প্রযুক্তি

ভিডিও গেমকে হারিয়ে দিল গুগল জেমিনি: পোকেমন ব্লু সম্পন্ন করে চমকে দিল AI

গুগলের আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স চ্যাটবট ‘জেমিনি ২.৫ প্রো’ এবার এক নতুন সাফল্য অর্জন করেছে, যা প্রযুক্তি ও গেমপ্রেমী উভয় মহলে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। গতকাল শনিবার (৪ মে) লাইভস্ট্রিম প্ল্যাটফর্ম টুইচে দেখা গেছে, গুগল জেমিনি সফলভাবে সম্পন্ন করেছে জনপ্রিয় ক্লাসিক ভিডিও গেম ‘পোকেমন ব্লু’। বিষয়টি প্রথম নিশ্চিত করেন গুগলের সিইও সুন্দর পিচাই, যিনি এক্স প্ল্যাটফর্মে (সাবেক টুইটার) এ বিষয়ে রসিকতা করে একটি পোস্ট দেন।

মানুষ নয়, AI শেষ করল পোকেমন গেম!

এই চমকপ্রদ ঘটনা ঘটেছে একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার জোয়েল জে-এর পরিকল্পনায়। তিনি একটি বিশেষ লাইভস্ট্রিম চ্যানেল তৈরি করেছিলেন টুইচে, যেখানে গেম খেলছিল গুগলের শক্তিশালী ভাষাভিত্তিক এআই মডেল Gemini 2.5 Pro। পোকেমন ব্লু গেমটি যেখানে বহু গেমারকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ব্যস্ত রাখে, সেখানে একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সেটি সম্পূর্ণ করে ফেলেছে – তা নিঃসন্দেহে যুগান্তকারী এক ঘটনা।

জেমিনি কি একা খেলেছে? নাকি সাহায্য পেয়েছে?

যদিও গেমটি সম্পন্ন করতে জেমিনির কিছুটা সহায়তা নিতে হয়েছে জোয়েল জে’র কাছ থেকে, তবুও পুরো কৃতিত্ব অস্বীকার করা যাচ্ছে না। কারণ গেমের মূল সিদ্ধান্ত, যুদ্ধ পরিকল্পনা, চরিত্র বিকাশ ও বিজয়ের কৌশল—সবকিছুই নিয়ন্ত্রণ করেছে Gemini নিজে। জোয়েল নিজেও এক্সপ্লেইন করেছেন, “আমি যেটুকু সহায়তা করেছি, তা আসলে জেমিনির যুক্তিভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের সক্ষমতাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। একে প্রতারণা বলা যাবে না।”

AI দিয়ে গেম খেলার পেছনে যুক্তি কী?

গেম খেলা শুধু বিনোদনের জন্য নয়, গবেষণা ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উন্নয়নে এখন বড় এক ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। গেমিংয়ের মাধ্যমে এআই মডেলগুলো বাস্তবিক পরিস্থিতিতে চিন্তা করতে শেখে, অনিশ্চিত পরিস্থিতিতে সিদ্ধান্ত নিতে শেখে। পোকেমন বা টার্ন-ভিত্তিক কৌশলগত গেমগুলো এআই-এর জন্য একটি প্রশিক্ষণ ক্ষেত্রের মতো কাজ করে।

এ কারণেই গুগল ও অ্যানথ্রপিকের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো এআই প্রশিক্ষণে গেমকে অন্তর্ভুক্ত করছে। গুগলের প্রোডাক্ট লিড লোগান কিলপ্যাট্রিক সম্প্রতি বলেছিলেন, “পোকেমন খেলার মাধ্যমে Gemini ইতোমধ্যেই পঞ্চম ব্যাজ অর্জন করেছে, যা মডেলটির দীর্ঘমেয়াদী উন্নতির জন্য বড় মাইলফলক।”

অ্যানথ্রপিকের ক্লদ এআই পিছিয়ে?

