বিশ্ব

দুর্ভিক্ষের ‘মারাত্মক ঝুঁকিতে’ গাজার ২১ লাখ বাসিন্দা, ভয়াবহ খাদ্যসংক

ইসরায়েলি অবরোধে তীব্র খাদ্যসংকটে পড়েছে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণ সংস্থা আইপিসি (Integrated Food Security Phase Classification) জানিয়েছে, সেখানে ২১ লাখ মানুষ এখন দুর্ভিক্ষের মারাত্মক ঝুঁকিতে, যাদের মধ্যে শিশু ও কিশোরদের অবস্থা সবচেয়ে করুণ।

তীব্র খাদ্যসংকটে গাজাবাসী

আইপিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, গাজার ৯৩ শতাংশ জনগণ বর্তমানে উচ্চমাত্রার খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। এর মধ্যে ২ লাখ ৪৪ হাজার মানুষ এমন অবস্থায় আছেন, যাকে আইপিসি ‘বিপর্যয়কর খাদ্যসংকট’ হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করেছে।

গাজায় চলমান মানবিক সংকটকে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ খাদ্যসংকট হিসেবে আখ্যায়িত করেছে সংস্থাটি।

শিশুদের ভবিষ্যৎ ভয়াবহ ঝুঁকিতে

প্রতিবেদনে বিশেষভাবে শিশুদের অবস্থা তুলে ধরা হয়েছে। বলা হয়েছে, যদি এই সংকট চলতে থাকে, তাহলে ২০২৬ সালের এপ্রিলের মধ্যে পাঁচ বছরের কম বয়সী অন্তত ৭১ হাজার শিশু ভয়াবহ পুষ্টিহীনতায় আক্রান্ত হবে। এটি একটি প্রজন্মকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিতে পারে।

খাবারের জন্য ভিক্ষা ও আবর্জনা খোঁজা

খাদ্যের জন্য গাজাবাসীদের মরিয়া চেষ্টার বর্ণনা দিতে গিয়ে আইপিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে:

“অনেক পরিবার আজ খাবারের জন্য ভিক্ষা করছে। কেউবা আবর্জনার স্তূপ থেকে কিছু সংগ্রহ করে তা বিক্রি করে খাবার জোটাচ্ছে।”

এমন পরিস্থিতি আধুনিক সভ্যতায় অবর্ণনীয় মানবিক বিপর্যয়ের চিত্র ফুটিয়ে তোলে।

যুদ্ধবিরতি ভঙ্গের পর দ্রুত অবনতি

২০২৪ সালের জানুয়ারিতে যুদ্ধবিরতির সময় কিছুটা ত্রাণ সহায়তা গাজায় প্রবেশের সুযোগ তৈরি হলেও, দুই মাসের মধ্যেই ইসরায়েল আবার হামলা শুরু করে। এর ফলে গাজায় মানবিক অবস্থা দ্রুত অবনতির দিকে যায়।

বর্তমানে ত্রাণ ঢুকতে না দেওয়ার কৌশল এবং চলমান অবরোধ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি জরুরি আহ্বান

আইপিসি তাদের প্রতিবেদনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। বিশেষ করে শিশুদের রক্ষা এবং বৃহত্তর দুর্ভিক্ষ এড়ানোর জন্য তড়িৎ মানবিক সহায়তা দরকার বলেই জানিয়েছে তারা।

জাতিসংঘ, রেডক্রস, ডব্লিউএফপি, ইউনিসেফসহ বিভিন্ন সংস্থা ইতোমধ্যেই পরিস্থিতিকে ‘Code Red’ হিসেবে ঘোষণা করেছে।

আগের তুলনায় খারাপ অবস্থা

গত বছর অক্টোবরেও গাজার খাদ্যসংকট নিয়ে একটি মূল্যায়ন দিয়েছিল আইপিসি। তখনকার তুলনায় এখনকার অবস্থা আরও খারাপ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “২০২৪ সালের তুলনায় এখন গাজার প্রতিটি পরিবারে অসহনীয় চাপ এবং চরম দুর্দশা নেমে এসেছে। সব বয়সের মানুষ ক্ষুধা, অপুষ্টি ও মানসিক চাপের শিকার।”

মানবতার চরম পরীক্ষা

গাজার খাদ্যসংকট শুধু একটি যুদ্ধের পরিণতি নয়, এটি বিশ্বসম্প্রদায়ের নীরবতারও ফল।
একটি পুরো জনগোষ্ঠী, বিশেষ করে শিশু ও নারীরা, আজ ক্ষুধা ও মৃত্যুর প্রহর গুনছে।
এই পরিস্থিতিতে মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করতে অবিলম্বে পদক্ষেপ না নিলে, ইতিহাসের ভয়াবহতম দুর্ভিক্ষগুলোর একটি হতে পারে এটি।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button