১৫ স্থাপনায় পাকিস্তানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, আকাশেই ধ্বংসের দাবি ভারতের

ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে ফের উত্তেজনা চরমে। ভারতের অভিযোগ, বুধবার গভীর রাত থেকে বৃহস্পতিবার ভোর পর্যন্ত পাকিস্তান তাদের অন্তত ১৫টি সামরিক স্থাপনায় ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার চেষ্টা চালায়। তবে দেশটির প্রতিরক্ষা বাহিনী দাবি করেছে, এসব আক্রমণ ‘আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা’র মাধ্যমে প্রতিহত করা হয়েছে। পাল্টা জবাবে ভারত লাহোরসহ কয়েকটি স্থানে পাকিস্তানের আকাশ প্রতিরক্ষা রাডার নিষ্ক্রিয় করে দিয়েছে বলেও জানিয়েছে।
এই ঘটনায় উপমহাদেশজুড়ে নতুন করে সামরিক উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক টানাপড়েনের পাশাপাশি শুরু হয়েছে সীমান্তে গোলাগুলিরও নতুন অধ্যায়।
পাকিস্তানের হামলা: রাতভর উত্তেজনা
ভারতের ইংরেজি সংবাদমাধ্যম NDTV দেশটির সরকারি সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, বুধবার রাত ১১টার পর থেকে বৃহস্পতিবার ভোর ৪টার মধ্যে পাকিস্তান ভারতের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলে ১৫টি শহরের সামরিক স্থাপনায় ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন পাঠায়। এসব শহরের মধ্যে ছিল জম্মু-কাশ্মীর, পাঞ্জাব ও গুজরাটের গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি যেমন শ্রীনগর, পাঠানকোট, অমৃতসর, লুধিয়ানা, চণ্ডীগড় ও রাজকোট।
ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, এই হামলা সরাসরি সামরিক ঘাঁটিগুলোর ওপর চালানোর চেষ্টা করা হয়েছিল, যার লক্ষ্য ছিল দেশটির প্রতিরক্ষা কাঠামো দুর্বল করে দেওয়া। তবে ভারতীয় ‘আকাশ’ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সফলভাবে এসব ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্রকে আকাশেই ধ্বংস করে দেয়।
ভারতের জবাব: পাকিস্তানের রাডার ধ্বংসের দাবি
এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় ভারতও দ্রুত পাল্টা পদক্ষেপ নেয়। বৃহস্পতিবার বিকেলে এক আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে ভারত সরকার জানায়, পাকিস্তানের হামলার জবাবে দেশটির বাহিনী লাহোর ও তার আশপাশের কয়েকটি অঞ্চলে অবস্থিত পাকিস্তানি সামরিক রাডার ব্যবস্থা লক্ষ্য করে সফল হামলা চালিয়েছে।
ভারতের ভাষ্য অনুযায়ী, এই পাল্টা হামলাটি সম্পূর্ণরূপে প্রতিরক্ষামূলক এবং তা পাকিস্তানের আগ্রাসনের মাত্রার সঙ্গে সমানুপাতিক ছিল। সরকার আরও বলেছে, হামলায় ব্যবহৃত পাকিস্তানি ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্রের ধ্বংসাবশেষ সংগ্রহ করা হচ্ছে, যা ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক পরিসরে প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করা হবে।
সীমান্তজুড়ে শেলিং, বেসামরিক হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে
গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পেহেলগামে এক সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হওয়ার পর থেকেই ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা বেড়ে চলছে। ভারতের দাবি, এই হামলার পেছনে পাকিস্তানের ‘ডিপ স্টেট’ বা গোপন নিরাপত্তা সংস্থা এবং জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোর মদদ রয়েছে।
এ ঘটনার পর ভারত ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে বিমান ও ড্রোন হামলা চালায়। এর পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় সীমান্তজুড়ে মর্টার শেল ও ভারী আর্টিলারি হামলা বাড়িয়েছে পাকিস্তান।
ভারতীয় বাহিনী জানায়, কুপওয়ারা, বারামুল্লা, উরি, পুঞ্চ, মেন্ধার ও রাজৌরি সেক্টরে প্রতিদিনই গোলাবর্ষণ হচ্ছে। ইতোমধ্যে ১৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে রয়েছে ৩ জন নারী ও ৫ শিশু। একজন ভারতীয় সেনাও প্রাণ হারিয়েছেন।
‘ডিপ স্টেট’ ও সীমান্ত সন্ত্রাসবাদ নিয়ে ফের অভিযোগ
ভারতীয় সরকার দাবি করছে, পাকিস্তানের সামরিক ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সীমান্তবর্তী এলাকায় সন্ত্রাসী কার্যক্রমে অর্থ ও অস্ত্র সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। এ ধরনের কার্যক্রমকে ‘সীমান্ত সন্ত্রাসবাদ’ হিসেবে চিহ্নিত করে তারা বলেছে, এটা শুধু ভারতের নিরাপত্তার জন্য নয়, গোটা অঞ্চলের স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ।
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, “আমরা শান্তি চাই, কিন্তু সীমান্ত পেরিয়ে সন্ত্রাসের জবাবও শক্ত হাতে দেওয়া হবে।”
‘আকাশ’ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা: ভারতের গর্ব
ভারতের প্রতিরক্ষা বাহিনী যেসব ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করেছে, তার কৃতিত্ব দেওয়া হয়েছে দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি ‘আকাশ’ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে। এই সিস্টেমটি ২৫ থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তু শনাক্ত ও ধ্বংসে সক্ষম। এটি মূলত ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন ও যুদ্ধবিমান ঠেকাতে ব্যবহৃত হয়।
প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের মতে, এই হামলা-প্রতিরোধের ঘটনায় দেখা গেছে ‘আকাশ’ সিস্টেম বাস্তবে কতটা কার্যকর, এবং ভারতের প্রতিরক্ষাব্যবস্থায় কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
আন্তর্জাতিক উদ্বেগ বাড়ছে
দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে এমন সরাসরি হামলা ও পাল্টা হামলার খবর আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে। জাতিসংঘ ও যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক শক্তি উভয় দেশকে সংযম দেখানোর আহ্বান জানিয়েছে।
বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, এই উত্তেজনা যদি নিয়ন্ত্রণে না আনা যায়, তাহলে তা যুদ্ধাবস্থায় রূপ নিতে পারে এবং পুরো দক্ষিণ এশিয়ার স্থিতিশীলতাকে বিপন্ন করতে পারে।
সংকট নিরসনে সংযমই একমাত্র পথ
ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে বারবার উত্তেজনা দেখা দিয়েছে, কিন্তু এবারের সংঘাত একাধিক দিক দিয়ে আলাদা—এটি সরাসরি সামরিক স্থাপনার ওপর হামলার চেষ্টা, তৃতীয় পক্ষের প্রযুক্তি ব্যবহার এবং জবাবি হামলার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং সীমান্তের ভেতর বেসামরিক হতাহতের সংখ্যাও আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে চলেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কূটনৈতিক সমাধান ছাড়া এই সংকটের দীর্ঘস্থায়ী প্রতিকার সম্ভব নয়। এখন সময় দুই দেশের জন্য—যুদ্ধোন্মাদনা নয়, বরং শান্তি ও সংযমের।