বিশ্ব

ভারতের হামলায় পাকিস্তানে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩১

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সাম্প্রতিক উত্তেজনার জেরে আবারও প্রাণ হারাতে হলো নিরীহ সাধারণ মানুষকে। পাকিস্তান দাবি করেছে, ভারতের বিমান হামলায় দেশটির অন্তত ৩১ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে। বুধবার (৭ মে) এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর)-এর মহাপরিচালক (ডিজি) লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরিফ চৌধুরী এই তথ্য জানান। পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম জিও নিউজ এই খবর প্রকাশ করেছে।

লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরিফ বলেন, “ভারতীয় বাহিনী বিনা উসকানিতে আমাদের অভ্যন্তরে আক্রমণ চালিয়েছে। এতে ২৬ জন বেসামরিক নাগরিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় এবং ৫ জন গোলাবর্ষণের কারণে নিহত হয়েছেন। এই ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও অন্তত ৫৭ জন পাকিস্তানি নাগরিক।”

তিনি আরও জানান, নিয়ন্ত্রণ রেখায় (এলওসি) যুদ্ধবিরতির স্পষ্ট লঙ্ঘন করে ভারত একতরফাভাবে আগ্রাসী আচরণ করছে। এতে সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে চরম আতঙ্ক ও মানবিক সংকট তৈরি হয়েছে। পাকিস্তান সেনাবাহিনী কেবলমাত্র সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে বলে জানান তিনি।

ঘটনার পটভূমি: উত্তপ্ত কাশ্মীর সীমান্ত

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সীমান্ত উত্তেজনা নতুন কিছু নয়। দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটে আসছে। তবে চলতি সপ্তাহে পরিস্থিতি আশঙ্কাজনকভাবে অবনতি হয়েছে।

বুধবার দিবাগত রাতের প্রথম প্রহরে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে একাধিক লক্ষ্যবস্তুতে ভারত ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর দাবি, ভারতীয় বিমানবাহিনী সীমান্ত পেরিয়ে পাকিস্তানি ভূখণ্ডে প্রবেশ করে এবং সেখানে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানে। এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তানও পাল্টা জবাব দেয় এবং ভারতের কয়েকটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার দাবি করে।

পাকিস্তানের আইএসপিআরের মুখপাত্র বলেন, “আমরা কেবল আত্মরক্ষার্থে ও যুদ্ধনীতির প্রতি সম্মান রেখে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছি। নিরীহ বেসামরিক মানুষ আমাদের লক্ষ্য নয়, বরং সামরিক ঘাঁটি ও আগ্রাসনের উৎসগুলিই আমাদের টার্গেট ছিল।”

মানবিক বিপর্যয় ও সীমান্তবাসীর উদ্বেগ

এই সামরিক সংঘাত সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছে সীমান্তবর্তী সাধারণ মানুষের ওপর। নিয়ন্ত্রণ রেখার দুই পাশে বাস করা মানুষজন নতুন করে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। বহু মানুষ ইতোমধ্যে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন।

কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখা সংলগ্ন একটি গ্রাম থেকে সরে যাওয়া এক নারী জানান, “দিনরাত গোলার আওয়াজে বাচ্চারা ভয় পেয়ে যায়। আমরা জানি না, কখন আমাদের বাড়ি লক্ষ্য করে গুলি বা ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হবে। জীবন বাঁচাতে আমরা এলাকা ছেড়ে চলে এসেছি।”

মানবাধিকার সংস্থাগুলোও এই পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানিয়েছে, যাতে অবিলম্বে এই সংঘাত বন্ধে কার্যকর ভূমিকা পালন করা হয়।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া: উদ্বেগ ও শান্তির আহ্বান

ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে এই ধরনের উত্তেজনাকর পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক পরিসরেও উদ্বেগ তৈরি করেছে। জাতিসংঘ মহাসচিব এক বিবৃতিতে বলেছেন, “দুই পরমাণু শক্তিধর দেশের মধ্যে যেকোনও সামরিক সংঘাত গোটা অঞ্চলের স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলে দিতে পারে। আমরা উভয় দেশকে সংযম দেখাতে ও শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথে আসার আহ্বান জানাই।”

যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নও এই পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং দুই পক্ষকে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে পৌঁছাতে আহ্বান জানিয়েছে।

বিশ্লেষণ: সংঘাতের পেছনের সম্ভাব্য কারণ

বিশ্লেষকদের মতে, সাম্প্রতিক এই উত্তেজনার পেছনে একাধিক কারণ রয়েছে। প্রথমত, কাশ্মীর ইস্যুতে দুই দেশের রাজনৈতিক অবস্থান দিন দিন আরও কঠোর হয়ে উঠছে। দ্বিতীয়ত, সম্প্রতি পাকিস্তানে বিভিন্ন জঙ্গি হামলা ও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ইস্যুতে ভারত দায় চাপাচ্ছে, যা সম্পর্ক আরও জটিল করে তুলেছে।

এছাড়া ভারতের সাম্প্রতিক সামরিক প্রস্তুতি ও সীমান্তে নতুন করে সেনা মোতায়েনও পাকিস্তানের দৃষ্টিতে আগ্রাসনের ইঙ্গিত হিসেবে ধরা পড়ছে।

পরিশেষে: সংকট সমাধানে কূটনৈতিক উদ্যোগ জরুরি

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ বা সামরিক সংঘাত কখনোই স্থায়ী সমাধান হতে পারে না। দুই দেশের নেতৃত্বের উচিত, আলোচনার টেবিলে বসে সকল বিরোধ মীমাংসার পথ খোঁজা। নিরীহ মানুষের জীবন ঝুঁকিতে ফেলে কোনও সামরিক বিজয় কখনোই আসল বিজয় নয়।

পাকিস্তানের পক্ষ থেকে যদিও যুদ্ধনীতি মেনে পাল্টা জবাব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে, তবে এই উত্তেজনা যদি ক্রমেই বাড়তে থাকে, তাহলে তা গোটা দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এখন দায়িত্ব, তারা যেন দ্বিপাক্ষিক আলোচনার জন্য দুই দেশকে উৎসাহিত করে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button