বিশ্ব

বিএসএফের এক জওয়ানকে আটক করেছে পাকিস্তান রেঞ্জার্স

ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে এক বিএসএফ (ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী) জওয়ানকে পাকিস্তান রেঞ্জার্সের হাতে আটকের ঘটনায়। সীমান্ত অতিক্রমের অভিযোগে আটক এই জওয়ানকে নিয়ে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে।

বৃহস্পতিবার সংশ্লিষ্ট ভারতীয় কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন, সীমান্ত অতিক্রম করে পাকিস্তানে প্রবেশের অভিযোগে ১৮২তম ব্যাটালিয়নের কনস্টেবল পি কে সিংকে (PK Singh) আটক করেছে পাকিস্তান রেঞ্জার্স। তিনি পাঞ্জাবের ফিরোজপুর সীমান্তে দায়িত্বরত ছিলেন। পাকিস্তানি বাহিনী যখন তাঁকে আটক করে, তখন তিনি বিএসএফের পোশাকে ছিলেন এবং তাঁর কাছে রাইফেল ছিল।

ঘটনার প্রেক্ষাপট

বুধবার সীমান্তে টহলরত অবস্থায় পি কে সিং কিছু কৃষকের সঙ্গে কথাবার্তা বলছিলেন। প্রচণ্ড রোদের মধ্যে ছায়ায় বসে বিশ্রামের জন্য তিনি সামনের দিকে এগিয়ে যান। এ সময় তিনি অনিচ্ছাকৃতভাবে নিয়ন্ত্রণ রেখা অতিক্রম করে ফেলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। ঠিক তখনই পাকিস্তান রেঞ্জার্স সদস্যরা তাঁকে আটক করে নিজেদের হেফাজতে নেয়।

ভারতীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ঘটনাটি অনিচ্ছাকৃত এবং এর পেছনে কোনো কৌশলগত উদ্দেশ্য নেই। এই বিষয়ে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে একাধিকবার পতাকা বৈঠক হয়েছে। কর্মকর্তাদের আশা, অতীতের নজির অনুসারে পি কে সিংকে শিগগিরই ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

এই ধরনের ঘটনা আগে ঘটেছে

বিএসএফ ও পাকিস্তান রেঞ্জার্সের মধ্যে পূর্বেও অনুরূপ ঘটনা ঘটেছে। সীমান্ত এলাকার জটিলতা এবং মানবিক ভুলের কারণে অনেক সময় দুই দেশের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা বিপরীত সীমান্তে প্রবেশ করে থাকেন।

একজন উচ্চপদস্থ বিএসএফ কর্মকর্তা বলেন, “এই ধরনের অনিচ্ছাকৃত অনুপ্রবেশ নতুন কিছু নয়। অতীতেও আমাদের সদস্যদের সীমান্ত অতিক্রমের পর পাকিস্তান রেঞ্জার্স তাঁদের হেফাজতে নিয়েছে এবং আলোচনা সাপেক্ষে তাঁদের মুক্তি দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনাও সেই রকমই একটি মানবিক ভুলের ফলাফল বলে আমরা মনে করি।”

তবে বর্তমানে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের প্রেক্ষাপট এমন একটি সময় অতিক্রম করছে, যখন সীমান্তে একটি ছোট ঘটনাও বড় উত্তেজনার কারণ হয়ে উঠতে পারে।

কাশ্মীর হামলার প্রভাব

এই ঘটনা এমন এক সময়ে ঘটেছে, যখন ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে ভয়াবহ বন্দুকধারীর হামলায় ২৬ জন নিহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে অধিকাংশই ছিলেন ভারতের অন্যান্য রাজ্য থেকে আসা পর্যটক। এই হামলার জন্য ভারত পাকিস্তানকে দায়ী করছে, যদিও পাকিস্তান সরকার তা প্রত্যাখ্যান করেছে।

হামলার পরপরই ভারত সরকার ৬৫ বছরের পুরোনো সিন্ধু পানি চুক্তি একতরফাভাবে স্থগিত ঘোষণা করে। চুক্তিটি ১৯৬০ সালে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয় এবং সিন্ধু নদ ও তার উপনদীগুলোর পানি বণ্টন সংক্রান্ত ছিল।

পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তান বৃহস্পতিবার জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির (NSC) এক বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয় যে, ভারতের সব উড়োজাহাজের জন্য পাকিস্তানের আকাশসীমা বন্ধ থাকবে। একইসঙ্গে পাকিস্তান সরকার ভারতের সিদ্ধান্তকে যুদ্ধের ঘোষণা বলে উল্লেখ করে এবং হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে যে, চুক্তি লঙ্ঘনের অর্থই হবে সংঘাতের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছানো।

কূটনৈতিক যোগাযোগ অব্যাহত

বিএসএফ জওয়ান আটকের ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী ও কূটনৈতিক মহলে নিরবিচার যোগাযোগ চলছে। সীমান্তে পতাকা বৈঠকের পাশাপাশি দিল্লি ও ইসলামাবাদে কূটনৈতিক পর্যায়ের আলোচনাও শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে। ভারত আশা করছে, এই ঘটনা নিয়ে যাতে কোনো রকম উত্তেজনা না ছড়ায় এবং পাকিস্তান সরকার যেন যথাসময়ে বিএসএফ সদস্যকে ভারতের হাতে তুলে দেয়।

একজন ভারতীয় কূটনীতিক জানান, “আমরা আশা করি পাকিস্তান পূর্বের মতোই এই ধরনের অনিচ্ছাকৃত ঘটনার মানবিক দিক বিবেচনা করে জওয়ানটিকে ফেরত দেবে।”

সীমান্তে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে

এই ঘটনার পর ভারতের বিএসএফ সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলোতে সতর্কতা জারি করেছে। বিশেষ করে পাঞ্জাব, জম্মু ও রাজস্থান সেক্টরে টহল বাড়ানো হয়েছে। একইসঙ্গে বাহিনীর সদস্যদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যেন তারা আরও সতর্ক থাকে এবং অনিচ্ছাকৃত অনুপ্রবেশ এড়াতে নির্ধারিত সীমার মধ্যে চলাচল করে।

বিএসএফ সূত্র জানিয়েছে, “আমাদের সদস্যদের নিয়মিত ব্রিফ করা হয় যাতে তারা পরিস্থিতি বুঝে চলাচল করেন। কিন্তু সীমান্তের ভূপ্রকৃতি এবং আবহাওয়ার কারণে মাঝে মাঝে ভুল হয়ে যায়। এ ধরনের ভুল যাতে না হয়, সে জন্য ভবিষ্যতে আরও কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হবে।”

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button