বিশ্ব

ভারতীয় ৫০ সৈন্যকে হত্যার দাবি পাকিস্তানের

কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলওসি) বরাবর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সামরিক উত্তেজনা তীব্র আকার ধারণ করেছে। দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি হামলা ও গোলাবর্ষণে বিপুল সংখ্যক হতাহতের দাবি করা হচ্ছে। পাকিস্তান দাবি করেছে যে তারা ভারতীয় সেনাবাহিনীর অন্তত ৫০ জন সেনাকে হত্যা করেছে এবং পাঁচটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে। অন্যদিকে ভারত জানিয়েছে, তারা পাকিস্তানে প্রবেশ করে সন্ত্রাসী আস্তানায় হামলা চালিয়ে অন্তত ৭০ থেকে ১০০ জঙ্গিকে নিহত করেছে এবং পাকিস্তানের একাধিক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করেছে। এই ঘটনাপ্রবাহ ঘিরে দক্ষিণ এশিয়ার দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে সংঘাতের আশঙ্কা নতুন করে বৃদ্ধি পেয়েছে।

পাকিস্তানের তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে দাবি করেন, নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর পাকিস্তানি সৈন্যদের পাল্টা হামলায় ভারতের প্রায় ৪০ থেকে ৫০ জন সেনা নিহত হয়েছেন। তিনি আরও বলেন, নিহত ভারতীয় সৈন্যদের মৃতদেহ এখনও উদ্ধার করতে পারেনি ভারত। পাকিস্তানের মন্ত্রী ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার এবং একটি ভারতীয় ব্রিগেড সদরদপ্তর গুঁড়িয়ে দেওয়ার দাবিও করেছেন। তিনি বলেন, ভারত রাফাল যুদ্ধবিমান নিয়ে গর্ব করলেও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আগ্রাসন চালাতে গিয়ে চরম অপমানের মুখে পড়েছে। পাকিস্তানি সশস্ত্র বাহিনী কঠোর জবাব দিয়েছে বলে তারার উল্লেখ করেন। এছাড়া, পাকিস্তানের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে ভারত ইসরায়েলের তৈরি অন্তত ২৫টি ড্রোন পাঠিয়েছিল বলেও তিনি দাবি করেন এবং সেগুলোকে ভূপাতিত করা হয়েছে বলে জানান।

এদিকে, ভারত সরকার জানিয়েছে, গত বুধবার মধ্যরাতে পাকিস্তান ও পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের অন্তত ৯টি স্থানে সামরিক অভিযান ‘অপারেশন সিন্দুর’ পরিচালনা করে তারা। এই অভিযানে ২৫ মিনিটের মধ্যে ২৪টি ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়। এরপর বৃহস্পতিবার রাতভর আরও কয়েক ডজন ড্রোন হামলা চালানো হয় পাকিস্তানের অভ্যন্তরে। ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং বৃহস্পতিবার নয়াদিল্লিতে সর্বদলীয় এক বৈঠকে দাবি করেন, ‘অপারেশন সিন্দুর’-এ পাকিস্তানে শতাধিক নিহত হয়েছে। এর আগে ভারতীয় সরকারি সূত্রগুলো ৭০ জনের বেশি নিহত হওয়ার দাবি করেছিল। ভারতীয় সেনাবাহিনী সন্ত্রাসী কাজে ব্যবহৃত অবকাঠামো ধ্বংস করে দেওয়ার কথা জানিয়েছে।

পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মুখপাত্র আহমেদ শরীফ চৌধুরী বৃহস্পতিবার রাওয়ালপিন্ডিতে এএফপিকে বলেন, তারা এ পর্যন্ত দেশজুড়ে বিভিন্ন স্থানে গুলি চালিয়ে ইসরায়েলের তৈরি ২৫টি হারোপ ড্রোন ভূপাতিত করেছে। তিনি জানান, ভারতের ছোড়া একটি ড্রোন পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর সদরদপ্তরের কাছে ভূপাতিত করা হয়েছে। ভারতের চালানো ড্রোন হামলাকে নতুন আগ্রাসন হিসেবে আখ্যা দেন তিনি।

অন্যদিকে, নয়াদিল্লি অভিযোগ করেছে যে পাকিস্তান বৃহস্পতিবার রাতভর ও সকালের দিকে ভারতের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলীয় অন্তত ১৫টি শহরে সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার জানিয়েছে, জম্মু-কাশ্মীর, পাঞ্জাব এবং গুজরাটসহ দেশের ১৫টি শহরে পাকিস্তানি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানার চেষ্টা করেছে। তবে এসব হামলায় ভারতে তাৎক্ষণিক কোনো হতাহত বা বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলে জানানো হয়েছে। ভারতীয় সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা পাকিস্তানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা প্রতিহত করেছে এবং ১৫টি ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করেছে। এছাড়াও, ভারত পাকিস্তানের একটি বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, বিশেষ করে লাহোরের কাছে অবস্থিত একটি সাইটকে নিষ্ক্রিয় করে দেওয়ার দাবি করেছে।

এই ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলায় দুই সপ্তাহ পর শুরু হয়েছে, যেখানে একাধিক ভারতীয় নিহত হয়েছিলেন। ভারত ওই হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে আসছে এবং ‘অপারেশন সিন্দুর’কে তার প্রতিশোধ হিসেবে দেখছে। উভয় পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে সীমান্তে উস্কানি এবং বেসামরিক এলাকা লক্ষ্য করে হামলা চালানোর অভিযোগ এনেছে। নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর গ্রামগুলো থেকে স্থানীয়দের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। আন্তর্জাতিক মহল থেকে দুই দেশকেই সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানানো হয়েছে। তবে বর্তমান পরিস্থিতি দক্ষিণ এশিয়ার শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য গভীর উদ্বেগ তৈরি করেছে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button