

পুলিশ আরও জানায়, রাকেশের বাবা কর্ণাটক সড়ক পরিবহন করপোরেশনের একজন নিরাপত্তাকর্মী। বহু কষ্টে জমানো অর্থ ছেলের হাতে তুলে দিয়েছিলেন তিনি, যা প্রতারকরা আত্মসাৎ করেছে।

ভুক্তভোগীর আহ্বান: “আমার ভুল যেন আর কেউ না করে”

রাকেশ এখন নিজের অর্থ ফিরে পাওয়ার অপেক্ষায়। তিনি বলেন, “আমি আশা করি পুলিশ আমার অর্থ উদ্ধার করে দেবে। আমি যে অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে গেছি, তা যেন আর কোনো তরুণ ক্রিকেটারের জীবনে না ঘটে। কেউ যদি আইপিএলে খেলার প্রলোভনে এভাবে প্রতারিত হয়, সেটা খুবই কষ্টদায়ক।”

এই ঘটনা থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা পাওয়া যায়—কোনো অফিশিয়াল বা স্বীকৃত সূত্র ছাড়া আইপিএলের মতো বড় টুর্নামেন্টে খেলার প্রলোভনে পড়ে অর্থ লেনদেন করা উচিত নয়।

সাইবার অপরাধীদের ধরতে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে, তবে এ ধরনের প্রতারণা রোধে তরুণদের পাশাপাশি অভিভাবকদেরও সচেতন হওয়া জরুরি।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button