অর্থনীতি

আওয়ামী লীগের নিষেধাজ্ঞায় উদ্বেগ জানালো ভারত

বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ভারত। মঙ্গলবার (১৩ মে) নয়াদিল্লিতে এক নিয়মিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেন, এই সিদ্ধান্ত গ্রহণে উপযুক্ত কোনো আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি, যা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের পরিপন্থী।

তিনি বলেন, “গণতান্ত্রিক সমাজে রাজনৈতিক স্বাধীনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে এ ধরনের সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক পরিসরে সংকীর্ণতা তৈরি করতে পারে এবং আমরা এতে উদ্বিগ্ন। বাংলাদেশের জনগণ যাতে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে তাদের মত প্রকাশের সুযোগ পায়, সেজন্য দ্রুত নির্বাচন আয়োজনের আহ্বান জানাচ্ছি।”

এর আগে গতকাল সোমবার সরকার একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে আওয়ামী লীগসহ এর অঙ্গ, সহযোগী এবং ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সব ধরনের রাজনৈতিক কার্যক্রম বিচার প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের রাজনৈতিক শাখা-২ থেকে জারি করা ওই প্রজ্ঞাপনে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান মামলার প্রসঙ্গ উল্লেখ করা হয়।

পরে, নির্বাচন কমিশনও (ইসি) আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন (নম্বর-০০৬, তারিখ: ০৩/১১/২০০৮) স্থগিত করে পৃথক একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। এতে বলা হয়, বিচারাধীন অবস্থায় দলটির কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ায় সাংবিধানিক কাঠামোর আলোকে নিবন্ধন স্থগিত করা হয়েছে।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল আরও বলেন, “আমরা গভীরভাবে বিশ্বাস করি, রাজনৈতিক প্রক্রিয়া এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা উচিত। বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা আশা করি, বাংলাদেশ সরকার এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।”

তিনি আরও বলেন, “ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর এবং বন্ধুত্বপূর্ণ। আমরা বাংলাদেশের জনগণের শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং সমৃদ্ধি কামনা করি। আমরা আশা করি, বাংলাদেশে দ্রুত একটি স্বচ্ছ এবং অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে জনগণ তাদের পছন্দের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারবে।”

এদিকে, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এই নিষেধাজ্ঞার তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। দলের সাধারণ সম্পাদক এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “সরকারের এই সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আমরা অবিলম্বে এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি। আমরা আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাব।”

তিনি আরও বলেন, “সরকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মামলার অজুহাতে আমাদের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেছে। কিন্তু এই মামলাগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং এর মাধ্যমে আমাদের দলকে দুর্বল করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা বিশ্বাস করি, জনগণ আমাদের সঙ্গে আছে এবং তারা এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হবে।”

বিভিন্ন রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করছেন, সরকারের এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলবে। তারা বলছেন, একটি প্রধান রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের পরিপন্থী এবং এর ফলে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়তে পারে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. কামাল হোসেন বলেন, “সরকারের এই সিদ্ধান্ত অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় রাজনৈতিক দলগুলোর কার্যক্রম অবাধ হওয়া উচিত। এই নিষেধাজ্ঞা দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও অস্থিতিশীল করে তুলবে এবং এর ফলে আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হবে।”

তিনি আরও বলেন, “সরকারের উচিত অবিলম্বে এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। জনগণের মতামতকে সম্মান জানানো এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বজায় রাখা সরকারের দায়িত্ব।”

এদিকে, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা এই নিষেধাজ্ঞার নিন্দা জানিয়েছে এবং সরকারের প্রতি অবিলম্বে এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এক বিবৃতিতে বলেছে, “রাজনৈতিক দলগুলোর কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা মানবাধিকারের লঙ্ঘন। সরকারের উচিত অবিলম্বে এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা এবং রাজনৈতিক দলগুলোকে তাদের কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ দেওয়া।”

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এক বিবৃতিতে বলেছে, “বাংলাদেশের সরকারের এই সিদ্ধান্ত অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এটি গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের পরিপন্থী এবং এর ফলে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়তে পারে। আমরা সরকারের প্রতি অবিলম্বে এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আহ্বান জানাচ্ছি।”

বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক মহল গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। তারা আশা করছে, সরকার দ্রুত একটি সুষ্ঠু এবং অবাধ নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে, যেখানে জনগণ তাদের পছন্দের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারবে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button