বাংলাদেশের ‘চিকেনস নেক’ নিয়ে আসামের মুখ্যমন্ত্রীর হুমকি

আসাম, ভারত – আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা সম্প্রতি বাংলাদেশের প্রতি কড়া বার্তা দিয়েছেন, যেখানে তিনি সতর্ক করে বলেন, যদি বাংলাদেশ ভারতের কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ শিলিগুড়ি করিডর বা ‘চিকেনস নেক’ আক্রমণ করে, তাহলে ভারত বাংলাদেশের দুটি ‘চিকেনস নেক’ লক্ষ্য করে পাল্টা আঘাত হানবে।
কী এই ‘চিকেনস নেক’?
‘চিকেনস নেক’ বা শিলিগুড়ি করিডর হলো ভারতের মূল ভূখণ্ডকে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাতটি রাজ্যের সঙ্গে সংযুক্তকারী একটি সরু ভূখণ্ড, যার প্রস্থ প্রায় ২২ কিলোমিটার। এই করিডর ভারতের জন্য কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোর সঙ্গে সংযোগ রক্ষা করে।
বাংলাদেশের ‘দুটি চিকেনস নেক’
হিমন্ত বিশ্ব শর্মা দাবি করেন, বাংলাদেশের দুটি ‘চিকেনস নেক’ রয়েছে। প্রথমটি দক্ষিণ ত্রিপুরার সাব্রুম থেকে বাংলাদেশের মিরসরাই পর্যন্ত, যা চট্টগ্রাম বন্দরকে দেশের বাকি অংশের সঙ্গে সংযুক্ত করে। দ্বিতীয়টি মেঘালয়ের দক্ষিণ-পশ্চিম গারো পাহাড় থেকে পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ দিনাজপুরের মধ্যে অবস্থিত, যার দৈর্ঘ্য প্রায় ৯০ কিলোমিটার।
চীনের ভূমিকা ও লালমনিরহাট বিমানঘাঁটি
সম্প্রতি খবর পাওয়া গেছে যে, চীন বাংলাদেশের লালমনিরহাটে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার একটি পুরোনো বিমানঘাঁটি পুনরুজ্জীবিত করতে সাহায্য করছে। এই বিমানঘাঁটি ভারতের শিলিগুড়ি করিডর থেকে মাত্র ১৩৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। চীনা কর্মকর্তারা সম্প্রতি এই স্থান পরিদর্শন করেছেন, যা ভারতের জন্য নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মুহাম্মদ ইউনূসের মন্তব্য ও ভারতের প্রতিক্রিয়া
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস সম্প্রতি চীন সফরের সময় ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাতটি রাজ্যকে ‘ভূবেষ্টিত’ উল্লেখ করে বলেন, বাংলাদেশ এই অঞ্চলের ‘সমুদ্রের একমাত্র অভিভাবক’। তিনি চীনকে বাংলাদেশে অর্থনৈতিক ভিত্তি স্থাপনের আহ্বান জানান, যা ভারতের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
ভারতের সামরিক শক্তি ও ‘অপারেশন সিঁদুর’
হিমন্ত বিশ্ব শর্মা ভারতের সামরিক শক্তির কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘বাংলাদেশ একটি ছোট দেশ। তাদের গুরুত্ব দেওয়ার কিছু নেই।’ তিনি বিশেষ করে ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর কথা উল্লেখ করেন, যা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের সাফল্যপূর্ণ সামরিক অভিযান ছিল।
ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা
এই ঘটনাগুলো দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। চীনের প্রভাব বৃদ্ধি, বাংলাদেশের কৌশলগত অবস্থান, এবং ভারতের নিরাপত্তা উদ্বেগ এই অঞ্চলের স্থিতিশীলতার জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সংলাপ এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করা প্রয়োজন, যাতে উভয় দেশের নিরাপত্তা ও স্বার্থ রক্ষা করা যায়।