মূল্যস্ফীতি ৪–৫ শতাংশে নামিয়ে আনা সম্ভব: বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, সরকারের ধারাবাহিক প্রচেষ্টা ও কার্যকর নীতি থাকলে মূল্যস্ফীতি ৪ থেকে ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা সম্ভব। বর্তমান উচ্চ মূল্যস্ফীতির প্রেক্ষাপটে এটিকে একটি অর্জনযোগ্য লক্ষ্য হিসেবে উল্লেখ করে তিনি জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছে।
তিনি আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে আয়োজিত ‘ব্যাংকার এসএমই নারী উদ্যোক্তা সমাবেশ, পণ্য প্রদর্শনী ও মেলার’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই অ্যান্ড স্পেশাল প্রোগ্রামস বিভাগ।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) এপ্রিল মাসের তথ্য অনুযায়ী, সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ১৭ শতাংশ, যা আগের মাসে ছিল ৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ। খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত উভয় খাতে মূল্যস্ফীতি সামান্য কমলেও বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি এখনও ১০ শতাংশের ওপরে রয়েছে।
গভর্নর বলেন, “আমরা যদি একদিকে টাকা ছাপাই আর বলি মূল্যস্ফীতি কমে না, তাহলে তো হবে না। আমাদের কঠোর অবস্থান নিতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক সেই জায়গা থেকেই কাজ করছে।” তিনি আরও বলেন, “খাদ্য মূল্যস্ফীতি সাড়ে ১৪ শতাংশ থেকে সাড়ে ৮ শতাংশে এবং খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি সাড়ে ১২ শতাংশ থেকে ৯ শতাংশে নেমে এসেছে।”
তাঁর মতে, সরকারের নীতির ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে মূল্যস্ফীতি ৪ থেকে ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা কঠিন নয় এবং সেটিই দেশের জন্য একটি গ্রহণযোগ্য ও টেকসই সমাধান হবে।
নারী উদ্যোক্তাদের ঋণপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে আহ্বান
গভর্নর আহসান এইচ মনসুর নারী উদ্যোক্তাদের অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তি নিয়েও কথা বলেন। তিনি বলেন, “নারীদের সাংবিধানিক অধিকার থাকলেও বাস্তবে তাঁরা তা পুরোপুরি পাচ্ছেন না। ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে এখনো অনেক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে।”
বর্তমানে ব্যাংক খাতে বিতরণকৃত মোট ঋণের মাত্র ৬ শতাংশ নারীদের অনুকূলে যাচ্ছে উল্লেখ করে গভর্নর বলেন, “এটা মোটেও বাস্তবসম্মত নয়। নারীদের জন্য সহজ শর্তে ঋণ নিশ্চিত করতে হবে। তবে তা কেবল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তহবিল বাড়িয়ে নয়, বরং বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর নিজস্ব তহবিল থেকেই এসব ঋণ দিতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “নারীদের আর্থিক সচেতনতা ও সক্ষমতা বাড়াতে প্রশিক্ষণ ও তথ্যপ্রযুক্তিগত সহায়তা নিশ্চিত করতে হবে, যাতে তারা আত্মনির্ভরশীলভাবে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারেন।”
চার দিনব্যাপী নারী উদ্যোক্তা পণ্য মেলা
নারী উদ্যোক্তাদের অংশগ্রহণে আয়োজিত চার দিনব্যাপী এই পণ্য মেলা চলবে ১১ মে পর্যন্ত। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ৬৮ জন নারী উদ্যোক্তা তাঁদের পণ্যসহ অংশগ্রহণ করেছেন। মেলার শেষ দিনে ছয়জন নারী উদ্যোক্তাকে বিশেষ সম্মাননা দেওয়া হবে।
এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১৪ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত নিয়মিতভাবে এই মেলা আয়োজন করলেও করোনা মহামারির কারণে গত চার বছর তা বন্ধ ছিল।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর নুরুন নাহার, নির্বাহী পরিচালক মো. খসরু পারভেজ, সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মাসরুর আরেফিন এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই বিভাগের পরিচালক নওশাদ মোস্তফা।
সিটি ব্যাংকের এমডি মাসরুর আরেফিন বলেন, “নারী উদ্যোক্তাদের জন্য এসএমই কার্যক্রম সম্প্রসারণে ব্যাংক খাতকে আরও এগিয়ে আসতে হবে। এজন্য ব্যাংকগুলোর শীর্ষ নির্বাহীদের উদ্দীপনা ও প্রতিশ্রুতি জরুরি।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের বক্তব্যে স্পষ্ট যে, বর্তমান অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও সঠিক নীতিমালা, ব্যাংক খাতের কার্যকর সমন্বয় ও নারীদের অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং অর্থনৈতিক ভারসাম্য বজায় রাখা সম্ভব। এই ধরণের মেলা ও আলোচনার মাধ্যমে ভবিষ্যতের জন্য একটি ইতিবাচক দিকনির্দেশনা তৈরি হচ্ছে।