বিশ্ব

শেখ হাসিনাকে ‘চুপ’ রাখতে পারবেন না মোদি

বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন এবং সেখান থেকে বিভিন্ন বক্তব্য ও বিবৃতি দিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে প্রভাব ফেলার চেষ্টা করছেন। এই প্রেক্ষাপটে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আলজাজিরার সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনার এই কার্যক্রম এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তার আলোচনার বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেছেন। এই সাক্ষাৎকারে তিনি শেখ হাসিনার বক্তব্যের প্রভাব, ভারতের অবস্থান এবং বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেছেন।

সাক্ষাৎকারের প্রেক্ষাপট

রোববার (২৭ এপ্রিল ২০২৫) আলজাজিরায় প্রকাশিত এই ভিডিও সাক্ষাৎকারে আলজাজিরার সাংবাদিক নিয়েভ বার্কার ড. ইউনূসের কাছে শেখ হাসিনার ভারতে অবস্থান এবং তার বক্তব্যের বিষয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন তুলেছেন। সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনার দাবি, তিনি এখনও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, এবং তার এই ধরনের বক্তব্য বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করছে কিনা, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

ড. ইউনূস সাক্ষাৎকারে জানান, তিনি ব্যাংককে অনুষ্ঠিত বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে একটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেছিলেন। এই বৈঠকে তিনি শেখ হাসিনার বক্তব্য নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে মোদির কাছে অনুরোধ জানিয়েছিলেন। তিনি বলেন, “আমি মোদিকে বলেছিলাম, যদি আপনি শেখ হাসিনাকে ভারতে রাখতে চান, তাহলে তিনি যেন বক্তব্য না দেন। কারণ তার বক্তব্য আমাদের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করে। তিনি বাংলাদেশের মানুষকে উত্তেজিত করেন, যা আমাদের জন্য ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।”

মোদির জবাব

ড. ইউনূসের অনুরোধের জবাবে নরেন্দ্র মোদি জানান, ভারতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সবার জন্য উন্মুক্ত এবং তিনি এটি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না। তিনি বলেন, “ভারত এমন একটি দেশ, যেখানে সামাজিকমাধ্যম সবার জন্য উন্মুক্ত। আমি এটি নিয়ন্ত্রণ করতে পারব না।” এই মন্তব্যের মাধ্যমে মোদি স্পষ্ট করেছেন যে শেখ হাসিনার বক্তব্য বা সামাজিকমাধ্যমে তার কার্যক্রমের উপর ভারত সরকারের নিয়ন্ত্রণ সীমিত।

শেখ হাসিনার বক্তব্যের প্রভাব

শেখ হাসিনার ভারত থেকে দেওয়া বক্তব্য বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতিতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলছে। তিনি দাবি করেছেন যে তিনি এখনও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, যা দেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হচ্ছে। ড. ইউনূস সাক্ষাৎকারে বলেন, “তার বক্তব্য আমাদের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করে। তিনি বাংলাদেশের মানুষকে উত্তেজিত করেন, যা আমাদের জন্য ভোগান্তির কারণ হয়।”

শেখ হাসিনার এই ধরনের বক্তব্য বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির আশঙ্কা তৈরি করেছে। বিশেষ করে, তার সমর্থকদের মধ্যে এই বক্তব্য উৎসাহ সৃষ্টি করতে পারে, যা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জন্য রাজনৈতিক চাপ বাড়াতে পারে। এছাড়াও, তার বক্তব্যে সাবেক সরকারের দুর্নীতি এবং অন্যান্য বিষয়ে অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে, যা বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে।

ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের প্রেক্ষাপট

শেখ হাসিনার ভারতে অবস্থান এবং তার বক্তব্যের বিষয়টি ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের ক্ষেত্রেও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনার জন্য ভারতের কাছে অনুরোধ জানিয়েছে, যাতে তাকে বিচারের মুখোমুখি করা যায়। তবে ভারত এখন পর্যন্ত এই বিষয়ে কোনো স্পষ্ট অবস্থান গ্রহণ করেনি।

ড. ইউনূস সাক্ষাৎকারে বলেন, “আমি মোদিকে বলেছি, ঠিক আছে, যদি আপনি শেখ হাসিনাকে রাখতে চান, তাহলে এ বিষয়ে আমি কিছু করতে পারব না। কিন্তু তার বক্তব্য আমাদের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করে।” এই মন্তব্য থেকে স্পষ্ট যে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শেখ হাসিনার বক্তব্যের বিষয়ে উদ্বিগ্ন এবং এটি ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি স্পর্শকাতর বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের চ্যালেঞ্জ

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বর্তমানে একটি জটিল রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। শেখ হাসিনার বক্তব্য এবং তার সমর্থকদের কার্যক্রম সরকারের জন্য একটি অতিরিক্ত চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হচ্ছে। এছাড়াও, সাবেক সরকারের দুর্নীতি এবং অন্যান্য অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত এবং বিচার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।

ড. ইউনূস সাক্ষাৎকারে বলেন, “আমরা চাই শান্তিপূর্ণভাবে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে। কিন্তু শেখ হাসিনার বক্তব্য আমাদের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করছে।” তিনি আরও জানান, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ করছে। তবে শেখ হাসিনার বক্তব্য এই প্রক্রিয়াকে জটিল করে তুলছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ভূমিকা

শেখ হাসিনার বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে, যা বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে। মোদির মন্তব্য অনুযায়ী, ভারতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সবার জন্য উন্মুক্ত, এবং এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। এই পরিস্থিতি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেখ হাসিনার বক্তব্য দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে, যা তার সমর্থকদের মধ্যে উৎসাহ সৃষ্টি করছে। একই সঙ্গে, এটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সমালোচকদের মধ্যে ক্ষোভেরও কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সরকারকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুল তথ্য এবং উসকানিমূলক বক্তব্য নিয়ন্ত্রণের জন্য নতুন কৌশল গ্রহণ করতে হতে পারে।

ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

শেখ হাসিনার ভারতে অবস্থান এবং তার বক্তব্যের বিষয়টি ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনার জন্য ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক আলোচনা অব্যাহত রেখেছে। তবে মোদির মন্তব্য থেকে স্পষ্ট যে ভারত এই বিষয়ে সতর্ক অবস্থান গ্রহণ করছে।

এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জন্য শেখ হাসিনার বক্তব্যের প্রভাব মোকাবিলা করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। সরকারকে দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button