এই প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে নেই অ্যানথ্রপিকের এআই মডেল Claude। ফেব্রুয়ারিতে প্রতিষ্ঠানটি দাবি করেছিল, তাদের মডেলগুলোও পোকেমন রেড গেমে ভালো অগ্রগতি দেখাচ্ছে। তবে এখনো পর্যন্ত ক্লদ মডেল গেমটি পুরোপুরি সম্পন্ন করতে পারেনি। সেই তুলনায় Gemini 2.5 Pro-এর সাফল্য অনেকটাই এগিয়ে রেখেছে গুগলকে।

তবে এই তুলনা নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। জোয়েল জে যেমন বলেছেন, “দুটি এআই মডেলকে শুধু পোকেমন খেলার ভিত্তিতে বিচার করাটা ন্যায্য নয়। কারণ এসব গেমে মানুষের কিছুটা হস্তক্ষেপ থাকেই।”

AI দিয়ে গেম খেলার ভবিষ্যৎ কী?

এই ঘটনা শুধু একটি গেম খেলার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। বরং এটি একটি প্রযুক্তিগত অর্জন, যা ভবিষ্যতের এআই গবেষণা ও অ্যাপ্লিকেশনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত তৈরি করছে।

গেমিং জগতের বিশেষজ্ঞরা বলছেন:

  • গেম খেলার মাধ্যমে AI শেখে কীভাবে দীর্ঘমেয়াদি কৌশল তৈরি করতে হয়
  • এআই গেম খেলার সময় সমস্যা সমাধানের পদ্ধতি নিজেই তৈরি করে
  • এটি বাস্তব সিদ্ধান্ত গ্রহণের মতো জটিলতার মধ্যেও কার্যকরী বিশ্লেষণ করতে শেখে

গেম একধরনের সিমুলেশন পরিবেশ তৈরি করে, যেখানে ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়, পুনরায় চেষ্টা করা যায়, এবং নতুন কৌশল আবিষ্কার করা যায়—যা এআই প্রশিক্ষণে অত্যন্ত কার্যকর।

সুন্দর পিচাইয়ের রসিকতা: ‘আর্টিফিশিয়াল পোকেমন ইন্টেলিজেন্স’

গুগলের সিইও সুন্দর পিচাইও এই অর্জন নিয়ে বেশ উচ্ছ্বসিত। তিনি এক্স-এ পোস্ট করে মজা করে লিখেছেন, “আমরা এখন কাজ করছি API নিয়ে—‘আর্টিফিশিয়াল পোকেমন ইন্টেলিজেন্স’।” তার এই মন্তব্য প্রযুক্তিপ্রেমী ও গেমারদের মধ্যে বেশ হাস্যরস ও আগ্রহ তৈরি করেছে।

AI গেম খেলছে, মানুষ কী করবে?

এআই যদি ভবিষ্যতে গেমে মানুষের চেয়ে ভালো খেলতে পারে, তাহলে মানুষের ভূমিকা কী হবে—এই প্রশ্ন এখন অনেকের মনেই ঘুরপাক খাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটা ভয় পাওয়ার কিছু নয়। বরং এই ধরনের উন্নয়ন এআই-কে নতুন কাজ শেখানোর, বিশ্লেষণী ক্ষমতা বাড়ানোর এবং বাস্তব জটিলতা মোকাবেলায় সক্ষম করে তুলছে।

গুগলের জেমিনি ২.৫ প্রো মডেলের এই অর্জন নিঃসন্দেহে যুগান্তকারী। একটি জনপ্রিয় ক্লাসিক গেম সম্পূর্ণ করে দেখিয়েছে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এখন শুধু প্রশ্ন-উত্তরের গণ্ডি পেরিয়ে বাস্তব পরিস্থিতিতে কার্যকরভাবে চিন্তা করতেও সক্ষম। যদিও গেম খেলার ক্ষেত্রে কিছু সহায়তা ছিল, তবে AI-এর সম্ভাবনা, লার্নিং সক্ষমতা ও জটিল চিন্তার দক্ষতা এখানে আরও একবার প্রমাণিত হলো।

গেম এখন আর কেবল বিনোদনের উপকরণ নয়—এটি হয়ে উঠছে এআই প্রশিক্ষণের এক অসাধারণ মাধ্যম। পোকেমন ব্লু সম্পন্ন করে গুগল জেমিনি সেটাই আরও একবার প্রমাণ করল।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button