অর্থনীতি

আস্থার জোয়ারে ইসলামী ব্যাংক ২৪ হাজার কোটি টাকার আমানত

দেশের ব্যাংকিং খাত যখন টানা সংকট ও গ্রাহক অনাস্থায় দুলছে, তখন সম্পূর্ণ ভিন্ন বাস্তবতায় এগিয়ে চলেছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি। গত সাত মাসে ব্যাংকটি শুধু আস্থা পুনরুদ্ধারই করেনি, বরং আমানত ও গ্রাহক সংখ্যা বৃদ্ধির অভূতপূর্ব রেকর্ড গড়েছে। আগস্ট ২০২৪ থেকে এপ্রিলে (১৬ এপ্রিল ২০২৫) পর্যন্ত সময়ে ব্যাংকটি নতুন হিসাব খুলেছে ১৮ লাখ ২৬ হাজার ৬৫২টি এবং অর্জন করেছে ২৪ হাজার ৩৮৮ কোটি টাকার নতুন আমানত। এই সময়েই মোট আমানতের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৬৬ হাজার কোটি টাকায়।

অস্থির সময়েও স্থির অবস্থান

২০২৪ সালের আগস্টে রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর দেশের শরিয়াহভিত্তিক একাধিক ব্যাংকে নগদ অর্থসংকট, চেক বাতিল, দীর্ঘ লাইন এবং টাকা উত্তোলনে গ্রাহকদের ভোগান্তির চিত্র ছিল বেশ সাধারণ। এই অস্থির প্রেক্ষাপটে ইসলামী ব্যাংক ছিল ব্যতিক্রম। গ্রাহকের আস্থা ধরে রাখতে ব্যাংকটি কার্যত একটি শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করতে পেরেছে।

ব্যাংকটির ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওমর ফারুক খান বলেন, “রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর ব্যাংকটি সঠিক পথে ফিরেছে। এ জন্যই গ্রাহকদের মধ্যে আস্থা ফিরেছে। ১৮ লাখ নতুন হিসাব এবং ২৪ হাজার কোটির বেশি নতুন আমানতই তার প্রমাণ।”

মুদারাবা অ্যাকাউন্টে আস্থা

ইসলামী ব্যাংকে খোলা নতুন হিসাবগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছিল মুদারাবা টার্ম ডিপোজিট (MTDR) অ্যাকাউন্ট। ৩ লাখ ৭০ হাজার ৭৮২টি MTDR অ্যাকাউন্টে জমা পড়েছে ১৭ হাজার ৭২৬ কোটি টাকা। এ ছাড়া মুদারাবা সঞ্চয়ী, স্পেশাল সেভিংস, হজ, বিবাহ এবং শিক্ষার্থী হিসাবেও জমা পড়েছে কয়েক হাজার কোটি টাকা।

ব্যাংকিং খাতে নতুন দৃষ্টান্ত

অর্থনীতিবিদ ও ‘চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভ’-এর রিসার্চ ফেলো এম হেলাল আহমেদ জনি বলেন, “আগের সরকারের সময়ে এস আলম গ্রুপ ইসলামী ব্যাংকসহ কিছু শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকে অনিয়ম ও অর্থ পাচারে জড়িত ছিল। নতুন সরকার এ অনিয়ম বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে ব্যাংকিং খাতে স্বচ্ছতা ফিরেছে এবং ইসলামী ব্যাংকের প্রতি আস্থা তৈরি হয়েছে। এই ১৮ লাখ নতুন হিসাব শুধুমাত্র ব্যাংকের সফলতা নয়, এটি একটি ইতিবাচক বার্তা গোটা ব্যাংকিং খাতের জন্য।”

বিশাল নেটওয়ার্ক ও ডিজিটাল বিস্তার

বর্তমানে ইসলামী ব্যাংকের রয়েছে—

  • ৪০০টি শাখা
  • ২৬৫টি উপশাখা
  • ২,৭৮৩টি এজেন্ট আউটলেট
  • ৩,০৪০টি এটিএম ও সিআরএম বুথ
  • মোট গ্রাহক সংখ্যা ২ কোটি ৫০ লাখের বেশি

ব্যাংকটির মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাপ ‘সেলফিন’-এর ব্যবহারকারী ইতিমধ্যেই ৪৭ লাখ ছাড়িয়েছে, যা ব্যাংকটির ডিজিটাল সক্ষমতার একটি বড় প্রমাণ।

রেমিট্যান্স, বাণিজ্য ও ক্ষুদ্র বিনিয়োগেও শক্ত অবস্থান

ইসলামী ব্যাংক শুধু আমানত ও হিসাব খোলায় নয়, রেমিট্যান্স আহরণ, আমদানি-রপ্তানি ও ক্ষুদ্র বিনিয়োগেও নিজেদের শক্তিশালী করেছে:

  • রেমিট্যান্স আহরণ: ৬৭ হাজার কোটি টাকার বেশি
  • আমদানি: ৬৫ হাজার ৭৮২ কোটি টাকা
  • রপ্তানি: ৩৩ হাজার ৪৩৮ কোটি টাকা
  • ক্ষুদ্র বিনিয়োগ: ৩৪ হাজার গ্রামে ১৮ লাখ পরিবারকে বিনিয়োগ সহায়তা
  • প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর্মসংস্থান: প্রায় ১ কোটি মানুষ

ব্যাংকিং খাতে আস্থা পুনর্গঠনের প্রতীক

ইসলামী ব্যাংকের বর্তমান সাফল্য একক কোনো প্রতিষ্ঠানের বিজয় নয়। এটি বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে আস্থা ও স্বচ্ছতার পুনরুদ্ধারের প্রতীক হয়ে উঠেছে। যেখানে অনেক ব্যাংক এখনও পুঁজিসঙ্কটে ভুগছে এবং গ্রাহকের আস্থা টিকিয়ে রাখতে হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে ইসলামী ব্যাংকের মতো প্রতিষ্ঠান স্থিতিশীলতা ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মাধ্যমে বাজারে নতুন উদাহরণ স্থাপন করছে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button