শিল্পে সংকট হলে কাউকে খুঁজে পাওয়া যায় না: শ্রম উপদেষ্টা

ঢাকা, ২৮ এপ্রিল ২০২৫ – শিল্প খাতে সংকটের সময় কেউকে খুঁজে পাওয়া যায় না, মন্তব্য করেছেন শ্রম উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেন, “যখনই কোনো সংকট হয়, তখন আমরা কাউকে খুঁজে পাই না। সংকট যখন আসে, আমি আর শ্রম সচিব নিজেদের ভাসমান অবস্থায় দেখি, কোথায় যেতে হবে জানি না।” তিনি আরও বলেন, সংকটকালীন সময়ে সবাইকে একত্রে কাজ করতে হবে, নয়তো কার্যকর সমাধান পাওয়া সম্ভব নয়।
এই মন্তব্যটি তিনি আজ সোমবার রাজধানীর একটি হোটেলে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের আয়োজনে অনুষ্ঠিত ‘পেশাগত স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা সম্মেলন ২০২৫’-এ প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতা দেওয়ার সময় করেন।
শ্রম উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেনের বক্তব্য
শ্রম উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, “যতটুকু সংকট হয়েছে, তা সবই গত সাত মাসে তৈরি হয়নি। অনেক তৈরি পোশাক কারখানায় শ্রমিকদের দুই-তিন বছরের বেতন বকেয়া পড়ে রয়েছে।” তিনি ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর (বিএটি) বিষয়ে আরও বলেন, “২০১৯ সালে ছাঁটাই হওয়া কিছু কর্মী আমাকে এসেছিলেন, এবং আমি তাদেরকে বলেছি, ‘আপনারা আইন মেনে চলুন, না হয় এ দেশ থেকে চলে যান।’ এই শক্ত কথাগুলি বলার জন্য বাধ্য হয়েছিলাম, কারণ অন্য উপায় ছিল না।”
শ্রম সচিবের বক্তব্য
শ্রম সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, “কর্মক্ষেত্রের জন্য নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। শ্রম সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। কর্মস্থলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য কার্যকর কর্মপন্থা গ্রহণ করা হবে।”
দুর্ঘটনা ও পেশাগত স্বাস্থ্য নিয়ে আলোচন
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের যুগ্ম মহাপরিদর্শক মো. মতিউর রহমান আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) এর তথ্য তুলে ধরে বলেন, “বিশ্বে প্রতি ১৫ সেকেন্ডে অন্তত একজন কর্মী কর্মক্ষেত্রের দুর্ঘটনায় মারা যান, এবং কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনার কারণে বিশ্বব্যাপী মোট জিডিপির ৪ শতাংশ ক্ষতি হয়।” তিনি আরও বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক খাতে দুর্ঘটনা কমলেও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে দুর্ঘটনা বাড়ছে, যেগুলো সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত হচ্ছে না।
শ্রম কমিশন ও পেশাগত নিরাপত্তা
শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহম্মদ পেশাগত নিরাপত্তাকে মানুষের মৌলিক অধিকার হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, “পেশাগত নিরাপত্তা শ্রমিকের মানবাধিকার, যা দর-কষাকষির বিষয় নয়। যতদিন পর্যন্ত এটি ঠিক হবে না, ততদিন পর্যন্ত শিল্পও টেকসই হবে না।” তিনি আরও বলেন, “প্রতিটি কর্মক্ষেত্রেই নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা প্রয়োজন, বিশেষত অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে দুর্ঘটনা কমাতে।”
আইনের প্রয়োগের অভাব
এছাড়া, প্যানেল আলোচনায় বক্তারা পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা আইনের যথাযথ প্রয়োগে সচেতনতার অভাবের কথা তুলে ধরেন। বাংলাদেশ বিজনেস অ্যান্ড ডিজঅ্যাবিলিটি নেটওয়ার্কের ট্রাস্টি রূপালী চৌধুরী বলেন, “বর্তমানে দেশে পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিয়ে আইন রয়েছে, কিন্তু সেগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে না।” একই সঙ্গে শ্রমবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সদস্য তাসলিমা আখতার বলেন, “পেশাগত নিরাপত্তা কোনোভাবেই দয়াদাক্ষিণ্যের বিষয় নয়; এটি শ্রমিকের মানবাধিকার, এবং তার জন্য কঠোর আইন প্রয়োগ করা উচিত।”
নারী শ্রমিকদের সমস্যা
ইন্ডাস্ট্রি অল বাংলাদেশ কাউন্সিলের উইমেন সেক্রেটারি চায়না রহমান বলেন, “তৈরি পোশাক খাতে নারীরা নানা ধরনের হয়রানির শিকার হন। কাজের বাইরে, পথে বা বাসাবাড়িতে তাঁদের সমস্যায় পড়তে হয়। এই কারণে অনেক সময় নারীরা মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েন।”
কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তা এবং শ্রমিকদের স্বাস্থ্য নিশ্চিত করা জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। আইনের বাস্তবায়ন এবং প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে শ্রমিকদের জন্য নিরাপদ কর্ম পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে, যা শিল্পের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করবে।