জাতীয়

জামালপুরে ভিজিএফের ১০২ বস্তা চাল উদ্ধার, গুদাম মালিক পলাতক

জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে এক ব্যবসায়ীর গুদাম থেকে ঈদ উপলক্ষে গরিবদের জন্য বরাদ্দকৃত ভিজিএফের ১০২ বস্তা চাল জব্দ করেছে যৌথ বাহিনী। অভিযুক্ত আলী হোসেন পলাতক, বিস্তারিত জানুন।

জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার পিংনা ইউনিয়নের বাশুরিয়া মোড় এলাকায় একটি গুদাম থেকে গরিব ও দুস্থদের জন্য বরাদ্দকৃত ঈদ উপহারের ভিজিএফ (ভালনারেবল গ্রুপ ফিডিং) কর্মসূচির ১০২ বস্তা চাল জব্দ করেছে যৌথ বাহিনী। এই চাল মজুত করেছিলেন স্থানীয় এক চাল ব্যবসায়ী, যিনি বর্তমানে পলাতক।

কী ঘটেছে?

সোমবার (১৯ মে) রাত ১১টার দিকে পুলিশের নেতৃত্বে পরিচালিত অভিযানে বাশুরিয়া বাজারের চাল ব্যবসায়ী আলী হোসেনের গুদাম থেকে এসব চাল জব্দ করা হয়। প্রত্যেক বস্তায় ছিল ৫০ কেজি করে চাল। জব্দকৃত চালগুলো গরিব ও অসহায় পরিবারদের মাঝে ঈদ উপলক্ষে বিতরণের জন্য সরকারিভাবে বরাদ্দ করা হয়েছিল।

তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, এসব চাল সরকারিভাবে বিতরণের পরিবর্তে অসৎভাবে মজুত করে রেখেছিলেন আলী হোসেন। অভিযানের আগ মুহূর্তেই তিনি পালিয়ে যান।

গুদাম থেকে উদ্ধার ও আইনগত পদক্ষেপ

চালগুলো উদ্ধার করে সরিষাবাড়ী উপজেলার তারাকান্দি পুলিশ তদন্তকেন্দ্রে সংরক্ষণে রাখা হয়েছে। এ বিষয়ে সরিষাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাশেদুল হাসান বলেন, “এ ঘটনায় থানায় একটি মামলা করা হয়েছে। পলাতক আসামিকে ধরতে অভিযান চলছে। খুব শিগগিরই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হবে।”

স্থানীয় প্রতিক্রিয়া

স্থানীয় জনগণ ও জনপ্রতিনিধিরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “যাদের জন্য সরকার চাল দিচ্ছে, সেই চাল কেউ নিজের গুদামে রাখবে—এটা খুবই দুঃখজনক। গরিব মানুষ ঈদের আগে চাল পাচ্ছে না, অথচ ব্যবসায়ী গুদামে রেখে বিক্রির চেষ্টা করছিলেন।”

ভিজিএফ কী?

ভিজিএফ বা ভালনারেবল গ্রুপ ফিডিং কর্মসূচি হচ্ছে একটি সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রম, যার মাধ্যমে সরকার প্রতি বছর ঈদ ও অন্যান্য উৎসব উপলক্ষে গরিব, অসহায় ও দুস্থ জনগণের মাঝে বিনামূল্যে চাল বিতরণ করে। প্রতিবার সাধারণত ১০ কেজি করে চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। সরকারি এ ধরনের সাহায্য সামগ্রী কেউ ব্যক্তিগতভাবে সংগ্রহ বা বিক্রির উদ্দেশ্যে মজুত করলে তা ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়।

দুর্নীতি ও জবাবদিহিতা

এই ঘটনা আবারও তুলে ধরেছে ভিজিএফের মতো গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচিতে দুর্নীতির আশঙ্কাজনক দিক। যদিও সরকার প্রতিবছর ঈদের আগে দুস্থদের সহায়তায় চাল বিতরণের ব্যবস্থা নেয়, স্থানীয় পর্যায়ে কিছু অসাধু ব্যক্তি এসব চাল হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে এইসব ঘটনার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়ার দাবি জানাচ্ছেন সচেতন মহল।

সরকারিভাবে বরাদ্দকৃত ভিজিএফের চাল মজুত করে রাখা এবং জনগণের প্রাপ্য অধিকার হরণ করা যে কোনো সমাজের জন্য হুমকিস্বরূপ। জামালপুরের এই ঘটনাটি শুধুমাত্র একজন ব্যক্তির অপরাধ নয়, বরং গোটা বিতরণ ব্যবস্থার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার প্রশ্নও তুলে ধরেছে। এই ঘটনার দ্রুত তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করাই এখন জরুরি।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button