বানিজ্য

আখাউড়া–আগরতলা পথে মাছ রফতানি বন্ধ, ব্যাংকিং জটিলতায় রপ্তানি অবরুদ্ধ

ভারত সরকারের ছয় পণ্য নিষেধাজ্ঞা ও ব্যাংকিং জটিলতার কারণে আখাউড়া–আগরতলা স্থলবন্দর দিয়ে হিমায়িত মাছ রফতানি বন্ধ। আঞ্চলিক ব্যবসায় স্থবিরতা, ক্ষতির পরিসংখ্যান ও দ্রুত সমাধানের দাবি শোনুন।

বাংলাদেশ ও ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় বাণিজ্যের অন্যতম জীবন্ত সেতু আখাউড়া–আগরতলা স্থলবন্দরে বুধবার (২১ মে) থেকে মাছ রফতানি বন্ধ রয়েছে। মৎস্য রফতানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. ফারুক মিয়া নিশ্চিত করেছেন, এক্সপোর্ট পারমিট (ইএসপি) জমা ও ব্যাংকিং প্রসেসিংয়ের জটিলতার কারণে তারা হিমায়িত মাছ আগরতলায় পাঠাতে পারছেন না।

এই সমস্যার সাথে একযোগে আবির্ভূত ভারত সরকারের ছয়টি পণ্যে স্থলপথে আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপের সিদ্ধান্ত আখাউড়া বন্দরের বাণিজ্যিক গতিশীলতাকে আরও জটিল করে তুলেছে। বন্ধের একদিনে ব্যবসায়ীরা শঙ্কায় পড়েছেন—যে পথে প্রতিদিন ৪০–৪৫ লাখ টাকার মাছ-সহ পণ্য রফতানি হতো, এখন সে গতি সম্পূর্ণ থমকে গেছে।

ব্যাকগ্রাউন্ড: আখাউড়া স্থলবন্দর ও রপ্তানি পরিসংখ্যান

প্রতিদিনই আখাউড়া দিয়ে হিমায়িত মাছ, সিমেন্ট, ভোজ্যতেল, প্লাস্টিক পণ্য, পিভিসি সামগ্রী, চিপস, বিস্কুট, ফলের জুস ও তুলা-সহ বিভিন্ন পণ্য ভারতে রফতানি হয়ে থাকে।

  • ২০২৩–২৪ অর্থবছরে এই বন্দরের মাধ্যমে ভারতে রফতানি হয় ৪২৭ কোটি ৮৮ লাখ ৭২ হাজার ৪৩০ টাকার পণ্য।
  • চলতি অর্থবছরের (জুলাই–এপ্রিল) রপ্তানি দাঁড়িয়েছে ৪৫৩ কোটি ১ লাখ ৯৬ হাজার ৭৯৩ টাকায়।

এই বন্দরের গুরুত্ব শুধু পরিমাণে নয়—ভারতের ত্রিপুরা, মেঘালয়, মিজোরাম, মানিপুর, শিলিগুড়িআসাম, মেঘালয়ের অন্যান্য অংশে সরবরাহের মাধ্যম হিসেবে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিপণনের প্রধান চ্যানেল।

বর্তমান সংকট: মাছ রফতানি বন্ধের কারণ

কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও ইএসপি জটিলতা

  • মৎস্য রফতানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. ফারুক মিয়া বলেন, “এখানে মাছ রফতানির জন্য এক্সপোর্ট স্টক রেজিস্ট্রেশন পারমিট (ইএসপি) জমা দিয়ে ব্যাংকিং মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেন সম্পন্ন করতে হয়। সরকারের সার্ভার ও ব্যাংক কর্তৃপক্ষের স্বয়ংক্রিয় বা ম্যানুয়াল প্রক্রিয়ায় বিঘ্নের কারণে ইএসপি প্রসেস আপডেট না হওয়ায় রফতানি স্থবির হয়েছে।”

ভারত সরকারের নিষেধাজ্ঞা

  • গত সপ্তাহে ভারত হঠাৎ করে ঘোষণা করেছে, বাংলাদেশ থেকে স্থলপথে ছয়টি পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। যদিও মুক্তবাজারে ধানের চাল, রড, সিমেন্ট, ভোজ্যতেল ইত্যাদি পণ্য রফতানি অব্যাহত রাখা হয়েছে, এর ফলেসরিষা, লিচু, কিছু ফলমূল ও মাছ–এর মতো পণ্যগুলো আপাতত বাধাগ্রস্ত হয়েছে।

