খেলাফুটবল

ভুটানকে হারিয়ে সেমিফাইনালে বাংলাদেশ

সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের মাধ্যমে সেমিফাইনালের টিকিট নিভুটানকে হারিয়ে সেমিফাইনালে বাংলাদেশ
তিপক্ষ ভুটানকে ৩-০ গোলে উড়িয়ে দেয় লাল-সবুজের তরুণরা। এই জয়ে গ্রুপে শীর্ষস্থান ধরে রাখার সম্ভাবনাও জোরালো করে তুলেছে তারা।

এর আগে নিজেদের প্রথম ম্যাচে মালদ্বীপের বিপক্ষে ২-২ গোলের ড্র করেছিল বাংলাদেশের যুবারা। ফলে ভুটানের বিপক্ষে জয় ছিল অপরিহার্য, এবং সেই চ্যালেঞ্জে দুর্দান্তভাবে応 করেছে কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনের শিষ্যরা।

প্রথমার্ধেই জয় নিশ্চিতের ভিত্তি

ম্যাচের শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে খেলতে দেখা যায় বাংলাদেশ দলকে। বল পজিশনে আধিপত্য বজায় রেখেই খেলাটি শুরু করে তারা। ম্যাচের মাত্র ১৩ মিনিটেই গোলের দেখা পায় বাংলাদেশ। অধিনায়ক নাজমুল হুদা মাঝমাঠ থেকে দারুণ এক থ্রু পাস বাড়ান, যা নিখুঁতভাবে নিয়ন্ত্রণ করে জালে পাঠান মুর্শেদ আলী। অসাধারণ ফিনিশিংয়ে প্রতিপক্ষ গোলরক্ষককে কোনো সুযোগই দেননি এই ফরোয়ার্ড।

প্রথম গোলের রেশ কাটতে না কাটতেই আরও একবার ভুটানের রক্ষণভাগকে ব্যতিব্যস্ত করে তোলে লাল-সবুজের আক্রমণভাগ। ২৫তম মিনিটে মুর্শেদ আলীর অ্যাসিস্ট থেকে সুমন সরেন জোরালো শটে বল পাঠান জালে। ফলে ২-০ গোলের লিড নিয়ে প্রথমার্ধ শেষ করে বাংলাদেশ। প্রথমার্ধেই কার্যত ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় তারা।

দ্বিতীয়ার্ধে জমাট রক্ষণ, শেষে নাজমুলের গোল

দ্বিতীয়ার্ধে ঘুরে দাঁড়াতে চেয়েছিল ভুটান। কয়েকটি আক্রমণ তারা সাজিয়েছিলও। তবে বাংলাদেশ দলের রক্ষণভাগ ছিল অত্যন্ত সুশৃঙ্খল ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। সেন্টারব্যাক জোবায়ের ও ডিফেন্ডার মাহিনের নেতৃত্বে রক্ষণভাগ কঠিন প্রতিরোধ গড়ে তোলে।

ম্যাচের শেষদিকে এসে বাংলাদেশের কাপ্তান নাজমুল হুদা নিজেই গোলের দেখা পান। ৮৪তম মিনিটে বক্সের ঠিক বাইরে থেকে নেওয়া দূরপাল্লার শটে ভুটানের জালে তৃতীয়বারের মতো বল জড়ান তিনি। এতে নিশ্চিত হয়ে যায় বাংলাদেশের জয়। ম্যাচের বাকি সময়ে আর কোনো দলই উল্লেখযোগ্য সুযোগ তৈরি করতে পারেনি।

দলগত পারফরম্যান্সে উজ্জ্বল বাংলাদেশ

এই ম্যাচে বাংলাদেশের খেলা ছিল চোখে পড়ার মতো। তিনটি গোলই এসেছে দলগত প্রচেষ্টার মাধ্যমে। মিডফিল্ডে ছিল ভারসাম্য, উইং থেকে ক্রস ও পাসিং ছিল সঠিক, এবং ফরোয়ার্ডদের ফিনিশিং দক্ষতাও প্রশংসনীয়। বিশেষ করে অধিনায়ক নাজমুল হুদা ও মুর্শেদ আলীর পারফরম্যান্স ছিল দুর্দান্ত। তাদের মধ্যে বোঝাপড়া ও পাসিং-সমন্বয় ছিল ম্যাচজয়ী উপাদান।

