
দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের হয়ে খেলার অনুমতি পেয়েছেন কানাডা প্রবাসী ফুটবলার সামিত সোম। গত মঙ্গলবার (৬ মে) বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফার ডিসিপ্লিনারি কমিটি সামিত সোমকে বাংলাদেশের হয়ে খেলার জন্য প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র প্রদান করেছে। এর ফলে লাল-সবুজের জার্সিতে তার মাঠে নামতে আর কোনো আনুষ্ঠানিক বাধা রইলো না।
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলা ফুটবলার হামজা চৌধুরীর গত ২৫ মার্চ বাংলাদেশ জাতীয় দলে অভিষেকের পর থেকেই কানাডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে খেলা সামিত সোমকে নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এই ফুটবলারের খেলার যোগ্যতা এবং আগ্রহের খবর ছড়িয়ে পড়লে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) তার বাংলাদেশে খেলার ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে ওঠে। প্রাথমিক পর্যায়ে কিছুটা সময় নিলেও পরে সামিত সোম বাংলাদেশের হয়ে খেলার unequivocal ইচ্ছা প্রকাশ করেন।
এরপর থেকেই দ্রুততার সাথে শুরু হয় সামিতকে বাংলাদেশ দলে অন্তর্ভুক্ত করার প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে গত শুক্রবার (২ মে) রাতে কানাডার টরেন্টোতে অবস্থিত বাংলাদেশ হাই-কমিশনের কনস্যুলেট অফিসে বাংলাদেশি পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেন সামিত। তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মাত্র ৭২ ঘণ্টার মধ্যেই তার ই-পাসপোর্ট প্রস্তুত হয়ে যায়।
পাশাপাশি, বাংলাদেশের হয়ে খেলার জন্য পূর্বের দেশের ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের ছাড়পত্র একটি অত্যাবশ্যকীয় বিষয়। সামিত সোম ইতিপূর্বে কানাডার জাতীয় দলের হয়ে আন্তর্জাতিক ম্যাচে অংশ নেওয়ায় তার জন্য এই ছাড়পত্র প্রয়োজন ছিল। গত ১ মে তিনি কানাডা সকার অ্যাসোসিয়েশন থেকে তার ছাড়পত্র সংগ্রহ করেন।
পাসপোর্ট এবং কানাডা সকার অ্যাসোসিয়েশনের ছাড়পত্র হাতে পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র একত্রিত করে ফিফার প্লেয়ার্স স্ট্যাটাস কমিটিতে সামিত সোমের বাংলাদেশের হয়ে খেলার অনুমতির জন্য আবেদন করে বাফুফে। ফিফা দীর্ঘ পর্যালোচনা শেষে গত মঙ্গলবার (৬ মে) তাকে বাংলাদেশের জার্সিতে খেলার জন্য চূড়ান্ত ছাড়পত্র প্রদান করে।
২৭ বছর বয়সী সামিত সোমের জন্ম ও বেড়ে ওঠা কানাডায় হলেও তার বাবা-মা দুজনেই বাংলাদেশি। বর্তমানে তিনি কানাডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের অন্যতম পরিচিত ক্লাব কালাভরি এফসি-এর একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। মিডফিল্ডার হিসেবে খেলা সামিত তার খেলার ধরণ এবং দক্ষতার জন্য প্রশংসিত। অতীতে কানাডার জাতীয় দলের হয়ে আন্তর্জাতিক ম্যাচে অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশ দলের জন্য মূল্যবান হবে বলে মনে করছেন ফুটবল বিশ্লেষকরা।
সামিত সোমের বাংলাদেশের হয়ে খেলার অনুমতি প্রাপ্তি এমন এক সময়ে ঘটল, যখন জাতীয় দল আগামী মাসে গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক ম্যাচে অংশ নিতে যাচ্ছে। আগামী ১০ জুন এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বের ম্যাচে বাংলাদেশ সিঙ্গাপুরের মুখোমুখি হবে। ফিফার ছাড়পত্র পাওয়ার পর ধারণা করা হচ্ছে, এই ম্যাচেই বাংলাদেশের জার্সিতে অভিষেক হতে পারে সামিত সোমের। হামজা চৌধুরীর পর সামিত সোমের মতো প্রবাসী ফুটবলারের জাতীয় দলে আগমন দেশের ফুটবলে নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছে এবং ভবিষ্যতে আরও প্রবাসী ফুটবলারকে দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে উৎসাহিত করবে বলে আশা করা হচ্ছে। তার অন্তর্ভুক্তি বাংলাদেশ দলের শক্তি বৃদ্ধি করবে এবং মাঠের খেলায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলেই বিশ্বাস ফুটবলপ্রেমীদের। এখন শুধু মাঠে সামিত সোমের লাল-সবুজ জার্সিতে পথচলা দেখার অপেক্ষা।