ব্যবসায়ীদের ক্ষতির পরিমাণ ও প্রভাব

স্থলবন্দরে প্রায় ৪০–৪৫ লাখ টাকা মূল্যের হিমায়িত মাছ প্রতিবছর পাঠানো হতো। বন্ধের একদিনেই প্রায় আড়াই কোটি টাকার লেনদেন থমকে গেছে। স্থলবন্দরের সহকারী পরিচালক মাহমুদুল হাসান জানান,

“আজ থেকে কোনো মাছের ডেলিভারি আসেনি, সিমেন্ট ও তেল নিয়ে ১১টি গাড়ি এলেও মাছ রফতানি বন্ধ।”

ব্যবসায়ীরা শঙ্কায় পড়েছেন, কারণ ভারতে ভারতের উৎপাদন, বাজারজাতকরণ ও উপভোক্তা চাহিদা অত্যন্ত উচ্চ। এ ছাড়া রফতানি বন্ধ থাকলে…

  • ক্যাশ ফ্লো বিপর্যস্ত হবে
  • ফেরত জালানির ঝুঁকি বাড়বে
  • ভারতীয় পাইকারী দরে বাংলাদেশের স্থানীয় দাম হঠাৎ কমে যেতে পারে

দুভাবাপন্ন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান

পাশাপাশি দেশদুটির কূটনৈতিক টানাপোড়েনও এর পেছনে অন্যতম কারণ।

  • এই মাসের শুরুতে ঢাকায় ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ বেশ আলোড়ন তুলেছে।
  • ভারত তার দূতাবাসের নিরাপত্তার ভিত্তিতেই নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছে বলেই মনে করেন ব্যবসায়ীরা।

প্রান্তিকের দাবি

  • ব্যবসায়ীরা দ্রুত দপ্তরীয় পর্যায়ে আলোচনা শুরু করে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন।
  • মো. ফারুক মিয়া বলেন, “সমস্যা সমাধান হলেই আগামীকাল সকাল থেকে রফতানি ফের স্বাভাবিক হবে।”

সম্ভাব্য সমাধান ও সুপারিশসমূহ

খাত-specific task force

  • মৎস্য রফতানি task force গঠন করে ইএসপি ও ব্যাংক প্রসেস স্ট্রিমলাইন করতে হবে।
  • সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিটিআরসি, বিএসসিপিএলব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়মিত নৈরাজ্য আলোচনায় বসতে হবে।

কূটনৈতিক উদ্যোগ

  • বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দ্রুত ভারতীয় বাণিজ্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকের সঙ্গে কথা বলে নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার চুক্তি করতে পারে।
  • উভয় দেশের চার্টার্ড কমার্স গোষ্ঠী মধ্যে নিয়মিত সভা আয়োজন করা প্রয়োজন।

বিকল্প রুট

  • আখাউড়া ছাড়াও বেঙ্গলুৰু–আজয়া সাধারণ রুট, বেঁকেয়া নৌ-মার্গ ইত্যাদি বিকল্প বাজারে প্রবেশ করানোর প্রস্তুতি নেওয়া যেতে পারে।

আখাউড়া–আগরতলা পাথের মাছ রফতানি বন্ধের ঘটনায় স্পষ্ট হয়ে দাঁড়িয়েছে—নির্ভরযোগ্য ফরোয়ার্ডিং প্রসেস না থাকলে আঞ্চলিক বাণিজ্য অচল হয়ে পড়ে। দ্রুত বাধা উন্মোচন না করলে, শুধুমাত্র মৎস্যখাত নয়, সিমেন্ট, ভোজ্যতেল, প্লাস্টিকতুলা-এর মতো পণ্যের রপ্তানি অব্যাহত রাখা কঠিন হবে।

সরকার ও সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের দ্রুত সমন্বিত প্রয়াস দরকার, যাতে আখাউড়া বন্দরের গুরুত্ব অক্ষুণ্ণ থাকে এবং স্থানীয় ব্যবসায়ীরা অসাবধানতার কারণে ক্ষতির মুখে পড়তে না হয়।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button