জাতীয়

প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন জমা

বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতকে আধুনিক, দক্ষ ও স্বচ্ছ রূপে গড়ে তোলার লক্ষ্যে গঠিত স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশন আজ তাদের চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে। আজ সোমবার (৫ মে) সকালে রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথিভবন যমুনায় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এই প্রতিবেদন হস্তান্তর করা হয়।

প্রতিবেদন গ্রহণ করলেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস

প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, কমিশনের পক্ষ থেকে একটি বিস্তারিত লিখিত প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টার হাতে তুলে দেওয়া হয়, যাতে স্বাস্থ্যখাতের মূল সংকটসমূহ চিহ্নিত করে তা থেকে উত্তরণের সুপারিশ দেওয়া হয়েছে।

কে ছিলেন এই কমিশনের নেতৃত্বে?

গত ১৭ নভেম্বর ২০২৪ সালে অন্তর্বর্তী সরকার কর্তৃক গঠিত ১২ সদস্যের স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশনের প্রধান ছিলেন বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক এ কে আজাদ খান। দেশের শীর্ষ স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও চিকিৎসা শিক্ষার্থী নিয়ে গঠিত এ কমিশনে ছিলেন—

  • অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ জাকির হোসেন
  • অধ্যাপক ডা. লিয়াকত আলী
  • অধ্যাপক ডা. সায়েবা আক্তার
  • অধ্যাপক ডা. নায়লা জামান খান
  • সাবেক স্বাস্থ্যসচিব এস এম রেজা
  • অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক
  • ডা. আজহারুল ইসলাম খান
  • অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মো. আকরাম হোসেন
  • অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আতিকুল হক
  • ডা. আহমেদ এহসানুর রাহমান
  • ঢাকা মেডিকেল কলেজের পঞ্চম বর্ষের শিক্ষার্থী উমায়ের আফিফ

প্রতিবেদনের প্রধান বৈশিষ্ট্য কী হতে পারে?

যদিও এখনো প্রতিবেদনটি প্রকাশ্যে আনা হয়নি, তবে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, এতে স্বাস্থ্যব্যবস্থায় দীর্ঘদিনের দুর্বলতা, দুর্নীতি, চিকিৎসা সেবার বৈষম্য, হাসপাতালের শৃঙ্খলাজনিত সমস্যা, জনস্বাস্থ্যখাতে বাজেট ঘাটতিমানবসম্পদ সংকটের কথা বিস্তারিতভাবে উঠে এসেছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই প্রতিবেদন হতে পারে—

  • চিকিৎসা ব্যবস্থায় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণের ভিত্তি।
  • ইউএইচএফপিও থেকে মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পর্যন্ত সকল স্তরে জবাবদিহিতামূলক কাঠামো তৈরির প্রস্তাবনায় পরিপূর্ণ।
  • প্রযুক্তিনির্ভর স্বাস্থ্যসেবা এবং টেলিমেডিসিন ব্যবস্থাকে জোরদারের সুপারিশও এতে থাকতে পারে।

স্বাস্থ্যখাতের চলমান সংকটে এ উদ্যোগ কতটা গুরুত্বপূর্ণ?

বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতে বিগত এক দশকে সরকারি ব্যয়ে ঘাটতি, চিকিৎসা খরচে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি, গ্রাম ও শহরের মধ্যে চিকিৎসা সুবিধার বৈষম্য, চিকিৎসকদের বিদেশমুখিতা—এসব সমস্যা গভীরভাবে দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি, করোনা মহামারির সময় দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার কাঠামোগত দুর্বলতা আরও স্পষ্টভাবে প্রকাশ পায়।

এই প্রেক্ষাপটে এমন একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিশনের কাজ স্বাস্থ্যখাতের টেকসই সংস্কারে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

পরবর্তী পদক্ষেপ কী হতে পারে?

স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন গ্রহণের পর, এখন প্রধান উপদেষ্টা এবং অন্তর্বর্তী সরকার:

  • সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর সঙ্গে পরামর্শ করে সুপারিশ বাস্তবায়নের রোডম্যাপ তৈরি করতে পারেন।
  • জরুরি ভিত্তিতে কিছু নীতিগত সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নের কাজ শুরু করতে পারেন।
  • নির্বাচনের আগে বা পরবর্তী সরকারকে এ প্রতিবেদনটি দিকনির্দেশক দলিল হিসেবে হস্তান্তর করা হতে পারে।

স্বাস্থ্যখাতের জন্য এটি একটি ঐতিহাসিক দিন। প্রথমবারের মতো জাতীয় পর্যায়ে গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিশন সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে কাজ করে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার পূর্ণাঙ্গ সংস্কারের দিকনির্দেশনা প্রদান করেছে। এবার দেখার বিষয়, এই মূল্যবান প্রতিবেদনের কতটুকু বাস্তবায়ন হয় এবং সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবায় তার কতটা প্রভাব পড়ে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button