অর্থনীতি

ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট বন্ধেও রপ্তানিতে কোনো প্রভাব পড়বে না

ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিলের সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের রপ্তানি কার্যক্রমে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না বলে আশ্বস্ত করেছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন নিজস্ব সক্ষমতার সর্বোচ্চ ব্যবহার করে রপ্তানি খরচ কমাতে সক্ষম, এবং এতে ব্যবসায়ীদের ব্যয় কমবে ও প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকবে।

রপ্তানিতে বহুমুখীকরণের ওপর জোর

বৃহস্পতিবার রাজধানীর বসুন্ধরার আন্তর্জাতিক কনভেনশন সিটি (আইসিসিবি)-তে ‘মিট বাংলাদেশ এক্সপোজিশন’ শীর্ষক দুই দিনব্যাপী প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা। তিনি বলেন,
“রপ্তানির ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে বহুমুখীকরণের ওপর। শুধু তৈরি পোশাকশিল্পের ওপর নির্ভর করে চলা যাবে না। নতুন বাজার খুঁজতে হবে, উদ্ভাবন বাড়াতে হবে।”

বিশ্বব্যাংকের পরামর্শ ও এলডিসি উত্তরণ প্রস্তুতি

অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত দেশীয় প্রধান সুহাইল কাসিম বলেন,
“বাংলাদেশ এলডিসি থেকে উত্তরণ করলে বিদেশি সহায়তা কমে আসবে। তাই এখন থেকেই ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।”

তিনি আরও বলেন, প্রযুক্তির উন্নয়ন, রপ্তানি বাজার বৈচিত্র্য এবং উদ্ভাবনমূলক উৎপাদনে মনোযোগ না দিলে উত্তরণ-পরবর্তী সময় মোকাবিলা করা কঠিন হবে।

সরকারি উদ্যোগ: ‘ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো’ চালু

বাণিজ্য উপদেষ্টা জানান, ব্যবসা সহজীকরণে সরকার ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো (NSW) চালুর মতো উদ্যোগ নিয়েছে, যা একাধিক দপ্তরের অনুমোদন এক জায়গা থেকে নেওয়ার সুযোগ দেবে। পাশাপাশি, ব্যবসায়ীদের যেকোনো সমস্যায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাওয়া হবে বলে আশ্বস্ত করেন তিনি।

ট্রান্সশিপমেন্ট ইস্যুতে প্রেক্ষাপট

উল্লেখ্য, চলতি এপ্রিল মাসে ভারত বাংলাদেশের জন্য তাদের নির্দিষ্ট কিছু ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করেছে। এই সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে রপ্তানি ও আমদানি খাতে শঙ্কা তৈরি হয়। তবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ বিকল্প পথ ও পদ্ধতি ব্যবহার করেই রপ্তানি কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে পারবে।

প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণকারী দেশ ও প্রতিষ্ঠান

এই আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে সিঙ্গাপুর, লিবিয়া, কলম্বিয়া, আলজেরিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ভারত, ভুটান, মালদ্বীপ ও মালয়েশিয়াসহ নয়টির বেশি দেশের ২৫টি আন্তর্জাতিক সোর্সিং এজেন্ট ও ক্রেতা অংশ নিয়েছে। প্রদর্শনীতে চামড়া, চামড়াজাত পণ্য, এমপিপিই, ফুটওয়্যার, প্লাস্টিক ও হালকা প্রকৌশল শিল্পের পণ্য প্রদর্শন করছে বাংলাদেশের ১২০টির বেশি প্রতিষ্ঠান

প্লাস্টিক ও এসএমই খাতের সম্ভাবনা

বাংলাদেশ প্লাস্টিক দ্রব্য প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শামীম আহমেদ বলেন,
“দেশের জিডিপিতে ৩০ শতাংশ অবদান রাখছে এসএমই খাত। এর মধ্যে প্লাস্টিক শিল্পের বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ২০ শতাংশ—এখানে অপার সম্ভাবনা রয়েছে।”

ট্রান্সশিপমেন্ট ছাড়াও এগোচ্ছে বাংলাদেশ

ভারতের সিদ্ধান্ত আপাতদৃষ্টিতে চাপ সৃষ্টি করলেও বাংলাদেশের জন্য এটি আত্মনির্ভরতা ও বৈচিত্র্যময় রপ্তানির দিকে যাওয়ার সুযোগ তৈরি করেছে। সরকার এবং ব্যবসায়ীরা এখন বিকল্প ব্যবস্থার মাধ্যমে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার কৌশল নিচ্ছে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button