অর্থনীতি

বিজিএমইএ নির্বাচনে প্রার্থী তালিকা প্রকাশ, ভোটগ্রহণ ২৮ মে

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের প্রধান সংগঠন বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ) পরিচালনা পর্ষদের ৩৫টি পরিচালক পদে নির্বাচনের জন্য প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। এবার ঢাকা ও চট্টগ্রাম—দুই অঞ্চল থেকে মোট ৯৩ জন প্রার্থী প্রাথমিক তালিকায় স্থান পেয়েছেন।

সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আগামী ২৮ মে একযোগে ঢাকা ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। তবে এখনো ভোটগ্রহণের নির্দিষ্ট কেন্দ্র নির্ধারণ করা হয়নি। নির্বাচনী নিরপেক্ষতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ভোটগ্রহণ নিজস্ব ভবনের বাইরে নিরপেক্ষ কোনো ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হবে।

নির্বাচনের প্যানেল ও নেতৃত্ব

এবারের নির্বাচনে প্রধান দুটি প্যানেল ‘সম্মিলিত পরিষদ’ এবং ‘ফোরাম’ একে অপরের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। ফোরাম প্যানেলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিজিএমইএর সাবেক সহ-সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু। অন্যদিকে, সম্মিলিত পরিষদ প্যানেলের নেতৃত্বে রয়েছেন মো. আবুল কালাম। উভয় প্যানেলই নির্বাচনী প্রচারণায় ইতোমধ্যে তৎপর হয়ে উঠেছে।

নির্বাচন প্রক্রিয়ার সার্বিক তত্ত্বাবধান ও পর্যবেক্ষণের জন্য দায়িত্ব পালন করছেন বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইকবাল। তার উপস্থিতি নির্বাচন প্রক্রিয়ার নিরপেক্ষতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

নির্বাচনী কার্যক্রম ও সময়সূচি

প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পর নির্বাচনী আচরণবিধি অনুযায়ী আপত্তি গ্রহণ এবং যাচাই-বাছাইয়ের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে। যাচাই-বাছাই শেষে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশিত হবে। নির্বাচনী তফসিল অনুযায়ী, বিজয়ী ৩৫ জন পরিচালক পরবর্তীতে ১১ জুন সভাপতি ও সাত জন সহ-সভাপতি নির্বাচিত করবেন।

বিজিএমইএ নির্বাচন সবসময়ই দেশের গার্মেন্টস শিল্পের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, বিজিএমইএ নেতৃত্ব শিল্পের নীতিমালা, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, শ্রমিক স্বার্থ রক্ষা এবং রপ্তানি বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। সুতরাং এবারের নির্বাচনও শিল্পের ভবিষ্যত দিকনির্দেশনা নির্ধারণে বড় ভূমিকা রাখবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

নির্বাচনে অংশগ্রহণকারীদের প্রেক্ষাপট

চলতি নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন, তাদের মধ্যে অধিকাংশই পোশাক শিল্পে অভিজ্ঞ এবং প্রতিষ্ঠিত উদ্যোক্তা। ঢাকা অঞ্চলের তুলনায় চট্টগ্রাম অঞ্চলে প্রার্থী সংখ্যা কিছুটা কম হলেও, উভয় অঞ্চল থেকেই শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস পাওয়া যাচ্ছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রার্থীদের মধ্যে যারা বিজিএমইএর আগের কার্যক্রমে সক্রিয় ছিলেন, তারা এবারে সংগঠনের আধুনিকায়ন, টেকসই উন্নয়ন ও শ্রমিক কল্যাণ নীতিতে গুরুত্ব দিচ্ছেন। পাশাপাশি, করোনোত্তর সময়ে পোশাক শিল্পের টেকসই পুনরুদ্ধার এবং আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান ধরে রাখার প্রতিশ্রুতিও সামনে এসেছে।

ভোটগ্রহণে নিরপেক্ষতা ও নিরাপত্তা

বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ভোটগ্রহণের দিন যাতে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা না ঘটে, সে জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতা নেয়া হবে। ভোটকেন্দ্রে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে এবং পর্যবেক্ষকরা সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া তদারকি করবেন।

এছাড়া, নির্বাচন পরিচালনা কমিটি জানিয়েছে, ভোটার তালিকা, ব্যালট পেপার, ভোট গণনা এবং ফলাফল প্রকাশসহ প্রতিটি ধাপই স্বচ্ছতার সাথে পরিচালিত হবে। সংগঠনের ভেতর এবং বাইরে থেকে নিরপেক্ষতার ব্যাপারে যাতে কোনো প্রশ্ন না ওঠে, সে জন্য কঠোর নীতিমালা অনুসরণ করা হবে।

শিল্পের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে নির্বাচন

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে পোশাক খাতের অবদান প্রায় ৮৪ শতাংশ রপ্তানি আয়। তাই বিজিএমইএ নেতৃত্বের পরিবর্তন বা অব্যাহত নেতৃত্ব ভবিষ্যতে শিল্পের উন্নয়ন, বিনিয়োগ আকর্ষণ এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

নতুন পরিচালনা পর্ষদের কাছে উদ্যোক্তারা যেমন নীতিনির্ধারণী সহায়তা আশা করছেন, তেমনি শ্রমিক সংগঠনগুলোও তাদের অধিকার সুরক্ষার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ প্রত্যাশা করছেন। বিশেষ করে, শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি, নিরাপদ কর্মপরিবেশ এবং সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতের দিকটি এবার নির্বাচনী ইশতেহারে গুরুত্ব পেয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বিজিএমইএর আগামী নেতৃত্ব যাদের হাত ধরে আসবে, তাদের সামনে থাকবে বৈশ্বিক বাজারের প্রতিযোগিতা, প্রযুক্তির দ্রুত পরিবর্তন, ক্রেতাদের চাহিদার পরিবর্তন এবং টেকসই উৎপাদনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার দায়িত্ব।

উপসংহার

বিজিএমইএ নির্বাচন শুধু একটি সংগঠনের অভ্যন্তরীণ নেতৃত্ব নির্বাচন নয়; এটি দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্প খাতের দিকনির্দেশনা নির্ধারণের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। তাই ২৮ মে’র এই ভোটগ্রহণ দেশের অর্থনীতির জন্যও এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হয়ে থাকবে। উদ্যোক্তা, শ্রমিক এবং সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষই আগ্রহভরে এ নির্বাচনের ফলাফলের দিকে তাকিয়ে আছে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button