এছাড়াও গোলরক্ষক রাজীবও ছিলেন নির্ভরযোগ্য। দ্বিতীয়ার্ধে ভুটানের দুটি নিশ্চিত গোলের সুযোগ দক্ষতার সঙ্গে প্রতিহত করেন তিনি। পুরো ম্যাচে বাংলাদেশ দল একত্রে একটি ইউনিট হিসেবেই খেলেছে, যার ফলাফল ফুটে উঠেছে স্কোরলাইনে।

সেমিফাইনালের অপেক্ষায় বাংলাদেশ

এই জয়ের ফলে দুই ম্যাচে ৪ পয়েন্ট নিয়ে আপাতত গ্রুপের শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ। মালদ্বীপ ও ভুটানের মধ্যকার শেষ ম্যাচের ফলাফলের ওপর নির্ভর করছে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার বিষয়টি। যদি সেই ম্যাচটি ড্র হয়, তবে বাংলাদেশই হবে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন। তবে যদি মালদ্বীপ জয় পায়, তবে দুই দলের পয়েন্ট সমান হবে—সেক্ষেত্রে গোল ব্যবধান হিসেবেই নির্ধারিত হবে চ্যাম্পিয়নশিপ।

বাংলাদেশের কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন ম্যাচ শেষে বলেন, “ছেলেরা আজ পরিকল্পনা মতো খেলেছে। প্রথম থেকেই আমরা প্রতিপক্ষের উপর চাপ সৃষ্টি করি এবং তা ধরে রেখেই ম্যাচ জয় করেছি। সেমিফাইনালেও আমরা একইভাবে খেলার চেষ্টা করব।”

ভবিষ্যতের সম্ভাবনা ও প্রস্তুতি

বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টগুলোতে নিয়মিত অংশগ্রহণ করছে। তবে এবারকার দলটিতে রয়েছে প্রতিভার ছাপ, যেটা তাদের খেলায় স্পষ্ট। শুধু স্কোরলাইন নয়, খেলার ধারাবাহিকতায়ও দেখা যাচ্ছে একটি পরিণত দলের প্রতিচ্ছবি।

সাফ টুর্নামেন্টের সেমিফাইনাল অনেকটা চ্যালেঞ্জিং হতে চলেছে। সম্ভাব্য প্রতিপক্ষ হিসেবে থাকছে শক্তিশালী ভারত বা নেপাল। তবে দলীয় আত্মবিশ্বাস ও বর্তমানে যে ছন্দে বাংলাদেশ রয়েছে, তাতে করে শিরোপার স্বপ্ন দেখাটা অমূলক নয়।

আগামী ম্যাচের আগে দলের বিশ্রাম ও পুনরায় কৌশল নির্ধারণ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। ফিজিক্যাল কন্ডিশন, মনোবল এবং রোটেশন স্কিম—সব কিছু বিবেচনায় রেখেই মাঠে নামবে বলে আশা করা যায়।

উপসংহার

ভুটানের বিপক্ষে এমন এক জয় বাংলাদেশের অনূর্ধ্ব-১৯ দলকে শুধু সেমিফাইনালেই নিয়ে যায়নি, বরং ভবিষ্যতের জন্য একটি মজবুত বার্তা দিয়েছে। তরুণ খেলোয়াড়দের আত্মবিশ্বাস, মাঠে নিজেদের প্রমাণ করার মানসিকতা ও দলগত সংহতি একত্রে তৈরি করেছে একটি প্রতিযোগিতামূলক দল।

আগামী সেমিফাইনালে যদি তারা এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারে, তাহলে বহুদিন পর সাফ যুব ফুটবলে আবারও চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুবর্ণ সুযোগ তৈরি হতে পারে লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের সামনে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button