বানিজ্য

গাড়ি আমদানিতে অতিরিক্ত শুল্ক প্রত্যাহার চায় বারভিডা

গাড়ি আমদানির ক্ষেত্রে অতিরিক্ত শুল্ক প্রত্যাহারের মাধ্যমে মধ্যবিত্তের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে গাড়ির মূল্য নিয়ে আসার জন্য রাজস্ববান্ধব শুল্ক ও বাণিজ্য নীতিমালার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিক্যালস ইম্পোর্টার্স অ্যান্ড ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বারভিডা)। সংগঠনটির প্রেসিডেন্ট আবদুল হক মনে করেন, শুল্ক হ্রাসের ফলে গাড়ির বাজার সম্প্রসারণের পাশাপাশি সরকারের রাজস্ব আয়ও উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাবে।

শনিবার (২৬ এপ্রিল) রাজধানীর ফার্জ হোটেলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি উত্থাপন করেন আবদুল হক। তিনি বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়ায় রিকন্ডিশন গাড়ির ক্ষেত্রে বৈষম্যমূলক ফি আরোপের বিষয়টিও তুলে ধরেন। তিনি জানান, রিকন্ডিশন গাড়ির রেজিস্ট্রেশন ফি বর্তমানে ১ থেকে ১.৫ লাখ টাকা, যা নতুন গাড়ির তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। এছাড়া, পরিবেশ দূষণ কমাতে জ্বালানি সাশ্রয়ী হাইব্রিড গাড়ি আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহারের দাবিও জানান তিনি।

শুল্ক কমানোর যৌক্তিকতা

বারভিডার পক্ষ থেকে বলা হয়, বর্তমানে রিকন্ডিশন গাড়ি আমদানিতে ১২৯% থেকে ৮২৬% পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করা হচ্ছে। এই উচ্চ শুল্কহারের কারণে গাড়ির মূল্য মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। আবদুল হক বলেন, “গাড়ি এখন আর বিলাসদ্রব্য নয়, বরং নিরাপদ পরিবহনের একটি অপরিহার্য মাধ্যম। শুল্ক কমানো হলে মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ গাড়ির মালিক হতে পারবেন, যা দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।”

তিনি আরও উল্লেখ করেন, বর্তমানে বাংলাদেশে বছরে ২৫ থেকে ৩০ হাজার গাড়ি রেজিস্ট্রেশন হয়। শুল্ক কমানোর ফলে এই সংখ্যা এক লাখে উন্নীত হতে পারে, যা গাড়ির বাজারকে আরও প্রতিযোগিতামূলক করে তুলবে। এর ফলে বিদেশি কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে গাড়ি উৎপাদন ও সংযোজন কারখানা স্থাপনে আগ্রহী হবে, যা দেশের শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থানে অবদান রাখবে।

বিআরটিএ’র রেজিস্ট্রেশন ফি নিয়ে অভিযোগ

সংবাদ সম্মেলনে আবদুল হক বিআরটিএ’র রেজিস্ট্রেশন ফি’র ক্ষেত্রে নতুন ও রিকন্ডিশন গাড়ির মধ্যে বৈষম্যের বিষয়টি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “১৫০০ সিসি সক্ষমতার একটি নতুন গাড়ির রেজিস্ট্রেশন, মালিকানা হস্তান্তর ও ভ্যাট মিলিয়ে খরচ হয় ৮০,৪০৮ টাকার কিছু বেশি। কিন্তু একই সক্ষমতার রিকন্ডিশন গাড়ির ক্ষেত্রে এই খরচ ১,০৭,০০০ টাকার বেশি।” তিনি আরও জানান, ৩৫০০ সিসি সক্ষমতার নতুন গাড়ির রেজিস্ট্রেশন খরচ ১,৫৯,৭৫৮ টাকা, যেখানে রিকন্ডিশন গাড়ির জন্য এই খরচ ২,১৩,৭১৬ টাকা।

এই বৈষম্যের কারণে রিকন্ডিশন গাড়ির ক্রেতারা অতিরিক্ত আর্থিক চাপের মুখে পড়ছেন। বারভিডার প্রেসিডেন্ট এই বৈষম্য দূর করার জন্য নতুন ও রিকন্ডিশন গাড়ির রেজিস্ট্রেশন ফি সমান করার দাবি জানান। তিনি বলেন, “একটি সুষ্ঠু ও ন্যায্য নীতিমালার মাধ্যমে সব ধরনের গাড়ির জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করা উচিত।”

হাইব্রিড গাড়ির প্রতি জোর

পরিবেশ দূষণ কমানোর লক্ষ্যে বারভিডা হাইব্রিড গাড়ি আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে। আবদুল হক বলেন, “হাইব্রিড গাড়ি জ্বালানি সাশ্রয়ী এবং পরিবেশবান্ধব। এ ধরনের গাড়ির আমদানি শুল্ক কমানো হলে বাজারে এর চাহিদা বাড়বে, যা পরিবেশের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।” তিনি আরও উল্লেখ করেন, বর্তমানে ব্যাটারিচালিত রিকশা ও অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ ছোট যানবাহনের কারণে সড়কে প্রতি বছর ৮,৫০০-এর বেশি মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন। হাইব্রিড গাড়ির ব্যবহার বৃদ্ধি এই দুর্ঘটনা কমাতে সহায়ক হবে।

অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব

বারভিডার তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতি বছর যাত্রীবাহী গাড়ির চাহিদা প্রায় ১৫,০০০। এই চাহিদার ৮৫% পূরণ করে রিকন্ডিশন গাড়ি। এই খাতে ২০,০০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ রয়েছে এবং ৩০,০০০ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। তবে, অতিরিক্ত শুল্কের কারণে গাড়ি আমদানির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ২৩,০৭৫টি রিকন্ডিশন গাড়ি আমদানি হলেও, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে তা কমে ১২,৫০২টিতে নেমে আসে। ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে মাত্র ৩,৪৩৮টি গাড়ি আমদানি হয়েছে।

এই পরিস্থিতির ফলে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে এবং ভোক্তারা পরিবেশবান্ধব, উচ্চমানের জাপানি রিকন্ডিশন গাড়ি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। বারভিডার সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম বলেন, “অতিরিক্ত শুল্কের কারণে রিকন্ডিশন গাড়ির বাজার সংকুচিত হচ্ছে। এটি শুধু ব্যবসায়ীদের জন্যই নয়, সাধারণ ক্রেতাদের জন্যও ক্ষতিকর।”

সরকারের নীতিমালা ও বারভিডার প্রস্তাব

বারভিডা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে রিকন্ডিশন গাড়ির শুল্ক কাঠামো পুনর্বিন্যাসের প্রস্তাব দিয়েছে। তারা অবচয় হার পুনঃনির্ধারণ, সিসি স্ল্যাব ও সম্পূরক শুল্কের হার পুনর্বিন্যাস, এবং রিকন্ডিশন গাড়ির সংজ্ঞা নির্ধারণের মতো বিষয়গুলো বিবেচনার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। এছাড়া, পাবলিক ট্রান্সপোর্ট, যেমন মাইক্রোবাস ও বাসের আমদানি শুল্ক কমানোর প্রস্তাবও রয়েছে।

এনবিআরের একজন কর্মকর্তা জানান, বারভিডার প্রস্তাবগুলো রাজস্ব সহায়ক হতে পারে এবং এগুলো নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে বিবেচনা করা হবে। তবে, সরকারের পক্ষ থেকে এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button